
স্বাধীন নিউজ প্রতিনিধি, নওগাঁ
নওগাঁয় পশুর হাটে হাসিল আদায়ে মানা হচ্ছে না প্রশাসনের বেঁধে দেয়া নিয়ম ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী
নওগাঁর মান্দা উপজেলার ভ্যালাইন ইউনিয়নের জামতৈল গ্রাম থেকে শুক্রবার চৌবাড়িয়া হাটে কোরবানির গরু কিনতে আসেন হাবিবুর রহমান। ৬০ হাজার টাকায় একটি গরু কেনার পর তার কাছ থেকে ৮০০ টাকা হাসিল নেয়া হয়েছে। আবার বিক্রেতার কাছ থেকেও লেখনী বাবদ নেয়া হয়েছে ১০০ টাকা। তবে রসিদে লেখা হয়নি কোনো টাকার পরিমাণ। অতিরিক্ত হাসিল আদায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে উল্টো ইজারাদারদের হুমকির মুখে পড়েন তিনি। শুধু মান্দার চৌবাড়িয়া হাট নয়, ঈদুল আজহার আগে প্রতি বছরই নওগাঁর সব পশুর হাটের ধারাবাহিক চিত্র এটি। জেলাজুড়ে প্রকাশ্য এ অনিয়ম চললেও বিষয়টি জেনেশুনেও নীরব ভূমিকায় রয়েছেন উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
আসন্ন কোরবানির ঈদ সামনে রেখে নওগাঁর ১১টি উপজেলার ২৮টি স্থায়ী পশুর হাটে শুরু হয়েছে পুরোদমে বেচাকেনা। এ বছর দাম কম থাকায় ক্রেতাদের মাঝে স্বস্তি ফিরলেও প্রতিটি পশুর হাসিল দিতে গিয়ে পড়তে হচ্ছে বিপাকে। প্রতি বছরের মতো এবারও জেলার সব পশুর হাটে সরকার নির্ধারিত হাসিলের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ আদায় করছেন ইজারাদাররা। প্রকাশ্য এ অনিয়ম বন্ধে জেলার ১১টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মধ্যে নওগাঁ সদর ও রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গত এক মাসে তিনটি অভিযান পরিচালনা করলেও বাকি নয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এখনো অভিযোগের অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগকারী না পাওয়ার অজুহাতে ইজারাদারদের বাড়তি হাসিল আদায়ে বাধা দিচ্ছেন না তারা।
এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতাকে। অতিরিক্ত হাসিল আদায় বন্ধে ইজারাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ক্ষুব্ধ ক্রেতা-বিক্রেতা।
প্রতি বছর ঈদুল আজহার এক মাস আগে থেকে শুরু করে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এসব হাটে প্রায় চার লাখ কোরবানির পশু বেচাকেনা হয়। যেখানে চলতি বছর সরকার নির্ধারিত হাসিল প্রতিটি গরুতে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা এবং প্রতিটি ছাগলে ২০০ টাকা আদায়ের নতুন রেট নির্ধারণ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। গত বছর এ রেট ছিল প্রতিটি গরুতে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা এবং ছাগলে ১৫০ টাকা। রেট বাড়ানোর পরও ইজারাদাররা বেপরোয়া। বিগত বছরগুলোর মতোই এসব হাটে এবারও প্রায় দ্বিগুণ হাসিল আদায় করছেন তারা।
মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়া হাট ইজারাদার সুজন হোসেন অতিরিক্ত হাসিল আদায়ের অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, এ হাটে কোরবানির ঈদের আগে প্রচুর গরু আমদানি হয়। তাই অতিরিক্ত ১৫ বিঘা জমি ভাড়া নিয়ে সেখানেও হাট বসাতে হচ্ছে। এতে আমাদের অতিরিক্ত টাকা খরচ হয়। গত বছর করোনায় আমরা ইজারাদাররা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তাই এ বছর বেশি টাকা হাসিল আদায়ের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। সেই পরিপ্রেক্ষিতে কিছু টাকা বেশি আদায় করা হচ্ছে। কোনো ক্রেতা-বিক্রেতাকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।
নিয়ামতপুর উপজেলার ছাতড়া হাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের স্ত্রীর নামে ইজারা পেলেও হাটের যাবতীয় আদায় করছেন তার পার্টনার লুত্ফর রহমান। তিনি বলেন, কিছু টাকা বেশি আদায় করা হলেও তার পরমাণ দ্বিগুণ নয়। একদিন হাটে গিয়ে কিছু সম্মানী নিয়ে আসতে বলেন তিনি।
এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান বণিক বার্তাকে বলেন, কোনো পশুর হাটে সরকার নির্ধারিত হাসিলের চেয়ে বেশি আদায়ের সুযোগ নেই। বিষয়টি তদারকি করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া আছে। এর পরও ইজারাদাররা অতিরিক্ত হাসিল আদায় করলে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।