Logo
সোমবার , ৪ জুলাই ২০২২ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আইন আদালত
  4. আঞ্চলিক খবর
  5. আন্তর্জাতিক
  6. আবহাওয়া
  7. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  8. উন্নয়ণ
  9. করোনা
  10. কৃষিবার্তা
  11. ক্যাম্পাস বার্তা
  12. খেলাধুলা
  13. খোলা কলাম
  14. গণমাধ্যম
  15. গল্প ও কবিতা

নগর প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ফুলেলা মডেল

প্রতিবেদক
প্রকাশক
জুলাই ৪, ২০২২ ৪:৪৭ অপরাহ্ণ

হুমায়ুন কবির

স্বাধীনতার অর্ধশতক পেরিয়ে বাংলাদেশ। সময়ান্তরে দেশের স্বাস্থ্য অবকাঠামোয় লক্ষণীয় উন্নতি ঘটেছে। নগর ভরে উঠেছে বড় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে। স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের আনুপাতিক উপস্থিতিও এখানে বেশি। কিন্তু নগরে তেমন কোনো সুসংগঠিত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নেই। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রে নাগরিকদের, বিশেষ করে স্বল্প আয় ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক চিকিৎসা মেলে না। একদিকে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার উচ্চ ব্যয়, আবার সরকারি বড় হাসপাতালে রোগীর চাপ ও দীর্ঘ লাইন। সব মিলিয়ে সময়মতো স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া তাদের জন্য দুষ্কর। ফলে ওষুধের দোকানই ভরসা। আর কিছুটা সচ্ছল নগরবাসী বাধ্য হয়ে চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বার বা বেসরকারি হাসপাতালে যান। কিন্তু তাতে পকেট থেকে বেরিয়ে যায় বড় অংকের অর্থ, যা তাদের জন্য বাড়তি আর্থিক চাপের। সেই বিবেচনায় শহরাঞ্চলে সুলভে মানসম্মত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা জোগানোই রাষ্ট্রের অন্যতম জনস্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জ।

১৯৭৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আলমাআতা সম্মেলনে ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিশ্বে প্রাথমিক স্বাস্থ্য ধারণাটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এ ধারণার ভিত্তিতে উন্নত রাষ্ট্রগুলো শহরে সুন্দর প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। সেখানে নিশ্চিত করেছে এলাকাভিত্তিক জেনারেল ফিজিশিয়ান। যাকে সংক্ষেপে জিপি বলা হয়। কারো কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা হলে প্রথমে জিপিকে দেখানোই সেখানে নিয়ম। প্রাথমিকভাবে দেখার পর আরো চিকিৎসা প্রয়োজন হলে রোগীকে তিনি রেফার করেন অন্যত্র। সেখান থেকে রেফার করা হয় বিশেষায়িত হাসপাতালে। এভাবে তারা এলাকার মধ্যেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত এবং ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ কেনা বন্ধ করেছে। সুতরাং বাধ্য হয়ে নিকটস্থ আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সেন্টারের অধীন জিপির কাছে স্থানীয় বাসিন্দারা যান।

শুধু উন্নত রাষ্ট্র নয়, উন্নয়নশীল অনেক দেশেও শহরাঞ্চলে সুন্দর প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিদ্যমান। এক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। দেশটির নাটাল প্রদেশের ছোট এক জেলা ফুলেলা। সেখানকার স্থানীয় জনগোষ্ঠী নানা অসুখ-বিসুখ, বিশেষ করে ম্যালেরিয়ায় জর্জরিত ছিল। ১৯৪০ সালে দুই চিকিৎসক সিডনি এবং এমিলি কার্ক সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন ফুলেলা হেলথ ইউনিট। পরিচালনার ক্ষেত্রে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ওই স্বাস্থ্য ইউনিটকে দেয় বিপুল স্বাধীনতা। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির কাজ ছিল রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা, মাতৃ ও শিশু সেবা দেয় এবং স্থানীয় সহযোগিতা ও জনগোষ্ঠীগত দায়িত্বসহ প্রতিরোধ ও উপশমমূলক সেবার সম্মিলন ঘটানো। এখানে শুরু থেকেই স্বাস্থ্য শিক্ষাসহ স্বাস্থ্য ও রোগের স্থানীয় ধারণার বোঝাপড়ার ওপর বেশি জোর দেয়া হয়। জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যের এ কৌশলটি ম্যালেরিয়াসহ নানা রোগব্যাধির প্রতিরোধ এবং জনগণের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখে। মাঝে কিছুটা স্থবিরতা এলেও গত শতকের নব্বইয়ের দশকে এ মডেলটি পুনরুজ্জীবন করেন বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা। ১৯৯৪ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন তিনি। তার শাসনকালে ফুলেলার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি ডারবানসহ প্রতিটি শহরের প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বুনিয়াদ গড়ে দেন। এর সুফল এখন পাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষ। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণনির্ভর এ ফুলেলা মডেল আজ অনেক দেশে অনুসৃত হচ্ছে এবং সোশ্যাল মেডিসিনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে।

বাস্তবতা হলো, গত পাঁচ দশকেও আমরা দেশে শহরাঞ্চলে কার্যকর ও পর্যাপ্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা গড়ে তুলতে পারিনি। বর্তমানে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ এবং চারটি বিভাগীয় শহরে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা) ৩৬টি আরবান ডিসপেনসারি হচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নগরের জনগণের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্ট নামে একটি প্রকল্প ২৪ বছর ধরে চলমান। বর্তমানে প্রকল্পটি ১২টি সিটি করপোরেশন এবং ১৩টি পৌরসভায় সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছে। ঋণের অর্থে পরিচালিত এ প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে এনজিওর মাধ্যমে চলায় সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের কোনো সক্ষমতা গড়ে ওঠেনি। তাছাড়া পেমেন্ট পদ্ধতিসহ নানা দুর্বলতায়ও নাগরিকরা কাঙ্ক্ষিত ফল পাচ্ছে না। এর মধ্যে অদূর-ভবিষ্যতে প্রকল্পটিতে দাতা প্রতিষ্ঠান অর্থায়ন বন্ধ করে দিলে নগরের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা আরো ব্যাহত হবে।

পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে ৩৬ শতাংশের বেশি মানুষ নগরে বাস করে। অথচ এখন পর্যন্ত নগরের মানুষের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কে প্রদান করবে, তার স্থায়ী মীমাংসা হয়নি। সরকারের রুলস অব বিজনেস ও অ্যালোকেশন অব বিজনেস অনুযায়ী সারা দেশের জনগণের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার দায়িত্ব স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের। সামগ্রিকভাবে জনগণের ধারণাও তাই। অথচ ২০০৯ সালের সিটি করপোরেশন আইন এবং ২০১০ সালের পৌরসভার আইনে অন্যান্য সেবার মতো স্বাস্থ্যের দায়িত্বও সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাকে দেয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘ এক যুগে তাদের মধ্যে নগর স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে সামর্থ্যের প্রকাশ দৃশ্যমান নয়। বস্তুত নগরের বিপুল জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো স্বাস্থ্য ইউনিট, কারিগরি জ্ঞান, অবকাঠামো বা জনবল নেই। সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার স্বাস্থ্যসেবার জন্য আলাদা কোনো আর্থিক খাত নেই। এসব সীমাবদ্ধতায় এটা স্পষ্ট, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ছাড়া অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা চালানো সম্ভব না। তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেই নগরের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার দায়িত্ব দেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

কয়েক দশকে শহরমুখী অভিগমন বেড়েছে উল্লেখযোগ্য মাত্রায়। তথ্য বলছে, দেশের মোট জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৪ শতাংশ। কিন্তু শহরে তা ২ দশমিক ৫ শতাংশ। অপরিকল্পিত নগরায়ণে শহরের ক্রম প্রসারণ ঘটছে, বাড়ছে মানুষ। অথচ তার সঙ্গে সংগতি রেখে বাড়েনি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ। গবেষণা বলছে, ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের অর্ধেক মানুষ নগরে বাস করবে। কাজেই নগরের মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে না পারলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৩ নম্বরসহ অনেক লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। আমরা দেখছি, শহরের বড় সরকারি হাসপাতাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলছে। নগরের প্রাথমিক সেবার দায়িত্ব আবার স্থানীয় সরকার বিভাগের। এটা সমরূপতা ও কার্যকারিতা উভয় বিবেচনাতেই যৌক্তিক নয়। সুতরাং এ দ্বৈরথের অবসান জরুরি।

নগরে কার্যকর প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে ওঠার সঙ্গে প্রতিষ্ঠা পাবে রেফারেল সিস্টেম। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে কমবে অপ্রয়োজনীয় ভিড়। কাজেই জরুরি ভিত্তিতে কিছু উদ্যোগ নেয়া দরকার। আইনগত অসংগতি দূরপূর্বক নগর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার দায়িত্ব প্রথমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে ন্যস্ত করতে হবে। সহযোগীর ভূমিকায় রাখতে হবে স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষকে। এখানে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা কমপক্ষে দুই স্তরে বিন্যাস করতে হবে। এক্ষেত্রে অবকাঠামো, জনবল, স্থান, সংখ্যা ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের প্রকার ও সেবার ধরন নির্ধারণ করে দিতে হবে। সার্বক্ষণিক জরুরি সেবাসহ শুরু থেকেই দুই শিফট চালুর বিষয়টিও সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় রাখতে হবে। যাতে শ্রমজীবীরা চাইলে সন্ধ্যাকালীন সেবাও পেতে পারে। যেভাবে মানুষ বাড়ছে তাতে শহরাঞ্চলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংখ্যা আরো অনেক বাড়ানো প্রয়োজন। এগুলো বাস্তবায়নে দরকার বিপুল বিনিয়োগ। সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে তাই সরকারকে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিতে হবে।
সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা গুরুত্বপূর্ণ। এটিতে আরো বেশি জোর দিতে হবে। কমিউনিটি ক্ষমতায়নের মাধ্যমে প্রাথমিক চিকিৎসার সঙ্গে পুষ্টি, শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, টিকাদান, স্বাস্থ্যবিধি শিক্ষা প্রভৃতি নিয়ে বহুমুখী স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে; যেমনটা গ্রামাঞ্চলে করা হয়েছে। বতর্মানে দেশে নগরাঞ্চলের ৮০ ভাগ স্বাস্থ্য স্থাপনা বেসরকারি উদ্যোক্তাদের হাতে। সেক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকে সরকারের পরিপূরক হিসেবে গড়ে তোলাও জরুরি। এজন্য এ স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে নির্দিষ্ট নীতিমালার মধ্যে আনা যেতে পারে।

প্রাথমিক স্বাস্থ্য যেকোনো দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। কোনো দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কতটা শক্তিশালী, তা তার প্রাথমিক স্বাস্থ্য অবকাঠামো ও সেবার মান দেখে বোঝা যায়। জার্মানি, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, স্পেন, জাপানসহ উন্নত রাষ্ট্রগুলো যার প্রমাণ। এত বছরেও দেশের নগরাঞ্চলে প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যে ঘাটতি রয়ে গেছে তা আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বড় কাঠামোগত দুর্বলতা। এটা দ্রুত কাটিয়ে ওঠা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকা আমাদের বড় দৃষ্টান্ত হতে পারে।

হুমায়ুন কবির: সাংবাদিক

সর্বশেষ - বাংলাদেশ

আপনার জন্য নির্বাচিত

আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে র্যালী, আলোচনা সভা ও মহড়া অনুষ্ঠিত

ঢাকা জেলার শ্রেষ্ঠ ট্রাফিক অফিসার এফ,এম,মুনজুর আলম

রাশিয়ার মন্তব্য বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক’

সেলাই মেশিন পেলেন যৌনকর্মীরা

ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেন ডিএফও,, ইসলামপুর বন্য হাতির আতঙ্কে ঘুম নেই এলাকাবাসী।

কাঁচা মরিচের বিশেষ অজানা কিছু গুন্!

গোপালগঞ্জ মেয়র শেখ রকিবের সরকারি শিশু পরিবারে পোষাক বিতরণ

প্রেমের সম্পর্কে ইতি টানতে চাইছেন? জেনে নিন কী করবেন

দুই বছরে অর্ধেকে নেমেছে রিজার্ভ, প্রতি মাসে কমে ১ বিলিয়ন ডলার

রাজস্থলী প্রেসক্লাবের সভাপতি সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত।