চন্দনাইশে চাহিদার শীর্ষে মাঝারি সাইজের গরু,চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে দেশীয় গরু

 

ইসমাইল ইমন চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ 

মুসলিম বিশ্বের পবিত্র ইদুল আজহার ঈদ মাত্র আর এক দিন বাঁকি। ঈদকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে চন্দনাইশে ও পশুর হাট। সপ্তাহের দু-দিন বুধবার ও শনিবার ছাড়াও ঈদের আগ পর্যন্ত প্রতিদিনই বসবে হাট। বেচা-কেনা শুরু হয়েছে এক সপ্তাহ আগে থেকেই। বিক্রেতারা বলছেন,গতবছরের তুলনায় ভালো দামে গরু-মহিষ বিক্রি করছেন তারা। বড় গরুর তুলনায় ৩ থেকে ৫ মণ ওজনের মাঝারি গরু চাহিদার শীর্ষে রয়েছে।

শনিবার (৯ ই জুলাই ২০২২) এলাকার শেষ দিনের হাটে দেখা গেছে গরু-মহিষের সরবরাহ বেশ ভালো। দূর-দূরান্তের পাইকাররা এসেছেন কোরবানির পশু কিনতে। তবে,বড় গরুর বেচা-কেনা কম হতে দেখা গেছে। মাঝারি ও কোরবানিযোগ্য ছোট গরুর চাহিদা অপেক্ষাকৃত বেশি। আমদানি বেশি হওয়ার সাথে সাথে দামের ক্ষেত্রে প্রতি গরুতে গতবারের তুলনায় ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে খাঁন হাট, বাগিচা হাট,বরকল ও দোহাজারী পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়,হাটে পশুর সরবরাহ ছিল চোখে পড়ার মত। বিক্রেতারা পশু নিয়ে অপেক্ষা করছেন। উত্তপ্ত রোদে দরদর ঘামছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই। চলছে দামাদামি; দামে হলেই ছাড়ঘরের দিকে ছুটছেন তারা। আনুমানিক ৩ থেকে সাড়ে ৩ মণ ওজনের ষাঁড় গরু ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

গাছবাড়ীয়া খান হাটে গরু বিক্রি করতে এসেছেন ধোপাছড়ির মোরশেদ, গরুর দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান,তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু কিনে এসে হাটে এই বিক্রি করেন। ঈদের হাট জমজমাট থাকে আর প্রতিটা গরুতে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা লাভ করেন তিনি। লাল রঙের এক ষাঁড় গরুর আনুমানিক ওজন হবে জানালেন ৩ মণ ১০ সের। দাম হাঁকলেন ৮০ হাজার।
দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে এমন প্রশ্নে মোরশেদ বলেন,কুরবানির সময় বাইরের বড় বড় ব্যবসায়ীরা হাটে আসেন। পছন্দের গরু দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেন। ওজনের তুলনায় গরুর দাম সমান হয় না। পছন্দের উপর দু-পাঁচ হাজার টাকা বেশি দিয়ে কিনেন ক্রেতারা।

চন্দনাইশ চৌধুরী পাড়ার এক ক্রেতা গরু কিনতে এসেছেন হাটে। হাটের পরিস্থিতি জানতে চাইলে তিনি বলেন,শেষ দিন জমজমাট হবে হাট। বিশেষ করে কুরবানির ৩থেকে ৪ দিন আগে থেকে হাটে গরু কিনতে আসেন গেরস্ত পার্টিরা। কুরবানি দেওয়ার জন্য গরু কিনে বাড়িতে কয়েকদিন যত্ন করেন। স্থানীয় গেরস্ত মানুষেরা কিছু কিছু হাটে আসছেন। এখন পাইকার আছে হাটে।
পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে আসা ক্রেতা মো: আজম জানান,ঈদের এক সপ্তাহ আগেই তারা কোরবানির পশু কিনে থাকেন। প্রতিবছর ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার গরু কিনেন। এবার এক সপ্তাহের আগেই এসেছেন। হাটে পছন্দসই ভালো পশু আছে। দুপুর পর্যন্ত কয়েকটি গরু দেখেছেন। দামের তুলনায় একটু চড়া মনে হলেও সবকিছুর দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতারা তেমন মনে করবেন না বলেই ধারণা করছেন তিনি।

গরুর খামারিরা জানান,গতবারের চেয়ে এইবার গরু প্রতি দাম বেশি আছে। গরুর উৎপাদন খরচ বাড়লেও সেই তুলনায় বাড়েনি গরুর দাম। তিনি বলেন,গরুর খাদ্য কিনতে হচ্ছে বেশি দাম দিয়ে। আগে যেই গমের ভুষি ১২’শ টাকা ছিলো সেই ভুষি এখন ১৬৫০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে।একটা গরু প্রতিদিন ৫ থেকে ৬শ’ টাকার খাবার খাচ্ছে সেই হিসেবে দাম কতটুকু বেড়েছে আপনারা হিসেব করেন। প্রশ্ন রাখেন তিনি।
ঈদের আগে সাপ্তাহিক হাট ছাড়াও পশুর আমদানি হয়েছে চোখে পড়ার মতো। বড় বড় ব্যবসায়ীরা আসছেন। করোনার কারণে গতবার বাইরে থেকে ব্যাপারীরা সেভাবে আসতে পারেননি। এবার সবাই আছে। স্থানীয় পর্যায়ের কিছু ক্রেতা দেখেশুনে গরু কিনছেন। বাইরের ক্রেতারাও গরু-মহিষ কিনছেন।

চন্দনাইশ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: রূপেন চাকমা বলেন,চন্দনাইশে কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা অনুমানিক ২৮ হাজার ৫০টি গবাদি পশু উৎপাদন ৪০হাজার সংখ্যা ৮’শ ৫৪। খামারি সংখ্যা ছোট বড় হিসেবে ১৭৯টি। ষাড়,বলদ,গাভী মোট ৩৯হাজার ৬’শ ৫৩টি। মহিষ,ছাগল,ভেড়া মোট ৪০ হাজার ৮’শ ৫৪টি। বাজার স্হায়ী ২টি বাগিচা হাট,কালী হাট,অস্হায়ী ১১টি পশুর যোগান বেশি থাকায় এবার ঈদ বাজার খামারি ও ক্রেতা উভয়ের অনুকূলে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারত থেকে বৈধ বা অবৈধ উপায়ে গরু আমদানি বন্ধের বিষয়ে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। বাইরে থেকে কোন পশু আসবে না। তাই খামারিরা ভালো দাম পাবেন। এইবার কোরবানির জন্য দেশে পর্যাপ্ত পশু রয়েছে। নিজেদের পশু দিয়েই দেশে কোরবানির পশুর চাহিদা মিটাতে পারবে। চাহিদার চেয়ে বেশি পশু আছে। আর হাটে কোন ক্রেতা-বিক্রেতা অসুস্থ হলে তাদের জন্য একজন চিকিৎসক আছে গরুর জন্য ভেটেনারি ডাক্তারও আছেন বলে তিনি জানান।।

এই ওয়েবসাইটের সকল লেখার দায়ভার লেখকের নিজের, স্বাধীন নিউজ কতৃপক্ষ প্রকাশিত লেখার দায়ভার বহন করে না।
এই বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -

সর্বাধিক পঠিত

- Advertisment -