জেলা প্রতিনিধি | সিরাজগঞ্জ |
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার পাটধারী গ্রামের দরিদ্র খলিলুর রহমানের ছেলে অদম্য মেধাবী শাহিনুর রহমান। এবারের মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। তবে দরিদ্রতার কারণে মেডিকেলে ভর্তি হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
শাহিনুরের সাফল্যে বাবা-মা ও এলাকাবাসী খুশি হলেও বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ। কোথায় পাবেন অর্থ, কে দেবেন অর্থের জোগান? এ শঙ্কায় দিন কাটছে তার।
উল্লাপাড়া উপজেলার পাটধারী গ্রামের কৃষক খলিলুর রহমানের ছেলে শাহিনুর রহমান। এক ভাই ও দুই বোনের মধ্যে মেজো তিনি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি শাহিনুরের বাবা। সম্পত্তি বলতে বাড়ি ছাড়া কিছুই নেই তাদের।
উল্লাপাড়া উপজেলার পাটধারী গ্রামের শাহিনুর রহমান স্থানীয় পাগলা বোয়ালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর উল্লাপাড়া সরকারি আকবর আলী কলেজ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। এ বছর মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছেন তিনি। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ বাবার স্বপ্ন পূরণে প্রথম ধাপ অতিক্রম করলেও মেডিকেল কলেজে ভর্তি ও লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। এত খরচ চালাবেন কীভাবে তা নিয়ে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।
বাবা খলিলুর রহমানের সঙ্গ দিনমজুরের কাজ করে এবং প্রাইভেট পড়িয়ে লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করতে হতো শাহিনুর। শিক্ষাজীবন জুড়েই আর্থিক দুশ্চিন্তা ছিল তার। মেধার জোরে সব বাঁধাকে জয় করে মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়ে আবারও সেই আর্থিক দুশ্চিন্তা ঘিরে রেখেছে তাকে।
শাহিনুর রহমান বলেন, ‘বাবার স্বপ্ন আর মায়ের অনুপ্রেরণা আজকের এ সাফল্য। অভাবকে পেছনে ফেলে স্বপ্ন পূরণ করতে আমি পড়াশোনা করেছি। এতে আমার পরিবার দিনরাত সহায়তা করেছে। তবে অর্থের অভাবেই মনে হচ্ছে আমার আর স্বপ্ন পূরণ হবে না। ভর্তি হয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে অনেক টাকার দরকার। সেই টাকা দেয়া আমার পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়। সবকিছু মিলিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে দিন কাটছে আমার ও পরিবারের।’
শাহিনুর রহমানের বাবা কৃষক খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমি একজন দিনমজুর কৃষক। কাজ পেলে ভাত জোটে। কাজ না পেলে পরিবার নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করতে হয়। তবুও বহু কষ্টে আমি আমার ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছি। আমার ব্যক্তিগত কোনো জমি নেই। এখন আমার ছেলের স্বপ্ন পূরণের বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে টাকা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলে ছোটবেলা থেকেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছে। তার জন্য দেশের বিত্তশালীসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সহযোগিতা চাই। আমার বিশ্বাস কারও সহযোগিতা পেলে আমার ছেলে চিকিৎসক হয়ে দেশের মানুষের সেবা করতে পারবে ইনশাআল্লাহ।’
এ বিষয়ে হাটিকুমরুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেদায়েতুল আলম রেজা বলেন, ‘শাহিনুর আমার ইউনিয়নের গর্ব। কিন্তু টাকার অভাবে এখন ভর্তি অনিশ্চিত। এটা খুবই দুঃখজনক। উপজেলা পরিষদ ও ব্যক্তিগতভাবেও তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। পাশাপাশি বিত্তবান মানুষের কাছে আমি আহ্বান জানাই শাহিনুর রহমানকে সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য। যাতে শাহিনুর ভর্তির সুযোগ পায়।’