আসাদুল-হাবিবুরের শিকলবন্দি জীবন

0
49

জেলা প্রতিনিধি | কুড়িগ্রাম |

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধামশ্রেণি ও তবকপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান (১৪) ও আসাদুল ইসলাম (৩৬) মিয়া। তবে অন্যদের মতো সুস্থ নয় তারা। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বছরের পর বছর শিকলবন্দি জীবন কাটছে তাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উলিপুর উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের সাদুল্যা সরকারপাড়া গ্রামের দেলাবর হোসেনের ছেলে আসাদুল ইসলাম। ছোটবেলা থেকে সুস্থ ছিলেন তিনি। চার ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় আসাদুল। বাবার অভাবের সংসারে হাল ধরতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে ঢাকায় পাড়ি জমান। গার্মেন্টসকর্মী হিসেবে কাজ করেন দীর্ঘদিন। পরে পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে করেন।

বিয়ের এক বছরের মাথায় মারপিট ও অত্যাচার করার অভিযোগ তুলে একতরফা তালাক দিয়ে চলে যান স্ত্রী। সেই শোকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন আসাদুল। পরে পরিবার লোকজন একাধিক বিয়ে দিলেও সংসার টেকেনি। একপর্যায়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন আসাদুল।

আসাদুলের মা বেঁচে নেই। আট বছর আগে মারা গেছেন। বর্তমানে বৃদ্ধ বাবাই দেখাশোনা করছেন আসাদুলকে।

আসাদুলের বাবা দেলাবর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ছেলেটা আগে ভালো ছিল। বউ ডিভোর্স দিয়ে চলে যাওয়া সে সইতে পারেনি। সেই থেকে পাগলের মতো আচরণ শুরু করে। কেউ শাসন করলে তাকে মারতে যেতো। আমাকেও একদিন মারতে এসেছিল। উপায় না পেয়ে দুই পায়ে শিকল পরিয়ে রাখি।’

তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। চিকিৎসা করানোর মতো সম্বল নেই। সুষ্ঠু চিকিৎসা করাতে পারলে ছেলেটা হয়তো স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতো।

অন্যদিকে হাবিবুর রহমান একই উপজেলার ধামশ্রেণি ইউনিয়নের পোদ্দার পাড়া গ্রামের দিনমজুর আবুদ্দির ছেলে। সেও শিকলবন্দি প্রায় আট বছর। জন্মের পর থেকে সে মানসিক প্রতিবন্ধী।

জন্মের পর হাবিবুরের মা ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ছেলেকে দেখাশোনা করার মতো লোক না থাকায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন আবুদ্দি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! তার ঘরে আরও একটি প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হয়। সংসারে অভাব-অনটনের কারণে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে না পারায় সরকার ও বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করছেন হাবিবুর রহমানের বাবা।

হাবিবুর রহমানের বাবা আবদ্দি বলেন, ‘আমার টাকা-পয়সা নেই যে ওকে ভালো চিকিৎসা করাবো। আল্লাহ যতদিন এভাবে রাখবে ততদিন এভাবে শিকল পরিয়ে রাখবো।’

হাবিবুরের প্রতিবেশী নায়েব আলী বলেন, ‘হাবিবুরের বাবা দিনমজুর। ঠিকমতো দুবেলা ভাত খেতে পারে না, ছেলের চিকিৎসা করাবে কীভাবে? আমার বিশ্বাস হাবিবুরকে ভালো চিকিৎসা করাতে পারলে সে ভালো হয়ে উঠতো।’

এ বিষয়ে উলিপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, হাবিবুর ও আসাদুল ইসলাম দুজনই প্রতিবন্ধী ভাতার আওতাভুক্ত। তবে তাদের চিকিৎসার টাকার বিষয়ে সহযোগিতা করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন কর্মকর্তা ডা. মো. মঞ্জুর-এ-মুর্শেদ বলেন, এসব রোগীদের শিকলে বেঁধে রাখা কোনো সমাধান নয়। তাদের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। রোগী কোন পর্যায়ে আছে সেটি পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসা করালে অনেক সময় সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই ব্যক্তির বিষয়ে আমার জানা ছিল না। তাদের কাছে স্থানীয় প্রতিনিধি ও সমাজসেবা অফিসারকে পাঠিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।