আকতারুজ্জামান, মেহেরপুর
মেহেরপুরে অশনির প্রভাবে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কাটা-মাড়াইয়ের সমস্যা হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বোরো চাষিদের। এতে চরম হতাশ হয়ে পড়েছেন জেলার কৃষকরা। একদিকে শ্রমিকসঙ্কট, অন্যদিকে বৈরী আবহাওয়া যেন কৃষকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খেতে কাটা ধান বৃষ্টির পানিতে ভাসছে। ধানের ফলন ও দাম ভালো হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। জমিতে কেটে রাখা ধান ঘরে তোলা নিয়ে নাজেহাল অবস্থা কৃষকদের।
বৃষ্টির কারণে মাঠে কাদা-পানি হওয়ায় বেড়েছে শ্রমিকের কদর। সুযোগমতো শ্রমিকরাও তাদের মজুরি বাড়িয়ে দিয়েছে। তবুও মিলছেনা শ্রমিক। একইসঙ্গে বেড়েছে পরিবহন খরচ। পানিতে তলিয়ে যাওয়া ধান ভেলায় ভাসিয়ে আনতে হচ্ছে রাস্তায় বা উঁচু জমিতে। বোরো আবাদে কৃষকদের দেখা স্বপ্ন এখন যেন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
জেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, মেহেরপুরের তিন উপজেলায় এ বছর বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে মুজিবনগর উপজেলায় ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৩৩০ হেক্টর। চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে।
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮৫ হেক্টর জমিতে বেশি ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ ভাগ ধান কেটে বাড়িতে আনতে সক্ষম হয়েছেন কৃষকরা। বাকি ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ধান বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে আছে।
উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের বল্লভপুর গ্রামের চাষি রবিউল ইসলাম জানান, এ বছর আড়াই বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছেন। কষ্টার্জিত ফসল ঘরে তোলার আগেই বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে তার জমির কেটে রাখা পাকা ধান।
মদনাডাঙ্গা গ্রামের আরেক কৃষক বদরুল বলেন, আমার দেড় বিঘা জমির ধান পানিতে ভাসছে। এখনই কেটে না আনতে পারলে ধানে চারা গজিয়ে যাবে। দেড়গুণ খরচে শ্রমিক নিয়ে টিনের ভেলায় করে ধান রাস্তায় তুলতে হচ্ছে ধান। ধান ঘরে তুলতে না পারলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। তাই শ্রমিকদের সঙ্গে পরিবারের সবাই ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করছে।
মুজিবনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিছুজ্জামান খান বলেন, উপজেলায় এ বছর বোরো ধানের লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশি চাষ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছিল। বৃষ্টির কারণে যেসব ধান তলিয়ে গেছে সেসব ধানের আইল কেটে দ্রত পানি বের করে দেওয়া হচ্ছে।
গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন জানান, উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার থেকে অনেক বেশি বোরো চাষ হয়েছে। ৭৩৪০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এখন বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ের মৌসুম। এ সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দিলে কিছুই করার নেই। তবে এখন ইন্টারনেটের যুগ। আবহাওয়া দেখে ধান কাটা শুরু করতে হবে।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সামসুল আলম বলেন, বর্তমানে কৃষকরা বেশ সচেতন। প্রযুক্তির দিক দিয়েও মেহেরপুরের কৃষকরা পিছিয়ে নেই। অশনির আঘাতে অন্যান্য জেলার চেয়ে কম ক্ষতি হয়েছে মেহেপুরে। উঁচু জমিতে ধানের তেমন ক্ষতি না হলেও নিচু জমিতে চাষ করা বোরো নিয়ে কষ্টে পড়েছেন চাষিরা।
তিনি আরও বলেন, যারা সরকারি ভর্তুকি মূল্যে হার্ভেস্টার মেশিন নিয়েছেন তারা তাদের জেলার মধ্যে ব্যবহার করবেন এমন নির্দেশনা দিচ্ছি। শ্রমিক সংকট এড়িয়ে চাষিরা যাতে সময়মতো উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে পারেন সে জন্যই সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে।