কালনা সেতুর নির্মাণকাজ শেষের পথে

স্বাধীন নিউজ ডেস্ক : দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী ও নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদীর ওপর কালনা পয়েন্টে নির্মাণাধীন কালনা সেতু সেপ্টেম্বরে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হচ্ছে। দৃষ্টিনন্দন এ সেতুটি দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু। সেতুর নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন করতে শেষ মুহূর্তে নির্মাণকাজে ব্যাপক গতি পেয়েছে। বর্তমানে সেতুর দুই পাড়ের সংযোগ সড়কে কার্পেটিং ও মূল সেতুর টুকিটাকি কাজ চলছে।

সেতুর পূর্ব পাড়ে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা ও পশ্চিম পাড়ে নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলা। এ সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পর্যটন, শিল্প ও বাণিজ্যে প্রসার ঘটাবে বলে মনে করছেন এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা ত্বরান্বিত হবে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ ও আমদানি-রফতানি বাণিজ্য প্রসারিত হবে। পণ্য পরিবহনে সময় ও খরচ বাঁচবে।

সড়ক ও পরিবহন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কালনা সেতু চালু হলে নড়াইল, যশোর, বেনাপোল স্থলবন্দর ও খুলনা থেকে ঢাকা যাতায়াতকারী পরিবহন মাগুরা-ফরিদপুর হয়ে যাতায়াতের পরিবর্তে কালনা হয়ে যাতায়াত করতে পারবে। এতে বেনাপোল-ঢাকা ও যশোর-ঢাকার দূরত্ব ১১৩ কিলোমিটার ও খুলনা-ঢাকার দূরত্ব ১২১ কিলোমিটার এবং নড়াইল-ঢাকার দূরত্ব ১৮১ কিলোমিটার কমবে। একইভাবে ঢাকার সঙ্গে শিল্প ও বাণিজ্যিক শহর যশোরের নওয়াপাড়া, বাগেরহাটের মোংলা বন্দর, সাতক্ষীরাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্য জেলার দূরত্ব কমে যাবে।

বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ক্রসবর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে এ সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। জাপানের টেককেন করপোরেশন ও ওয়াইবিসি এবং বাংলাদেশের আব্দুল মোনেম লিমিটেড যৌথভাবে এ সেতু নির্মাণের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।

সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও সওজ নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান জানান, মূল সেতুর দুটি স্প্যান বসানোসহ সার্বিক কাজ হয়েছে ৯৫ শতাংশ। সংযোগ সড়কের কাজও শেষ হয়েছে। সম্পন্ন হয়েছে। সওজের ঊর্ধ্বর্তন কর্মকর্তারা সম্প্রতি সেতুর কাজ পরিদর্শন করেছেন। তাদের নির্দেশনা মোতাবেক আগামী সেপ্টেম্বরে সেতুতে যানবাহন চলাচলের জন্য কাজ চলছে।

সেতুর কাজে দীর্ঘদিন ধরে উপ-প্রকল্প ব্যবস্থাপক ছিলেন সওজের প্রকৌশলী সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন। তিনি জানান, দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু এটি। পদ্মা সেতু চার লেনের। দেশের সবচেয়ে বড় নেলসন, লোসআর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) যা হবে দৃষ্টিনন্দন পর্যটন স্পট। পদ্মা সেতুর পাইলক্যাপ পানির ওপর পর্যন্ত কিন্তু এ সেতুর পাইলক্যাপ পানির নিচে মাটির ভেতরে। তাই নৌযান চলাচলে সমস্যা হবে না, পলি জমবে না এবং নদীর স্রোত কম বাধাগ্রস্ত হবে।

সরেজমিনে ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নদীর সংযোগ সড়কের পূর্ব পাড়ে কার্পেটিং শেষ হয়েছে। পশ্চিম পাড়ে কার্পেটিংয়ের কাজ চলছে। সংযোগ সড়কের ১৩ কালভার্টের মধ্যে ১২টির কাজ শেষ হয়েছে। অন্যটির ফিনিশিং কাজ চলছে। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী অংশে সেতুর ডিজিটাল টোলপ্লাজা নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের পথে। সেতুর মাঝখানে বসানো হয়েছে ১৫০ মিটার দীর্ঘ স্টিলের স্প্যান। নেলসন লোসআর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা সেতু) স্প্যানটি তৈরি হয়েছে ভিয়েতনামে। তৈরি করেছে জাপানের নিপ্পন কোম্পানি। এটি ছিল সেতুর সবচেয়ে বড় কাজ যা বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। ওই স্প্যানটির উভয় পাশে অন্য স্প্যানগুলো পিসি গার্ডারের (কংক্রিট)। গোপালগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদ হোসেন বলেন, ছয় লেনের এ সেতু হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। চারটি মূল লেনে দ্রুতগতির যানবাহন ও দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে। সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক ১০ মিটার। বর্ষায় পানি থেকে সেতুর উচ্চতা ৭ দশমিক ৬২ মিটার এবং সেতুর নিচে মাঝ বরাবর নৌযান চলাচলে ১৫০ মিটার ফাঁকা থাকছে। উভয় পাশে সংযোগ সড়ক হবে ৪ দশমিক ২৭৩ কিলোমিটার, যার প্রস্থ ৩০ দশমিক ৫০ মিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ৯৫৯ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা।

২০১৮ সালের ২৪ জুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সেতু কর্তৃপক্ষের কার্যাদেশ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ওই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর কার্যাদেশ দেয়া হয়। তখন থেকে ৩৬ মাস তথা ২০২১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছিল মেয়াদকাল।

এ বিষয়ে সেতু প্রকল্প ব্যবস্থাপক আশরাফুজ্জামান বলেন, প্রথমে সেতুর নকশা ছিল চার লেনের। পরে সেটা করা হয়েছে ছয় লেনের। সংযোগ সড়কের জমি অধিগ্রহণে বিলম্ব হয়েছে, করোনার জন্য প্রায় ছয় মাস কাজ বন্ধ ছিল। এসব কারণে নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ হয়নি। ক্রসবর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) প্রজেক্টের আওতায় দেশে ১৭টি সেতুর কাজ চলছে। সব শেষ করতে মূল প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।

এই ওয়েবসাইটের সকল লেখার দায়ভার লেখকের নিজের, স্বাধীন নিউজ কতৃপক্ষ প্রকাশিত লেখার দায়ভার বহন করে না।
এই বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -

সর্বাধিক পঠিত

- Advertisment -