কোরআন সংরক্ষক হজরত জায়েদ (রা.)

0
198

ইসলাম ডেস্ক |

হজরত জায়েদ ইবনে সাবিত। কোরআন সংরক্ষক। তিনি ছিলেন কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ ধারক, বাহক ও প্রচারক। মদিনার বনু নাজ্জার গোত্রের এ আনসারী যুবক সাহাবি মাত্র ২২ বছর বয়স থেকে কোরআন সংরক্ষণের এ কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। কোরআন সংরক্ষণে কেমন ছিল তার অবদান?

ঐশী আল-কোরআন। যা দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে বিশ্বমানবতার কল্যাণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর নাজিল হয়েছিল। এ কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ ধারক, বাহক ও প্রচারক ছিলেন সাহাবায়ে কেরাম। কোরআনের জন্য যারা সবচেয়ে বেশি নিবেদিত ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন হজরত জায়েদ ইবনে সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু। কোরআন সংরক্ষণের যার ভূমিকা ছিল অনন্য।

হজরত জায়েদ ইবনে সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহুর ভূমিকা ও সাহাবায়ে কেরামের ঐকান্তি প্রচেষ্টা ও মহান আল্লাহর রহমতেই আজো কোরআন অবিকৃত অবস্থায় দুনিয়ায় বিদ্যমান। যা মুসলিম উম্মাহর কাছে এক অনন্য আমানত। কোরআন সংরক্ষণের অগ্রসেনানী হজরত জায়েদ ইবনে সাবিতের অবদান ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো-

মুসলিম উম্মাহর কাছে যে অবিকৃত ও অখণ্ড কোরআন রয়েছে, এ কোরআন প্রাপ্তিতে হজরত জায়েদ ইবনে সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহুর অবদান সবচেয়ে বেশি। মাত্র ২২ বছর বয়সের জায়েদ ইবনে সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু পবিত্র কোরআনের আয়াত, সুরাগুলো সংরক্ষণ ও সংগ্রহে নিরলস কাজ করেছিলেন।

জন্মা ও ইসলাম গ্রহণ

তিনি মদিনার বনু নাজ্জার গোত্রে জন্ম গ্রহণ করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের মদিনায় হিজরতের পর ১১ বছর বয়সে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে হজরত জায়েদ ইবনে সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহুও ইসলাম গ্রহণ করেন।

জ্ঞান চর্চার আগ্রহ ও অহি লেখক

ছোটবেলা থেকেই হজরত জায়েদ ইবনে সাবিত জ্ঞানচর্চায় বেশ মনোযোগি ছিলেন। বিশেষ করে ইসলাম গ্রহণের পর কোরআন মুখস্ত করাসহ ইলম অর্জনে তার আগ্রহ ছিল অনেক বেশি। কোরআন মুখস্তের প্রচেষ্টা ও ইলম অর্জনের আগ্রহ দেখে বিশ্বনবি তাঁকে কাতেবে অহি তথা অহি লেখকের মর্যাদা দেন। সে সময় থেকে আজও তিনি বিশ্বব্যাপী কাতেবে অহি হিসেবে পরিচিত।

ইহুদি ধর্মগ্রন্থ ও সুরিয়ানি ভাষা শেখা

বিশ্বনবি তার ক্ষুরধার মেধাশক্তি দেখেই তাকে ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ শেখার নির্দেশ দেন। মাত্র ১৫ দিনে তিনি ইহুদিদের পুরো ধর্মগ্রন্থ আত্মস্থ করে নেন। এরপর তিনি হজরত জায়েদ ইবনে সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সুরিয়ানি ভাষা শেখার নির্দেশ দেন। ইলম শেখার এ আগ্রহ, প্রখর মেধাশক্তি ও জ্ঞানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে শায়খুল কুররা এবং মুফতিউল মাদিনা বলা হতো।

কোরআন মুখস্ত

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে তিনি পুরো কোরআন মুখস্ত করেন এবং নবিজীর ইন্তেকালের বছর তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুইবার পুরো কোরআন তেলাওয়াত করে শোনান। তখনও কোরআন লিপিবদ্ধ আকারে ছিল না। তখন সাহাবায়ে কেরামের সিনায় তথা হাফেজে কোরআনের বুকে পবিত্র কোরআন সংরক্ষিত ছিল। কোরআনের পাণ্ডুলিপিগুলো যা কিছু লেখা ছিল, তাও বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল।

কোরআন সংরক্ষণের দায়িত্বভার

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের পর খোলাফায়ে রাশেদার যুগে বিভিন্ন যুদ্ধে হাফেজ সাহাবিদের শাহাদাতবরণ বিজ্ঞ সাহাবিদের চিন্তিত করে তোলে। অবশেষে হজরত ওমর ও হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং কোরআন সংরক্ষণের জন্য জোর তাগিদ দেন। হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর পরামর্শে হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু কোরআন সংরক্ষণের গুরুদায়িত্ব হজরত জায়েদ ইবনে সাবিতের ওপর অর্পন করেন।

হজরত আবু বকরের নির্দেশ

খলিফা হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু হজরত জায়েদ ইবনে সাবিতকে লক্ষ্য করেন বলেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি একজন বুদ্ধিমান যুবক। তোমার ব্যাপারে আমরা কোনো মন্দ ধারণা পোষণ করি না। হজরত জায়েদ ইবনে সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের এ আস্থা অটুট রেখে পবিত্র কোরআন সংরক্ষণের দায়িত্ব যথাযথ পালন করেন।

কোরআন সংরক্ষণের গুরুদায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে হজরত জায়িদ ইবনে সাবিত বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! যদি আমাকে কোনো পাহাড় স্থানান্তর করার দায়িত্ব দেওয়া হতো, তবে তা আমার কাছে কোরআন সংরক্ষণের চেয়ে অনেক সহজ হতো।

হজরত ওসমানের যুগে

পবিত্র কোরআন সংকলনের জন্য হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলা হয় জামেউল কোরআন। তিনি কোরআন বিশেষজ্ঞ ১২ সাহাবার সমন্বয়ে এক কমিটি গঠন করে পবিত্র কোরআন সংকলন চূড়ান্ত করেন। হজরত জায়েদ ইবনে সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু সে বিশেষজ্ঞ কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন।

ইন্তেকাল

কোরআন সংরক্ষণের অনন্য ভূমিকা পালনকারী হজরত জায়েদ ইবনে সাবিত ৪৫ হিজরিতে পবিত্র নগরী মদিনায় ইন্তেকাল করেন। আল্লাহ তাআলা ডাকে সাড়া দিয়ে চলেগেছেন পরকালের সুন্দর ভুবনে।

আল্লাহ তাআলা তাঁকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন। তাঁর নেক আমলের ফায়েজ ও বরকত মুসলিম উম্মাহকে দান করুন। মুসলিম উম্মাহকে বিশুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে নিজেদের ঈমান বাড়ানোসহ কোরআনের সমাজ বিনির্মাণের হিম্মত দান করুন। আমিন।