স্বাধীন প্রতিবেদক
নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক।
বাংলাদেশের আর্থিক খাতে নতুন এক যুগ শুরু হতে যাচ্ছে নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের মাধ্যমে। দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে অনুমোদন পেয়ে সেবা চালু করতে পুরোদমে প্রস্তুতি শুরু করেছে নগদ। ডিজিটাল ব্যাংক হওয়ার আগেই মাত্র চার বছরে দশ হাজার কোটি টাকার কোম্পানিতে পরিনত হয়েছে নগদ। দেশে ডিজিটাল ব্যাংক এবং ডিজিটাল লেনদেন নিয়ে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক
প্রশ্ন : মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বেশ দ্রুত সফলতার মুখ দেখেছে নগদ। এর কারণ কী?
উত্তর : নগদ বিশ্বাস করে- মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কাজ মানুষের অর্থনৈতিক জীবনযাপনকে সহজতর করে তোলা। আমরা মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চেয়েছি এবং একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সকল প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার বাইরে থাকা মানুষকেও অর্থনৈতিক কাঠামোতে আনতে চেয়েছি। এজন্য আমরা দেশের সবচেয়ে কম খরচের মোবাইল ব্যাংকিং নিয়ে এসেছি। সেই সঙ্গে আমাদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অ্যাকাউন্ট খোলাকে অত্যন্ত সহজ ও কম সময়ের একটা কাজে পরিণত করেছে। এখন মানুষ মুহূর্তেই অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলতে পারছে। অথচ নগদ আসার আগে এই কাজই করতে সময় লাগত সাত-আট দিন। আমরা সরকারের বিভিন্ন সেবাকে পৌঁছে দিয়েছি দেশের প্রত্যন্ত এলাকায়। এসব সুবিধাই মানুষকে আগ্রহী করেছে নগদে আসার জন্য। আমরা বিশ্বাস করি- এ দেশের সকল মানুষকে নিয়ে আমাদের একটা পরিবার। আমি মনে করি, এই আন্তরিক চিন্তার কারণে এবং উদ্ভাবনী শক্তির কারণে নগদ দ্রুত সাফল্যের মুখ দেখেছে।
প্রশ্ন : মোবাইল ব্যাংকিং সাধারণ মানুষের জীবনে কী ধরনের ভূমিকা রাখছে?
উত্তর : বাংলাদেশে একেবারে সাধারণ মানুষের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে মোবাইল ব্যাংকিং। প্রথাগত ব্যাংকিং কোনোভাবেই এ দেশের অধিকাংশ মানুষের প্রয়োজন মেটাতে পারছিল না। এখানে দরকার ছিল আরও উদ্ভাবনী, আরও সহজ কোনো একটা প্রযুক্তি। সেই জায়গায় মোবাইল ব্যাংকিং, বিশেষ করে নগদ সাধারণ মানুষের জীবন বদলে দিতে পেরেছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। দেশের কোটি কোটি মানুষ নানা রকম জটিলতার কারণে অর্থনৈতিক কাঠামোর বাইরে ছিল। একটা সাধারণ ভাতার উদাহরণ দেখুন। একজন মানুষকে আগে ভাতার টাকা তুলতে কয়েক দিন ধরে ব্যাংকে ঘোরাঘুরি করতে হতো। চেয়ারম্যান, মেম্বারদের পেছনে ধরনা দিতে হতো। সেটাকে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ভাতাভোগীর মোবাইলে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছি। এ ছাড়া দৈনন্দিন জীবনে টাকা হস্তান্তর, কেনাকাটা থেকে শুরু করে মোবাইল রিচার্জের মতো কাজ এখন মানুষের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। আমি মনে করি, মানুষ অর্থনৈতিকভাবে একটা স্বাধীনতা পেয়েছে।
প্রশ্ন : প্রতিবছর মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নগদের সঙ্গে কী পরিমাণ মানুষ সম্পৃক্ত হচ্ছে?
উত্তর : যাত্রা শুরু করার মাত্র চার বছরের মধ্যে নগদ বিলিয়ন ডলার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আর এর পেছনে আছে এই অল্প সময়ে আমাদের প্রায় সাড়ে আট কোটি গ্রাহক পাওয়ার মতো সাফল্য। মানুষের প্রয়োজন এবং বাধার জায়গাটি সঠিকভাবে নিরুপণ করে সমাধান নিয়ে আসায় এত অল্প সময়ে এত বেশি গ্রাহকের ভালোবাসা পেয়েছে নগদ। নগদের উদ্ভাবনী শক্তি ও ব্যয় কমিয়ে আনার নীতির কারণে এই কয়েক কোটি মানুষ আজ নগদ পরিবারের সদস্য। সাধারণ হিসাবই বলছে, প্রতিবছর আমরা গড়ে দুই কোটির বেশি গ্রাহক পেয়েছি। এটাকে আমরা নগদের সবচেয়ে বড় সাফল্য বলে মনে করি।
প্রশ্ন : সাম্প্রতিক সময়ে লেনেদেনের বাইরে সঞ্চয়সহ আর কী কী সেবা যুক্ত হয়েছে?
উত্তর : পেমেন্টে বিপ্লব ঘটিয়েছে নগদ। তা ছাড়া ভাতা-উপবৃত্তি গ্রহণ থেকে শুরু করে একটা মোবাইল আর্থিক সেবার পক্ষে যা যা সেবা দেওয়া সম্ভব, তার সবই নগদ প্রদান করছে। শুরু থেকেই এসব সেবার অনেক ক্ষেত্রেই নগদ বিপ্লব এনেছে। নগদই প্রথম বিনামূল্যে বিল পেমেন্ট চালু করেছে। আমরা মনে করি, মোবাইল ব্যাংকিং দিয়ে যা যা করা সম্ভব, তা আমরা করেছি। এখন সময় আরও সামনে এগোনোর। সরকার এখন ডিজিটাল ব্যাংক অনুমোদন দিয়েছে। দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে নগদ। আমরা একজন মানুষের জীবনযাপনে যত ধরনের আর্থিক লেনদেন প্রয়োজন আছে, সব সেবাই দিতে পারব। ঋণ, সঞ্চয় থেকে শুরু করে মাইক্রো ক্রেডিট- সব ধরনের সেবা নগদের মাধ্যমে পাওয়া যাবে। একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে প্রস্তুত নগদ।
প্রশ্ন : ই-কমার্স ও আউটসোর্সিং খাতে মোবাইল ব্যাংকিং কতখানি জায়গাজুড়ে অবস্থান করছে?
উত্তর : ই-কমার্সে মোবাইল ব্যাংকিং খুব ভালো অবস্থায় আছে। এ খাতে লেনদেনের উল্লেখযোগ্য অংশই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হচ্ছে। কেবল নগদ ব্যবহার করেই প্রতি মাসে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ই-কমার্সে লেনদেন হচ্ছে। ক্যাশলেস স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে এই লেনদেনই হবে প্রধান স্তম্ভগুলোর একটি। আর এটাকে সামনে রেখেই কাজ করে যাচ্ছি আমরা। ইতোমধ্যে আমাদের বিএমডব্লিউ ক্যাম্পেইনসহ বেশ কিছু ডিজিটাল লেনদেনের ক্যাম্পেইন এই ব্যাপারটিতে দারুণ গতি এনেছে। তবে আউটসোর্সিংয়ে এখনও নীতিগতভাবে মোবাইল ব্যাংকিং অনুমোদিত নয়। ফলে এখানে কাজ করতে গেলে হুন্ডিকে উৎসাহিত করা হতে পারে। আমরা সেজন্য এই জায়গা থেকে দূরে আছি। তবে আশার কথা হলো, ডিজিটাল ব্যাংক চালু হলে আমরা এটা নিয়ে কাজ করব। বলতে পারেন, ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে আমাদের অন্যতম প্রায়োরিটি হবে এই আউটসোর্সিং খাত।
প্রশ্ন : লেনদেন চার্জ আরও কমানোর কি কোনো পরিকল্পনা আছে?
উত্তর : নগদ শূন্য চার্জে বিশ্বাস করে। লেনদেনে কোনো বাধা হোক, এমনটা দেখতে চায় না নগদ। আমরা চাই, ডিজিটাল লেনদেনে কোনো চার্জ থাকবে না। কিন্তু এটা আসলে আমরা নিজেরা চেয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। বাজারে বিভিন্ন অপারেটর আছে। তারা উচ্চ চার্জ নিয়ে এজেন্টকে উচ্চ হারে কমিশন দেয়। ফলে প্রতিযোগিতামূলক বাজার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কেবল টিকে থাকার স্বার্থেই আমরা লেনদেনে চার্জ নিচ্ছি। নইলে আমাদের ইচ্ছা এটাকে শূন্যতে নামিয়ে ফেলা। আমরা ডিজিটাল ব্যাংক চালু করলে বিনা জামানতে সিঙ্গেল ডিজিট ইন্টারেস্টে ঋণ দেব এবং ক্যাশআউট চার্জ তখন শূন্যে নামিয়ে আনা হবে।
প্রশ্ন : মোবাইল ব্যাংকিং নিয়ে আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বলুন?
উত্তর: মোবাইল আর্থিক লেনদেন নিয়ে আমরা সামনের দিনে আর ভাবছিই না। এটা একটা ডাইয়িং টেকনোলজি। অর্থনৈতিক কাঠামোর বাইরে থাকা কোটি কোটি মানুষকে মূল স্রোতে আনা এবং সেবাকে বিস্তৃত করতে ডিজিটাল ব্যাংকই এখন একমাত্র বিকল্প। আমার বিশ্বাস, ডিজিটাল ব্যাংক দেশে অর্থ লেনদেনে বিপ্লব আনবে।
ডিজিটাল ব্যাংক নগদ অর্থ লেনদেন