
স্বাধীন নিউজ ডেস্ক
সেচের পানির সংকটে বরেন্দ্র অঞ্চলের চাষাবাদ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় ভূ-উপরিস্থ পানি অনেক আগেই হারিয়েছে। এখন গভীর নলকূপ বসিয়ে পানি তোলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও অনেক নিচে নেমে গেছে, ফলে সেচের পানির সংকট দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ স্থাপন বন্ধ করলেও ব্যক্তি পর্যায়ে থেমে নেই কার্যক্রম। গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৮৫ সাল থেকে বিএমডিএ বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার শুরু করে। এখন বরেন্দ্র এলাকায় বিএমডিএর ১৫ হাজারেরও বেশি গভীর নলকূপ চালু রয়েছে। সরকার নীতিগতভাবে কৃষিকাজের জন্য আর ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারপর থেকে বিএমডিএ নতুন করে আর নলকূপ বসাচ্ছে না। কিন্তু ব্যক্তিমালিকানায় গভীর নলকূপ এখনো বসানো হচ্ছে। এজন্য উপজেলা সেচ কমিটির অনুমতি নেয়ার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এমনকি নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই ২৫০ থেকে ৩০০ ফুট দূরত্বের মধ্যেই গভীর নলকূপ বসানো হচ্ছে, যা খুবই উদ্বেগজনক। সরকার উদ্যোগ নিয়েছে কিন্তু সফল হয়নি। এর সঙ্গে রাজনৈতিক প্রভাব জড়িত বলে খবর মিলছে। ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত গভীর সেচ পাম্পগুলো দ্রুতই নজরদারির আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি নীতিমালা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরেন্দ্রের নথিপত্রে দেখা যায়, ১৯৮০ সালে বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির স্তর ছিল ৪০ ফুট নিচে। আর ২০১৬ সালে ১১৮ ফুট নিচে নেমে যায়। এখন কোথাও কোথাও ১৬০-১৭০ ফুট নিচেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। পানি সংকটের কারণে আগে বরেন্দ্র অঞ্চলে আবাদ বলতে ছিল বৃষ্টিনির্ভর ফসল। বিস্তীর্ণ এলাকা ছিল অনাবাদি। ১৯৮৫-৮৬ সালে অনাবাদি এসব জমিকে সবুজে ভরিয়ে তোলার জন্য গভীর নলকূপ বসানো শুরু করে বিএমডিএ। অনাবাদি রুক্ষ জমি সবুজে ভরে ওঠে। তিন-চার ফসল উপহার দিতে থাকে। কৃষকের কাছে আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেয়। শুরুতে ২৫ থানা নিয়ে কার্যক্রম শুরু হলেও এর সুফল দেখে পুরো উত্তরাঞ্চল চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত ১৬ জেলা নিয়ে শুরু হয় বিশাল কর্মকাণ্ড। দেশের খাদ্যভাণ্ডারে যোগ হয় বিপুল পরিমাণ নানামুখী ফসল। বিশেষ করে ধান আবাদের প্রয়োজনে প্রকল্প বিস্তার লাভ করে উত্তরের ১৬ জেলায়। শুধু সেচ নয়, অন্য কর্মকাণ্ড যুক্ত হয় প্রকল্পে। বরেন্দ্রে সবুজতা, খাদ্য চলাচল রাস্তা, খাবার পানি সরবরাহসহ নানা প্রকল্প নিয়ে সমন্বিত বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রকল্প কাজ শুরু হয়। উত্তরের জেলাগুলোয় ১৮ হাজারের মতো গভীর নলকূপ দিয়ে সেচ ব্যবহার গড়ে ওঠে। শুধু বরেন্দ্র প্রকল্প নয়, ব্যক্তিমালিকানায় পাম্প বসিয়ে শুরু হয় পানি তোলা। এমনকি সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে চলে নিচ থেকে পানি তোলা। ক্রমাগত পানি তোলা আর পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে রিচার্জ না হওয়ায় পানির স্তর ক্রমে নিচে নামতে থাকে।
এমন পরিস্থিতিতে ২০১২ সালের জুন থেকে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বরেন্দ্র অঞ্চলে নতুন করে গভীর নলকূপ বসানো বন্ধ করে দেয়। তার পরও এখনো প্রকল্প এলাকায় ১৫ হাজারেরও বেশি গভীর নলকূপ দিয়ে সেচ ব্যবস্থাপনা চলছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ব্যক্তি খাতে স্থাপন করা গভীর নলকূপ। যথেচ্ছ ব্যবহারে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ কৃষি উৎপাদনের জন্য হুমকিস্বরূপ।
বরেন্দ্র অঞ্চলকে বাঁচাতে হলে পানির কোনো বিকল্প নেই। এজন্য প্রথমেই ভূগর্ভস্থ পানি সেচকাজে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে পুকুর-খাড়ি বেশি করে খনন করতে হবে। বাসাবাড়ির ছাদের পানি মাটির নিচে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এক কথায় বৃষ্টির পানি বেশি বেশি রিচার্জ করতে হবে। এজন্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। ভূগর্ভস্থ ও ভূ-উপরিস্থ পানিসম্পদের মানচিত্র তৈরি জরুরি। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে পানির প্রাপ্যতা এবং পর্যাপ্ততা পরিমাপ করতে হবে। এতে পানি কতটুকু ব্যবহার করা যাবে তা জানা সম্ভব হবে। পাশাপাশি এ অঞ্চলে পানির চাহিদা ও ভূগর্ভস্থ পানি কতটুকু তোলা যাবে সেটাও নির্ধারণ করতে হবে। পানি সংকটাপন্ন এলাকা চিহ্নিত করাও প্রয়োজন। সর্বোপরি বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী তদারকি কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। সংকট মোকাবেলায় ২০১৩ সালে একটি পানিনীতি তৈরি করা হয়। যেখানে ভূগর্ভের পানি ব্যবহারে ১২টি অগ্রাধিকারের কথা বলা হয়েছে। এতে খাওয়া ও গৃহস্থালি প্রয়োজন মেটানোর পর কৃষির জন্য পানি ব্যবহারের কথা
বলা হয়েছে। সেচের জন্য ভূ-উপরিস্থ ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভূগর্ভের পানি ব্যবহার করতে হবে। পানির ব্যবহার কম হয়, এমন ফসলের দিকে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা ও প্রণোদনা দেয়া উচিত। বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির মজুদ কেমন আছে, তা নির্ণয় করে পানিনীতি অনুসরণ করা প্রয়োজন।
দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্যচাহিদা পূরণসহ খাদ্যনিরাপত্তার লক্ষ্যে বরেন্দ্র অঞ্চলসহ সারা দেশেই প্রাপ্যতার ভিত্তিতে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের দ্বারা সেচ কার্যক্রম বিশেষ করে বোরো ধান উৎপাদনে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, ফলে ধানের চাহিদা মেটাতে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। কিন্তু ভূগর্ভস্থ পানি সেচের জন্য ব্যবহারের পাশাপাশি পানি উত্তোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি—যেমন বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, ভূগর্ভস্থ পানি পুনর্ভরাট ও উত্তোলন বিষয়ে তথ্য এবং ভূ-উপরিস্থ পানির উৎস (নদী, বিল, পুকুর, ইত্যাদি) দ্বারা ভূগর্ভস্থ পানি পুনর্ভরাটের মাত্রা সম্পর্কে তথ্য থাকা প্রয়োজন যা করা হচ্ছে না। তথ্য সংগৃহীত হলেও পানি প্রাপ্তির সঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের বিষয়ে সামঞ্জস্য রাখা হচ্ছে না। একসময়ের প্রমত্তা পদ্মা আশীর্বাদ হলেও ফারাক্কার কারণে মরে যাওয়ায় তা এখন অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পদ্মা মরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শাখা নদী, খাল, বিল, দীঘিও মরে গিয়েছে। ফলে পানির জন্য হাহাকার চলে বছরের সিংহভাগ সময়জুড়ে। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আবহাওয়া রুক্ষ থেকে রুক্ষতর হচ্ছে। নির্বিচারে নিচে থেকে পানি তোলা হলেও তা রিচার্জ হচ্ছে খুব কম। কমে গেছে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। দেশের গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আড়াই হাজার মিলিমিটার হলেও এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১ হাজার ৩০০ মিলিমিটারের কম।
পানি রিচার্জ না হওয়া আর নির্বিচারে পানি তোলার কারণে প্রতি বছর পানির স্তর নামছে। বৃষ্টিপাতে ভূগর্ভস্থ পানির গড় পুর্নর্ভরণের হার দেশে ২৫ শতাংশ হলেও বরেন্দ্র অঞ্চলে এ হার মাত্র ৮ শতাংশ। বরেন্দ্রের উঁচু এলাকায় পানির সংকট প্রকট। এমন পরিস্থিতিতেও অনেকে নীতিমালা ভঙ্গ করে গভীর নলকূপ বসিয়ে নিজের ইচ্ছামতো পানি তুলছে। তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। যেখানে বিএমডিএর পাম্প আছে, সেখানে ব্যক্তি খাতে স্থাপিত পাম্প বন্ধ করতে হবে। ব্যক্তি খাতে কী পরিমাণ পানি তোলা যাবে তারও সীমা নির্ধারণ ও তদারকি জোরদার করতে হবে। একই সঙ্গে বিএমডিএর জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি।
বরেন্দ্র অঞ্চলে আশির দশক থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পানি ব্যবস্থাপনাবিষয়ক বিভিন্ন উন্নয়ন পদ্ধতি প্রয়োগ এবং উপকরণের ব্যবহারে এসেছে আমূল পরিবর্তন। সংগত কারণেই কলস, বালতি, জগ, মগ, টিউবওয়েল, কূপ-কুয়া, পুকুরের পরিবর্তে ব্যবহার হচ্ছে পানি উত্তোলনে মোটর, ট্যাংক, শাওয়ার, ট্যাব, বেসিন, কৃত্রিম ঝরনা প্রভৃতি। প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষিত সমীক্ষায় দেখা যায়, এসব উপকরণের সঠিক ব্যবহার না করার ফলে পানি ব্যবহারের সময় অপচয় হচ্ছে অপ্রত্যাশিত। প্রয়োজনের তুলনায় কখনো কখনো ১০০ শতাংশের বেশি পানি অপচয় হয়ে যাচ্ছে। পানির ব্যবহারে কৌশলী হলে প্রতিদিন বরেন্দ্র অঞ্চলে লাখ লাখ টন পানি সাশ্রয় হবে, যা ভবিষ্যতে বরেন্দ্রের প্রাণ ও প্রকৃতির সুরক্ষায় অবদান রাখবে। অন্যদিকে পানির সহজ প্রাপ্তির কারণে (সর্বত্র যন্ত্রের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন) প্রাকৃতিক জলাধারের উৎসগুলো এবং স্থানীয় প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষায় বর্তমান নানা পেশাসহ তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এসবের গুরুত্ব দিন দিন কমে যাচ্ছে।
পানি রিচার্জ না হওয়া আর নির্বিচারে পানি তোলার কারণে প্রতি বছর পানির স্তর নামছে। বৃষ্টিপাতে ভূগর্ভস্থ পানির গড় পুর্নর্ভরণের হার দেশে ২৫ শতাংশ হলেও বরেন্দ্র অঞ্চলে এ হার মাত্র ৮ শতাংশ। বরেন্দ্রের উঁচু এলাকায় পানির সংকট প্রকট। এমন পরিস্থিতিতেও অনেকে নীতিমালা ভঙ্গ করে গভীর নলকূপ বসিয়ে নিজের ইচ্ছামতো পানি তুলছে। তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। যেখানে বিএমডিএর পাম্প আছে, সেখানে ব্যক্তি খাতে স্থাপিত পাম্প বন্ধ করতে হবে। ব্যক্তি খাতে কী পরিমাণ পানি তোলা যাবে তারও সীমা নির্ধারণ ও তদারকি জোরদার করতে হবে। একই সঙ্গে বিএমডিএর জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি।
বরেন্দ্র অঞ্চলে আশির দশক থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পানি ব্যবস্থাপনাবিষয়ক বিভিন্ন উন্নয়ন পদ্ধতি প্রয়োগ এবং উপকরণের ব্যবহারে এসেছে আমূল পরিবর্তন। সংগত কারণেই কলস, বালতি, জগ, মগ, টিউবওয়েল, কূপ-কুয়া, পুকুরের পরিবর্তে ব্যবহার হচ্ছে পানি উত্তোলনে মোটর, ট্যাংক, শাওয়ার, ট্যাব, বেসিন, কৃত্রিম ঝরনা প্রভৃতি। প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষিত সমীক্ষায় দেখা যায়, এসব উপকরণের সঠিক ব্যবহার না করার ফলে পানি ব্যবহারের সময় অপচয় হচ্ছে অপ্রত্যাশিত। প্রয়োজনের তুলনায় কখনো কখনো ১০০ শতাংশের বেশি পানি অপচয় হয়ে যাচ্ছে। পানির ব্যবহারে কৌশলী হলে প্রতিদিন বরেন্দ্র অঞ্চলে লাখ লাখ টন পানি সাশ্রয় হবে, যা ভবিষ্যতে বরেন্দ্রের প্রাণ ও প্রকৃতির সুরক্ষায় অবদান রাখবে। অন্যদিকে পানির সহজ প্রাপ্তির কারণে (সর্বত্র যন্ত্রের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন) প্রাকৃতিক জলাধারের উৎসগুলো এবং স্থানীয় প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষায় বর্তমান নানা পেশাসহ তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এসবের গুরুত্ব দিন দিন কমে যাচ্ছে।