Logo
বৃহস্পতিবার , ২৬ অক্টোবর ২০২৩ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আইন আদালত
  4. আঞ্চলিক খবর
  5. আন্তর্জাতিক
  6. আবহাওয়া
  7. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  8. উন্নয়ণ
  9. করোনা
  10. কৃষিবার্তা
  11. ক্যাম্পাস বার্তা
  12. খেলাধুলা
  13. খোলা কলাম
  14. গণমাধ্যম
  15. গল্প ও কবিতা

মোহাম্মদ এ আরাফাত-এর সাক্ষাৎকার শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই

প্রতিবেদক
admin
অক্টোবর ২৬, ২০২৩ ৭:১৮ অপরাহ্ণ

মোহাম্মদ এ আরাফাত

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সৌজন্য

মোহাম্মদ এ আরাফাত, এমপি

জাতীয় সংসদ সদস্য, গবেষক, সমাজচিন্তক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা শেষে দেশে ফিরে ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক এবং বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি প্রয়োগ, বিএনপির আন্দোলনসহ নানা বিষয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুসা।

স্বাধীন নিউজ : বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বেশ সরব। সুষ্ঠু নির্বাচন করার বিষয়ে তারা বাংলাদেশের ওপর চাপ তৈরি করার চেষ্টা করছে। সুষ্ঠু নির্বাচন কেন আয়োজন করা যায় না?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: ভূরাজনৈতিকভাবে দুর্বল রাষ্ট্রগুলোতে একধরনের দুর্বল সরকার রাখতে চায় আমেরিকা এবং তার মিত্র পশ্চিমারা। তারা এমন কাউকে সরকারে রাখতে চায় যাকে দিয়ে যা খুশি তাই করানো যাবে। ড. ইউনূস হলেন তাদের একটি হাতিয়ার। পশ্চিমাদের নীতি হচ্ছে তাদের পক্ষে থাকলে সব ঠিক আছে, তাদের বিপক্ষে গেলেই ঠিক নেই। বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন আমেরিকা এসে ঠিক করে দেবে, এমন ভাবনা ঠিক নয়। আমেরিকা কোনো দেশের গণতন্ত্র ঠিক করেছে, এমন কোনো নজির নেই। যে দল তাদের চিন্তা, আদর্শ এবং সংগ্রাম দিয়ে এ দেশকে স্বাধীন করল, যারা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য সারা জীবন ধরে লড়াই করল, যারা মানবাধিকার রক্ষার জন্য লড়াই করল তাদের এখন গণতন্ত্র শেখানো হচ্ছে!

স্বাধীন নিউজ : আমাদের দেশে গণতন্ত্রের দুর্বলতা কী নেই?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: পৃথিবীর সব দেশেই গণতন্ত্রের উন্নতির জায়গা রয়েছে। ঠিক তেমনি আমাদের ক্ষেত্রেও উন্নতি করার জায়গা রয়েছে। আমাদের দেশের সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেছে এটা কেউ দাবি করবে না। আমাদের ছোট একটি ভূখণ্ডে ১৬ কোটির বেশি মানুষ বসবাস করে। অল্প সম্পদ নিয়ে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশটিকে চালিয়ে নিয়ে যেতে হয়। সুতরাং সব জায়গায় আমাদের জন্য একধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেসব জায়গায় উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে আমরা সেসব জায়গায় উন্নতি করছি। আমরা যে উন্নতি করছি তার প্রমাণ হলো- গত ১৫ বছরে হিউম্যান রাইটস পারস্পেকটিভ, গণতন্ত্রের পারস্পেক্টিভ বা আইনের শাসনের পারস্পেক্টিভ ইত্যাদি ক্ষেত্রে আগের যে কোনো সময়ের থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো। অতীতের জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া সরকারের সময়ে যে হিউম্যান রাইটস রেকর্ড তার সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে এখন অনেক উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। এই উন্নতি অবশ্যই যথেষ্ট নয়। আরও উন্নতির জায়গা রয়েছে। এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি বাকস্বাধীনতা রয়েছে। ৫৩ বছরের কনটেক্সটে বাংলাদেশকে দেখলে দেখা যাবে যে কোনো ইস্যুতে বাংলাদেশের ইমপ্রুভমেন্ট হয়েছে। অবশ্যই আরও ইমপ্রুভমেন্টের সুযোগ রয়েছে, তবে আমরা অতীতের তুলনায় ভালো অবস্থানে রয়েছি।

স্বাধীন নিউজ : জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস বাকি আছে। বিরোধীদলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাচ্ছে না। এমন অবস্থায় নির্বাচনপূর্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন দেখছেন?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: বাংলাদেশে মূলত চারটি প্রধান রাজনৈতিক দল রয়েছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি এবং জামায়াত। এখানে আনফরচুনেট বিষয় হলো আওয়ামী লীগের বিপরীতে আরেকটি আওয়ামীলীগ নেই। যে চারটি প্রধান দল রয়েছে তার মধ্যে দুটির উৎপত্তি ক্যান্টনমেন্ট থেকে এবং আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী। বাকি দলগুলো বড় কোনো দল নয়। বাকি দলগুলোর মধ্যে যদি কোনটি দাঁড়াতে পারত, তাহলে ভালো হতো। আওয়ামী লীগের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে যদি আরেকটি অসাম্প্রদায়িক এবং সেকুলার দল দাঁড়াতে পারত তাহলে খুব ভালো হতো। কিন্তু এ রকম দল আমরা পাচ্ছি না। কাজেই ঘুরেফিরে এই চারটি দলই বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে রাজনীতি করছে। এই চারটি দলের মধ্যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনে আসতে পারে জাতীয় পার্টি। জামায়াতের নিবন্ধন নেই তাই তারা হয়তো বিএনপির সঙ্গে থাকতে পারে। এখন বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে তাহলে সবকিছু ঠিক থাকবে। আর বিএনপি নির্বাচনে না আসলে যেমন রয়েছে তেমনই থাকবে।

আমরা একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন চাই। তাই আমরা চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপিকে পরাজিত করে দেখাতে চাই যে আমরা এটা পারি। বিএনপি নির্বাচনে আসলে সেটা দলীয়ভাবেও আমাদের জন্য ভালো। বিরোধী দল নির্বাচনে আসলে আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে কাজ করার উৎসাহ তৈরি হবে। বিএনপি নির্বাচনে আসলে আমাদের জন্য আরো একটি ব্যাপার হবে, নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপিকে হারিয়ে দেশ পরিচালনায় গেলে কোনো প্রশ্ন থাকবে না। বিএনপি নির্বাচনে আসলে সবদিক থেকেই আমাদের জন্য ভালো। সুতরাং আমরা চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক। বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি আসবে না, সেই দ্বন্দ্বটা বিএনপির মধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। লন্ডনে অবস্থিত বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ব্যতীত বিএনপির বাকি সকল নেতৃত্ব নির্বাচনে আসতে চায়। কিন্তু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি চায় না তাদের দল নির্বাচনে আসুক। বিএনপি নিজেদের মধ্যে এই সমস্যাটা সমাধান করুক আগে।

স্বাধীন নিউজ : বিএনপি বলছে তারা ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে দেখেছে আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাহলে তারা আবারও আওয়ামী লীগের অধীনে কেন নির্বাচনে আসবে?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। সুতরাং আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠ নির্বাচন হয় কি না, সেটা দেখার মানসিকতাও তাদের ছিল না। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তারা পুরোটা সময় নির্বাচনে ছিল না। এই নির্বাচনে বিএনপির কোনো প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। কিন্তু তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। নির্বাচনকে বিতর্কিত দেখানোর জন্যই তারা ২০১৮ এর নির্বাচনে এসেছিল।

তারা যদি প্রকৃত অর্থে ২০১৮ সালের নির্বাচনে আসতো এবং সত্যিকার অর্থে তারা যদি সম্পূর্ণ ইফোর্ট দিত, যদি মনোনয়ন বাণিজ্য না করতো তাহলে একটি ভালো নির্বাচন হত। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আসার কোনো মানসিকতাই তাদের ছিল না। তারা ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দেয়নি। নির্বাচনে প্রচারণের জন্য পোস্টার ছাপায়নি, অনেকে পোস্টার ছাপলেও তা লাগায়নি। নির্বাচনের দিন দুপুর ১২:০০ টায় তারা নির্বাচন থেকে সরে যায়। সুতরাং ২০১৪ এবং ২০১৮ এর নির্বাচন নিয়ে কথা বলার পজিশনে বিএনপি নেই।

স্বাধীন নিউজ: আগামী ২০২৪ এর নির্বাচন কেমন হবে বলে আশা করছেন? আপনারা কি বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসার জন্য কোনো চেষ্টা করবেন?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আমরা প্রচণ্ডভাবে চাইব, বিএনপি নির্বাচনে আসুক। তবে তাদের আনার কোনো চেষ্টা আমরা করব না। তারা নিজেরা আসলে আসবে না। আমরা বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করতে যাব না। কারণ তাদের কোনো কিছুতে চেষ্টা করে লাভ হয় না। বিএনপিকে নির্বাচনের নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করতে গেলে তারা তারেক রহমানকে ছেড়ে দিতে বলবে, একুশে আগস্ট মামলা থেকে তাকে খালাসের দাবি জানাবে। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করতে পারে। কিন্তু এসব অসাংবিধানিক দাবি আমরা মেনে নিতে পারি না।

স্বাধীন নিউজ: বিএনপি আলটিমেটাম দিয়েছে। এই অবস্থায় ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন হবে?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: কোনো কিছুই হবে না। যতগুলো জরিপের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, তার সবই সরকারের পক্ষে কথা বলছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ, বন্ধুদেশ ভারত শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত বন্ধু। এর বাহিরে চীন এবং রাশিয়ার মতো শক্তিশালী দেশ শেখ হাসিনার পক্ষে রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব এবং কাতার শেখ হাসিনার সঙ্গে রয়েছে। ইউরোপের দেশগুলোর বেশিরভাগ শেখ হাসিনার সঙ্গে রয়েছে। ফ্রান্স বাংলাদেশের বিশ্বস্ত একটি বন্ধু। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট শেখ হাসিনার বিশাল ভক্ত। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। দেশের বাইরে শেখ হাসিনার এত সমর্থন রয়েছে তাহলে বাংলাদেশকে তারা কীভাবে আটকাবে!

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী, সিভিল, সামরিক প্রশাসনের সবাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল। এদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল।

আমি অস্বীকার করব না, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে একধরনের ডিস্যাটিসফেকশনের জায়গা রয়েছে। কিন্তু মানুষ এটাও বোঝে যে, আমরা একটি সংকটময় সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। করোনার মতো একটি প্যান্ডেমিক গেল, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের একটি বড় প্রভাব রয়েছে। সুতরাং মানুষের মধ্যে ডিস্যাটিসফেকশনের একটি জায়গা থাকলেও মানুষ শেখ হাসিনার প্রতি এই বিষয়ে আস্থাশীল যে, বর্তমান অবস্থা থেকে দেশকে যদি কেউ বের করে আনতে পারেন তিনি শেখ হাসিনা। সুতরাং শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। ফলে একজন বোকাও এই চিন্তা করবে না যে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটিয়ে অন্য কাউকে ক্ষমতায় আনবে।

স্বাধীন নিউজ : সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের জন্য বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ইস্যু তৈরি হয়েছে। এর একটি হলো, ব্রিকসের সদস্যপদ না পাওয়া। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, বাংলাদেশ ব্রিকস-এর সদস্য হতে চায়। কিন্তু সদস্যপদ পেলাম না। বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: বাংলাদেশের ব্রিকসের সদস্যপদ পাওয়া বিষয়ে একধরনের অপ্রয়োজনীয় হাইপ তৈরি করা হয়েছে। দেড় মাস আগে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আইএলওর সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ব্রিকসের বর্তমান চেয়ারম্যান (দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট) বাংলাদেশকে ব্রিকস এর সদস্য হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও সে সময় আগ্রহ প্রকাশ করেন।

এরপর প্রধানমন্ত্রী দেশে আসলে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কিছু চিঠি আদান প্রদান করা হয় ব্রিকসের সদস্য পদ পাওয়ার বিষয়ে। সেখানে এমন কোনো আলাপ হয়নি যে, আগামী ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনেই আমাদের সদস্যপদ দিতে হবে। এমনকি আমরা নিজ থেকে ব্রিকসের সদস্য পদ পাওয়ার জন্য আবেদনও করিনি। সুতরাং আমরা ব্রিকসের সদস্যপদ পাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক হলেও এবারই আমরা সেই সদস্যপদ পাব এমন কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। ব্রিকস অনেক বড় একটি প্ল্যাটফর্ম। এক/দেড় মাস আগে কথা হলো আর আমরা সদস্যপদ পেয়ে গেলাম বিষয়টা এ রকম নয়। এটা অবশ্যই সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

এক-দেড় মাসের মধ্যে আমাদের ব্রিকস-এর সদস্যপদ পেতেই হবে বিষয়টা এমন নয়। সুতরাং এটা নিয়ে এ রকম হাইপ তৈরি করার কিছু নেই। যারা ব্রিকসের সদস্য হয়েছে তারা সবাই একটা দীর্ঘ কমিউনিকেশনের পরেই সদস্যপদ পেয়েছে। আমরাও হয়তো হব- ছয় মাস, আট মাস বা এক বছর পর।

স্বাধীন নিউজ : এখনই আমরা ব্রিকসের সদস্যপদ চেয়েছিলাম কেন?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: ব্রিকসের চেয়ারম্যান দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট নিজেই যখন বাংলাদেশকে ব্রিকসের সদস্য হতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তখন আমরা সেটাকে একটা সুযোগ হিসেবে দেখেছি। কিন্তু আমরা ব্রিকসের এবারের শীর্ষ সম্মেলনেই সদস্যপদ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছি বিষয়টা একেবারেই ঠিক নয়। বরং এর বর্ণনায় ভুল রয়েছে। তারাও আগ্রহ দেখিয়েছেন এবং আমরাও আগ্রহ দেখিয়েছি। বিষয়টা খুবই সাধারণ একটি বিষয়।

স্বাধীন নিউজ : মার্কিন ভিসানীতির কারণেই কী সরকার ব্রিকসে যোগদান করতে চেয়েছিল?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: বিষয়টা একেবারেই এ রকম নয়। ব্রিকসের প্ল্যাটফর্মটিকে আমরা সবসময়ই সমর্থন জানিয়েছি। ব্রিকস কোয়াডের মতো কোনো সামরিক জোটও নয়। এটা একটি অর্থনৈতিক জোট। অর্থনৈতিক জোট বলেই একধরনের বৈরী সম্পর্ক থাকার পরেও ভারত এবং চীন উভয়েই এই জোটের অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতিও এ রকমই। যে প্ল্যাটফর্মগুলোর পক্ষে কাউকে গোষ্ঠীভুক্ত করে না আমরা সেসব প্ল্যাটফর্মগুলোকে সাপোর্ট করি, যারা উদারনীতিতে চলে। একই সঙ্গে আমরা এই প্লাটফর্মগুলোকে স্বাগত জানাই এবং নিজেরাও সেখানে থাকতে চাই। কিন্তু এই বিষয়টাকে যখন প্রচার করা হয় তখন বাংলাদেশের জন্য আমেরিকার ভিসানীতি ঘোষণার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়। এই ভিসানীতি ঘোষণার পরপরই বাংলাদেশের ব্রিকসে যোগদানের বিষয়টি সামনে আসায় সেটাকে ভিন্ন অর্থ দিয়েছে। কোনোটির সঙ্গে কোনোটির সম্পর্ক নেই।

ব্রিকসের প্রতি বাংলাদেশের এক ধরনের প্রচ্ছন্ন সমর্থন সবসময়ই ছিল। ২০২১ সালে ব্রিকসের অধীনে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকের সদস্য আমরা। আমরা দেখেছি, ভূরাজনৈতিক মেরুকরণে বিশ্বের মোড়লরা নিজেদের স্বার্থে কখনো কখনো অন্যদের ওপরে নানা ধরনের প্রেসার তৈরি করে। ব্রিকসের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে সকলেই থাকার ফলে সেই চাপ সহজে নিষ্ক্রিয় করা যায়। বঙ্গবন্ধু নিজেও জোট নিরপেক্ষ মুভমেন্টের সমর্থক ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীও সেই ধরনের অবস্থান পছন্দ করেন। তিনি ভূরাজনৈতিক মোড়লগিরি পছন্দ করেন না। যে প্ল্যাটফর্ম বা জোটগুলো অনেক বেশি নিরপেক্ষ, যেগুলো এককভাবে কারো স্বার্থ দেখে না, যেগুলো সকল দেশের জন্য এক ধরনের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তৈরি করে, মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের সম্ভাবনা তৈরি করে সেই ধরনের উদ্যোগ বা প্লাটফর্মের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী সব সময় আগ্রহী থাকেন। ব্রিকস সে রকমই একটি প্ল্যাটফর্ম।

স্বাধীন নিউজ : ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রমের বিষয়ে ১৭৪ জন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব চিঠি লিখেছেন। হঠাৎ করে ইস্যুটি সামনে এসেছে। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: বিষয়টা হঠাৎ করেই হয়েছে তা নয়। আমরা জানতাম এ রকম কিছু সামনে আসবে। ড. ইউনুস কিছু বিষয়ে অন্যায় করেছেন। তার কাছে এখন কি বিকল্প রয়েছে? ড. ইউনূস যেহেতু এখনো দোষী প্রমাণিত হননি। সুতরাং তিনি নির্দোষ ধরেই আমাদের এগোতে হবে। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলাগুলো শ্রমিক আদালতে বিচারাধীন। কিন্তু মামলাগুলোর মধ্যে যে উপাদান, যে তথ্য প্রমাণ রয়েছে সেটা দেখে কিছু বিষয় পরিষ্কার হয়। যেমন তিনি কর ফাঁকির টাকা ফেরত দিচ্ছেন, শ্রমিকদের সঙ্গে বিরোধ টাকা দিয়ে মীমাংসা করছেন। এগুলোর মধ্যে দিয়ে বোঝা যায় মামলাগুলোর মধ্যে যর্থাতা রয়েছে। ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা যদি তার বিরুদ্ধে মামলা করেন এবং আদালত যদি সেখানে শ্রমিক আইনের লঙ্ঘন খুঁজে পান, তাহলে আদালত সেটার বিচার করবেই।

যখন তিনি জানেন মামলা চললে আটকে যাবেন, তখন তিনি আন্তর্জাতিক শুভাকাঙ্ক্ষীদের দিয়ে একধরনের প্রেসার তৈরি করার চেষ্টা করবেন, সেটা আমরা অনুমান করেছিলাম। এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু দিনশেষে কোনো লাভ নেই। যে ধরনেরই প্রেসার তৈরি করা হোক না কেন আইনের বাইরে কেউ যেতে পারবে না। এখানে সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো-মামলা করেছেন ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা, আর মামলা তুলে নিতে বলা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে। আমার মনে হয় যারা ড. ইউনূসের পক্ষে চিঠি লিখেছেন তাদের কোনো ধারণা নেই যে এখানে কি ঘটছে। ড. ইউনূস তাদেরকে যেটা বুঝিয়েছেন সেটা বুঝেই তারা চিঠি লিখেছেন। সেই চিঠিতে তারা নির্বাচন এবং মানবাধিকার বিষয়ে কিছু লাইন যুক্ত করে দিয়েছেন।

আমেরিকাতেও ক্যাপিটাল হিলে হামলা করার জন্য ৭০০ মানুষের বিরুদ্ধে বিচার চলছে। তারা গণতন্ত্রের জন্যই বা গণতন্ত্র রক্ষার জন্যই ক্যাপিটাল হিলে গিয়েছিল। কিন্তু তারা বিরোধী দলের সমর্থক বলে বর্তমান সরকারের অধীনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আমরা কি এখন তাদের এসব বিষয়ে কথা বলব? শ্রম আদালতে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলাটি চলবে কি চলবে না সেটার বিরুদ্ধে আপিল করতে ড. ইউনূস হাইকোর্টে গিয়েছিলেন। হাইকোর্ট থেকে বলা হয়েছে মামলাটি চলবে। ড. ইউনূস আবার আপিল ডিভিশনে আপিল করেছেন। ৬ জন বিচারপতির পরিপূর্ণ বেঞ্চ তাদের শুনানিতে বলেছেন মামলাটি চলবে। চিঠির মাধ্যমে আমাদের বিচারব্যবস্থাকে ছোট করা হয়েছে।

শ্রুতলিখন: মুজাহিদুল ইসলাম

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। স্বাধীন সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের,স্বাধীন নিউজ কর্তৃপক্ষের নয়। ]

সর্বশেষ - অপরাধ