কোরবানি মানেই ত্যাগের উৎসব – রবিউল হাসান

0
338

 

দিও নাকো পশু কোরবানি,
বিফল হবে রে সবখানি
মনের পশুরে করো জবাই,
পশুরাও বাঁচে বাঁচে সবাই”

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর চরণখানী বিশ্লেষণ করলেই কোরবানির আসল মর্মার্থ বুঝা যায়। আমাদের কোরবানি হোক রিয়া মুক্ত।

বনের পশুর সাথে কোরবানি হোক আমাদের মনের পশুত্ব। পৃথিবী হয়ে উঠুক মানবতার। মানুষে মানুষে হোক শান্তির ঐকতান।

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসব আমেজের মধ্য দিয়ে আগামীকাল রোজ রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে।

ঈদুল আযহা একটি আরবি শব্দ এর বাংলা প্রতিশব্দ হলো ত্যাগের উৎসব। অর্থাৎ ঈদুল আযহা মানে ত্যাগের উৎসব। ত্যাগের মহিমা নিয়ে আসে ঈদুল আযহা। মহান আল্লাহতালার সন্তুষ্টির জন্য সারা বিশ্বের মুসলিমগণ এইদিন কুরবানী দিয়ে থাকেন।

মুসলিম মিল্লাতের পিতা নবী হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর আত্মত্যাগ ও অনুপম আদর্শের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে কোরবানির প্রচলন শুরু হয়। মহান আল্লাহর নির্দেশে হযরত ইব্রাহিম (আ.) তার প্রাণ প্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.)কে কোরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর ওপর নির্দেশ ছিল তার প্রিয়পুত্রকে উৎসর্গ করার। তিনি ছুরি চালিয়েছিলেন একান্ত প্রিয় শিশুপুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.) এর গলার উপর দিয়ে। আল্লাহপাকের উদ্দেশ্যে পিতা-পুত্রের ত্যাগের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনে আল্লাহ খুশি হয়ে যান।

আল্লাহর কুদরতে পুত্রের বদলে কোরবানি হয় পশু। আল্লাহর সন্তুষ্টিতে প্রিয়বস্তু উৎসর্গের চরম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন হযরত ইব্রাহিম (আ.) আর ধৈর্য্যের পরম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন হযরত ইসমাঈল (আ.)। এ অনন্য ত্যাগের মহিমাকে পালনীয় করে রাখা হয়েছে ঈদে পশু কেরবানির মাধ্যমে।
ঈদুল আযহা এক দিকে ত্যাগের পরীক্ষা, অন্যদিকে আনন্দের উৎসব।

এইদিনে পশু কোরবানি দেয়া সামর্থবান মুসলমানদের উপর ওয়াজিব। পশু কুরবানির মাধ্যমে ত্যাগ আর উৎসর্গের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মহান আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জনই কোরবানির মূল উদ্দেশ্য। কুরবানি দেয়া পশুর রক্ত-মাংস কিছুই আল্লাহ তায়ালার কাছে পৌঁছায় না। শুধু পৌঁছে তাকওয়া। অনেক মুসলিম এটি বুঝতে না পেরে ত্যাগের উৎসবকে ভোগ আর প্রদর্শনীয় মহড়ায় পরিণত করে। অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে সর্বোচ্চ দামে কুরবানির বড় পশু কেনাটা অর্থ-বিত্তের উৎকট প্রদর্শনী ছাড়া অন্য কিছু নয়। এটি ধর্ম ও ত্যাগ কোনটিই নয়। ভোগ আর প্রদর্শনী। বিত্তের প্রতিযোগিতা নয়, বৈভবের প্রদর্শনী নয়, ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে মনের ভেতরের কোরবানি করাই হলো আসল কুরবানি। পশু জবাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে মনের পশুকে ও কোরবানি দিতে পারলেই ত্যাগের পরীক্ষায় পাস করে রবের সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব।