বিদ্যুৎ নিয়ে যন্ত্রণা সহ্য করবে না জনগণ: রিজভী

0
163

মেরিনা মিতু, ঢাকা

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির

‘প্রধানমন্ত্রীর সব কথা দ্বিচারিতামূলক। তিনি নাকি বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করেছেন। তাহলে লোডশেডিং কেন? …আপনি উন্নয়নের নামে দুর্নীতি করে যে টাকা পাচার করেছেন তার কুফল মানুষ এখন ভোগ করছে। বিদ্যুৎ খাতে জনগণের ভর্তুকির টাকা হরিলুট করা হয়েছে। বিদেশে পাচার করা হয়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাসে নয়ছয় হয়েছে। তারা বিদ্যুৎ উৎপাদনে নজর দেয়নি।’
কোথায় আপনার বিদ্যুৎ? আপনাকে দেশবাসী আর সহ্য করবে না- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে এই বক্তব্য রেখেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বিএনপি নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সব কথা দ্বিচারিতামূলক। তিনি নাকি বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করেছেন। তাহলে লোডশেডিং কেন?’

বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন রিজভী।

চলতি মাসের শুরু থেকে দেশে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির অবনতির পর পরই সরকারকে আক্রমণ করছে বিএনপি। তাদের দাবি, সরকার গত এক যুগে বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে গর্ব করলেও আসলে এই খাতে কোনো উন্নয়ন হয়নি।

অন্যদিকে দলটির সর্বশেষ শাসনামলে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিদ্যুতের করুণ চিত্র তুলে ধরে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির লজ্জা থাকলে লোডশেডিং নিয়ে কথা বলত না।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর বিদ্যুৎ খাতকে অগ্রাধিকার নিয়ে কাজ করেছে। এই সময়ে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি নানা প্রকল্পের সুফলও পেয়েছে দেশ। এক যুগে বিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা ছয় গুণের বেশি বেড়েছে, উৎপাদনও বেড়েছে চার গুণের বেশি। বিদ্যুতের আরও কয়েকটি বড় প্রকল্প উৎপাদনে আসার অপেক্ষায়।

বিদ্যুৎ খাত নিয়ে বরাবর গর্ব করে থাকেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে গত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির পর দেশে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সমস্যা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সরকারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে তরল গ্যাস বা এলএনজি আপাতত আমদানি করা হবে না। গ্যাসের ঘাটতিজনিত উৎপাদনের যে সংকট সেটি সমাধান করা হবে লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে। দেশে এখন দুই হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি আছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ গত কয়েক বছরে লোডশেডিং শব্দটা ব্যবহার করত না। তারাই এখন লোডশেডিংয়ের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে। দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আর না কেনার কথা জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এ জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হবে জানিয়ে তিনি দুঃখও প্রকাশ করেছেন।

বিদ্যুতের চাহিদা কমাতে সরকার রাত ৮টায় বিপণিবিতান বন্ধের পাশাপাশি অফিস সময় পুনর্নির্ধারণ করে সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত করার চিন্তা করছে।

রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সব কথা দ্বিচারিতামূলক। তিনি নাকি বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করেছেন। তাহলে লোডশেডিং কেন? …আপনি উন্নয়নের নামে দুর্নীতি করে যে টাকা পাচার করেছেন তার কুফল মানুষ এখন ভোগ করছে। বিদ্যুৎ খাতে জনগণের ভর্তুকির টাকা হরিলুট করা হয়েছে। বিদেশে পাচার করা হয়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাসে নয়ছয় হয়েছে। তারা বিদ্যুৎ উৎপাদনে নজর দেয়নি।

‘নিজের আত্মীয়স্বজনের দিয়ে কুইক রেন্টালের সুযোগ দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করছেন বিদ্যুৎ খাত থেকে। লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে।’

বিএনপি নেতা বলেন, ‘উন্নয়নের নামে হইচই করে এত লাফালাফি করলেন, কোথায় আপনার বিদ্যুৎ? আপনাকে দেশবাসী আর সহ্য করবে না।
আপনি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করে চলেছেন। কোথায় ১০ টাকার চাল? কোথায় ঘরে ঘরে চাকরি? আজকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বেশি বেকার তথা কর্মহীন লোকের সংখ্যা বাংলাদেশে। আপনি ক্ষমতায় থাকা মানে মানুষ না খেয়ে থাকা। আপনি ক্ষমতায় থাকা মানে কর্মহীন থাকা। আজকে গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে লিখতে ও বলতে পারে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে বিভিন্ন কালাকানুন করেছে সরকার।’

ঈদে মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার বলেও অভিযোগ করেন রিজভী। বলেন, ‘মাফিয়া আওয়ামী লীগের লোকেরা সিন্ডিকেট করে দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ ভাড়া আদায় করছে। আজকে সিন্ডিকেট এমনভাবে চেপে বসেছে মানুষ মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না। কোরবানির হাটেও সিন্ডিকেট করছে আওয়ামী লীগের লোকজন। সরকারদলীয় লোকেরা ইচ্ছামতো দাম বৃদ্ধি করে ক্রেতাদের পশু কিনতে বাধ্য করছে।

‘দেশের মানুষ ঈদের প্রাক্কালে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে হাপিত্যেশ করছে। সরকার জনগণের সঙ্গে তামাশা করছে। মানুষ বন্যার পানিতে ভাসছে, তাদের দিকে সরকারের কোনো দায়িত্ববোধ নেই। তারা পদ্মা সেতুর জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত।’

পদ্মা সেতুতে প্রধানমন্ত্রীর ছবি তোলা নিয়ে প্রশ্ন

পদ্মা সেতুতে দাঁড়ানো ও ছবি তোলা নিষিদ্ধের আদেশ জারির পরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ছবি তোলা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন রিজভী।

তিনি বলেন, ‘দেশ চলছে মাফিয়া শাসনের অধীনে। এখানে আইনের কোনো বালাই নেই। হবু চন্দ্র রাজার গবু চন্দ্র মন্ত্রীরা যা খুশি বলছে এবং করছে।’

গত ৪ জুলাই পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে সড়কপথে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যান প্রধানমন্ত্রী। যাওয়ার পথে তারা সেতুতে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন।

তবে ২৫ জুন সেতু চালুর আগে সেতু কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে সেতুতে দাঁড়ানো বা ছবি তোলা যাবে না বলে জানায়।

রিজভী বলেন, ‘উদ্বোধনের পর পদ্মা সেতুর ওপর নেমে ছবি তোলা যাবে না। ছবি তোলায় কয়েকজনকে জরিমানাও করা হয়েছে। অথচ কদিন আগে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে নিজের ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে সেলফি তুলেছেন। আসলে এক দেশে দুই আইন চলছে।’

‘দেশে নির্বাচিত সরকার থাকলে তারা আইন মানত। তারা তো অনির্বাচিত। সে জন্য যখন যা চায় তারা তাই করছে।’
আলোচনা সভা শেষে অর্পণ সংঘের উদ্যোগে যুবদলের প্রয়াত নেতা জি এস বাবুলের স্ত্রীর হাতে অর্থসহায়তা তুলে দেন রিজভী।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, সহপ্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, জাহেদুল কবির, স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য ও অর্পণ সংঘের বীথিকা বিনতে হোসাইন, ওমর ফারুক কাওসার ও আরিফুর রহমান তুষার।