বন্যার ক্ষত শুকানোর আগেই টানা তাপপ্রবাহে পুড়ছে সিলেট

নিজস্ব প্রতিবেদক | সিলেট |

স্মরণকালের বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার তীব্র তাপপ্রবাহে নাকাল সিলেটের মানুষ। দিনভর সূর্যের আগুন যেন মাটিতে গলে গলে পড়ছে। রাতেও নেই স্বস্তি। আষাঢ়ের শেষে এমন আগুনঝরা রোদ দুর্বিষহ করে তুলেছে সিলেটের জনজীবন।

শুক্রবার (১৫ জুলাই) ছিল বৃষ্টির ঋতু আষাঢ়ের শেষ দিন। সিলেটে এদিন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন ছিল ২৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এর আগের দিন বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) ৬৭ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে তাপপ্রবাহ। বৃহস্পতিবার সিলেটের তাপমাত্রা ছিল ৩৮.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ঈদের দিন থেকেই সিলেটে বইছে তাপপ্রবাহ। প্রতিবছর বর্ষা ও ঈদের এই মৌসুমে সিলেটের বিনোদন কেন্দ্রে দর্শণার্থীদের উপচেপড়া ভিড় থাকলেও প্রকৃতির বিরূপ আচরণে এবার চিত্র ছিল ভিন্ন। বৃষ্টি নেই, বাতাস নেই। তবে ছিল লোডশেডিং।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঈদের দিন সিলেটে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর সোমবার (১১ জুলাই) থেকে সিলেটে ক্রমশ তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। সোমবার সিলেটে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার (১২ জুলাই) তাপমাত্রা ৩৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

বুধবারের (১৩ জুলাই) তাপমাত্রাও ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সিলেট নগরের সুবিদবাজার এলাকার চাইনিজ রেঁস্তোরা চিনামনের মালিক সোহাগ আহমদ বলেন, একদিকে রোদের তীব্রতা বাড়ছে, অন্যদিকে লোডশেডিং। ঘরে-বাইরে কোথাও শান্তিতে থাকার সুযোগ নেই। গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোডশেডিংও বেড়েছে।

শামীমাবাদ এলাকার রিকশাচালক রমজান আলী জাগো নিউজকে বলেন, জুনের মাঝামাঝিতে শুরু হওয়া বন্যায় বাসাবাড়ি ভাসিয়ে নিলো। কাজকর্ম না থাকায় জীবন হয়ে উঠেছিলো দুর্বিষহ। এমন দুরূহ পরিস্থিতি মোকাবিলার পর এখন প্রচণ্ড গরম। রোদের তীব্রতার কারণে রিকশা চালানো যাচ্ছে না।

রিকাবীবাজার মোড় এলাকার চা-বিক্রেতা আব্দুল জব্বার বলেন, প্রচণ্ড গরমে কেউ চা-খেতে আসে না। কাস্টমার একেবারে নেই। গরম পড়লে চা কম বিক্রি হয়।

তবে শুক্রবার কাঠ ফাটা রোদের পর কিছুটা স্বস্তির কথা জানিয়েয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী।

তিনি জানান, তীব্র গরমের পর অবশেষে সিলেটে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আজ থেকে তাপপ্রবাহ কমতে শুরু করেছে। রাতে স্বস্তির বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শুক্রবার রাত এবং শনিবার রাতে হাল্কা ও মাঝারি বৃষ্টিপাতের হতে পারে। তবে রোববার থেকে ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানান, ৬৭ বছর আগের পর্যন্ত রেকর্ড সংরক্ষিত রয়েছে। এই সময়ে সিলেটে জুলাই মাসে কখনো ৩৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা আমরা খুঁজে পাইনি।

তিনি জানান, জুলাই মাসে এ রেকর্ড সর্বোচ্চ। যা বিগত ৬৭ বছরেও হয়নি। এর আগে ২০১৮ সালে জুলাই মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। আর ২০০৩ সালের জুলাই মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এই ওয়েবসাইটের সকল লেখার দায়ভার লেখকের নিজের, স্বাধীন নিউজ কতৃপক্ষ প্রকাশিত লেখার দায়ভার বহন করে না।
এই বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -

সর্বাধিক পঠিত

- Advertisment -