
পর্যটকশুন্য ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর/
মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, সিলেট
প্রকাশিত: ১০:৪০ রাত জুলাই ১৪, ২০২২
পদ্মা সেতুর প্রভাব পড়েছে সিলেটের পর্যটন শিল্পে। সেতুর কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এসেছে। ফলে এবারের ঈদে ভ্রমণপিপাসু অনেকেই ছুটেছেন এই অঞ্চলে। যার কারণে এমন ভরা মৌসুমেও পর্যটনশূন্য সিলেট। এ অবস্থায় মাথায় হাত পর্যটন খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের। পাশাপাশি স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যাও এই অঞ্চলে পর্যটক কম যাওয়ার বড় কারণ বলে মনে করছেন অনেকে।
ভারতের মেঘালয় পাহাড় ঘেঁষা প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি প্রকৃতিকন্যা খ্যাত জাফলং, পান্তুমাই’র ঝর্ণা, বিছনাকান্দির স্বচ্ছ-সফেদ পানি আর সোয়াম ফরেস্ট খ্যাত রাতারগুল, ভোলাগঞ্জের জিরো লাইনে সাদা পাথরের অপরুপ দৃশ্য দেখার প্রতি মূলত পর্যটকদের মূল আকর্ষণ।
সিলেট হোটেল এন্ড গেস্ট হাউস ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি এটিএম শোয়েব জানান, সিলেটে এবার পর্যটন খাতে সবচেয়ে বাজে অবস্থা। তাদের ব্যবসার মূল মৌসুম হচ্ছে ঈদ। কিন্তু, এ ঈদে তার নিজের মালিকানাধীন দুটি হোটেলের শতাধিক রুমের মধ্যে বুকিং ছিল মাত্র ৮-১০টি রুম। সিলেট নগরীর বাকি ২শ’ হোটেলেরও একই অবস্থা।
তার মতে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এবার পর্যটকরা অনেকটা কুয়াকাটা অভিমুখী। সাম্প্রতিক বন্যার ভয়াবহতার কারণে অনেক পর্যটক এবার সিলেট আসতে চাননি। এ দুই কারণে মূলত এবার সিলেটে পর্যটকের সংখ্যা কম।
সিলেট চেম্বারের সাবেক সভাপতি এটিএম শোয়েব বলেন, “পর্যটনের সঙ্গে কেবল হোটেল নয়, আরও অনেকগুলো বিষয় জড়িত। এর সাথে পরিবহন, রেস্টুরেন্ট, শপিং মল ও নৌকার বিষয়টিও জড়িত। অর্থাৎ, পর্যটকরা যেদিকে যাবেন, সেদিকে অর্থের বিষয়টি সম্পৃক্ত।”
পর্যটক না আসায় সব খাতেই এর প্রভাব পড়েছে বলে জানান তিনি।
সিলেট নগরীর ফরচুন গার্ডেন-এর এমডি সুমাইয়াত নুরী জুয়েল জানান, ঈদের সময় তার হোটেলে কোন গেস্টই আসেননি। হোটেলের রুম বুকিং ছিল একেবারে নীল। ঈদ মৌসুমে এ রকম অবস্থা আগে কখনও হয়নি বলে জানান এ ব্যবসায়ী।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক পরিচালক ও রেইনবো গেস্ট হাউসের এমডি খন্দকার শিপার আহমদ বলেন, “করোনার পর এবার সবচাইতে বড় ধাক্কা খেল সিলেটের পর্যটন খাত। করোনার পরও কিছু পর্যটক সিলেটে বেড়াতে এসেছিলেন। কিন্তু, এবারের পরিস্থিতি অনেকটা ভাবিয়ে তুলেছে।”
কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর সংলগ্ন কালিবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ফখর উদ্দিন জানান, ঈদ-উল-আজহার দ্বিতীয় দিনেও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাদা পাথর এলাকায় আশানুরূপ পর্যটক আসেননি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি সাদাপাথরে পর্যটকদের বরণে নানা প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছিল। ব্যবসায়ীদের আশা ছিল, বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমনে মুখর হবে পর্যটন কেন্দ্রটি। কিন্তু তাদের সে আশা গুঁড়েবালি। পর্যটক না আসায় হতাশ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
প্রসঙ্গত, গত ঈদ-উল-ফিতরে সিলেটে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটকের ঢল নেমেছিল। ঈদের ছুটিতে পর্যটনখাতে ব্যবসা হয়েছিল শত কোটি টাকার।