তরুণ সাংবাদিক দিপু আহসান-এর কলাম ❝আমরা সভ্য জাতি❞

❝আমরা সভ্য জাতি❞
আমার প্রতিদিনের রুটিন ওয়ার্কে সেরকম একটা লেখালেখির কাজ নেই। তবুও লেখালেখি করি। কোথা থেকে যে এই লেখালেখি শুরু করেছি তা ঠিক মনে নেই৷ তবে এটা মনে আছে লেখালেখি একটা শখ আর শখ থেকে নেশা। যদিও অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করে ইচ্ছে মতো লেখালেখি করার সুযোগ নেই। লেখালেখি করার আগে অন্তত একশত বার ভাবতে হয়। কি লিখছি, কখন লিখছি, কোথায় লিখছি, কার পক্ষে বা বিপক্ষে যাচ্ছে আমার লেখা…।
ক’বছর আগের অহিংস প্রতিকূলতা আমাকে ভাবিয়ে তোলে৷ কেন আমি লিখতে গেলাম সেটা অনেকেরই স্বভাবজাত প্রতীতি।  তাই শুরু থেকে তাদেরকে অভিবাদন জানাতে হয়। জৈবিক বয়স তখন হয়তো পনের থেকে আঠারো হবে কিন্তু অনেকেই ভেবে নিয়েছেন অনেক কিছু। নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছা বলতে কিছু নেই। যা আছে সবই  অধিকার।  বেচে থাকার অধিকার,খাদ্য,বস্ত্র,বাসস্থান,শিক্ষা ও  চিকিৎসা এতটুকুই। শুধু মৌলিক অধিকার বলতে নয়, অধিকার বলতে আর কিছুই নেই। রাজনৈতিক অধিকার, তথ্য অধিকার,  বেচে থাকার অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার, লেখালেখির অধিকার বলতে কিছু নেই। আর ভুলেও এসব অধিকার খুজতে নেই। যদি থাকত তাহলে অধিকার শব্দটার এত বেশি প্রচলন হত না।
জন্মের পরে আমরা যখন হাটি হাটি পা পা করে শিশু থেকে কৈশোরে পা রাখি তখন পিতা-মাতা অতি যত্নে আমাদের লালন পালন করে থাকেন। আমরা যখন হাটতে শিখিনি, তারা কোলে তুলে নিয়েছেন। নিজে থেকে খেতে পারিনি, তারা খাইয়ে দিয়েছেন। যখন কোনো কিছুর কষ্টে ভুগেছি, তখন প্রিয় অভিভাবকরাই অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। পিতা মাতা সব সময় আগলে রেখেছেন এজন্যই যে, আমরা যেন সহজ সরল সঠিক পথে চলতে পারি। ভালোমন্দ বোঝার ক্ষমতা যেন আমাদের মধ্যে থাকে। কিন্তু তার সদৃশ্য আজ কোথায়? কই আমরা তো সরল পথে চলতে শিখিনি। ভালোমন্দ বোঝার ক্ষমতাও আমাদের মধ্যে জন্মায় নি।
সত্যকে মিথ্যা বানিয়ে, মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে আমরা আজ শিরোনাম লিখি। ক্ষমতার দাপটে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে আমরা অন্যের পা ধরে থাকতে পছন্দ করি, ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন, বছরের পর বছর। নিজের ইচ্ছা শক্তি থাকা সত্বেও অধিকার আদায়ের জন্য আমরা সচেতন নই। পূর্বে যতটুকু ছিলো সেটুকুও মরে গেছে। আর যদি আমার কথা মিথ্যে হয় তাহলে কেন আমরা মুখ ফাটিয়ে বলতে পারিনা অধিকারের কথা। কেন বলতে পারিনা, আমার পছন্দ অন্য দশজনের মত নয়।কেন বলতে পারেন না এদেশের মাটিকে আপনি ভালোবাসেন।আপনি ভালোবাসেন গনতন্ত্র কিংবা ইসলামী সমাজকে, আপনি ভালোবাসেন সাঈদী, আজহারী, কাদের কিংবা কামরুজ্জামানের মত মানুষগুলোকে। মুখ ফাটিয়ে বলতে পারেন না, প্রিন্স টিভি কিংবা দিগন্ত টিভি আপনার আমার ভালোলাগা শুধু নয় ভালোলাগাও। বলতে পারেন না মাসিক প্রেরণা,  সুবে-সাদিক প্রকাশনাগুলোর কথা। বুকে একরাশ সাহস নিয়ে বলার সুযোগ করেন নি প্রিয় “সাপ্তাহিক সোনার বাংলা” পত্রিকার কথা!
তাহলে কিভাবে আমরা নিজেকে সভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় দেই? তাহলে এত কষ্ট করে অভিভাবকরা কেনই বা আমাদের লালন পালন করতে গেলেন। আমরা কি আজও তাদেরকে কোন উপহার দিতে পেরেছি? নাকি নিজেকে গুছিয়ে রেখেছি। আসলে আমাদের অবস্থা আজ তাসলিমা নাসরিন কিংবা শেপু দাদার চেয়েও করুন।
বড় বড় মঞ্চে গলা ফাটিয়ে শেপুদা যেমন চিৎকার করে বলেন -গণতন্ত্রের জন্য তিনি রক্ত দিতে প্রস্তুত। তাসলিমা নাসরিন যেমন বলেন -সারা জীবন তিনি নারীর অধিকার নিয়ে লিখেছেন। অথচ! বাস্তবতায় তার ঠিক উল্টো। শেপুদা গণতন্ত্রের জন্য রক্ত দেন নি। বরং তিনি গনতন্ত্রকে কূলশিত করে হাজারো মানুষের রক্ত নিয়েছেন, নিচ্ছেন। তাসলিমা নাসরিন নারীর পক্ষে কখনো লিখেন নি। বরং নারীকে উলঙ্গ করে তিনি নারীকে করেছেন অপদস্ত। আর আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের নামে নিজেকে গুছিয়ে রেখেছি একটি আবদ্ধ ঘরের মধ্যে।
মূল কথা হলো; আমি, আপনি আমরা সবাই দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও ঈমান নিয়ে সব সময় পেরেশানিতে থাকি। কিন্তু একবারের জন্য ভেবে দেখিনা আমাদের করনীয় কি? অভাব শুধু নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষ নয়। অভাব চিন্তা ও কর্মের। আমরা সবকিছু থেকে শুধু জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করি। কিন্তু অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করি না। আসুন নিজেকে সভ্য হিসেবে গঠন করি।
লেখা- দীপু আহসান, পাটগ্রাম লালমনিরহাট।
এই ওয়েবসাইটের সকল লেখার দায়ভার লেখকের নিজের, স্বাধীন নিউজ কতৃপক্ষ প্রকাশিত লেখার দায়ভার বহন করে না।
এই বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -

সর্বাধিক পঠিত

- Advertisment -