ময়লার গন্ধের পরিবর্তে ভেসে আসে ফুলের সুবাস

জেলা প্রতিনিধি | ঝালকাঠি |

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের ফুলের বাগান
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের মূল ভবনের প্রশাসনিক শাখা ও রোগীদের ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী সংযোগের দু’পাশে রয়েছে বেশ কিছু ফাঁকা জায়গা। সেখানে ময়লা ফেলতো সবাই। দুর্গন্ধে রোগী ও অন্যান্যরা নাকে রুমাল চেপে রাখতো। সেখানে বর্তমানে রয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফুলের ও ভেষজ গাছ। দুর্গন্ধ এড়াতে এখন নাকে রুমাল চাপতে হয় না। বরং সেখান থেকে ভেসে আসে ফুলের সুবাস।

এছাড়াও হাসপাতাল সিসি ক্যামেরার আওতায় নেওয়ায় দালালদের তৎপরতা লাঘব হয়েছে। জরুরি বিভাগে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসকদের রোগী দেখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রয়েছে প্রতিটি ওয়ার্ড ও বাথরুম। হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন হওয়ায় সেবাপ্রত্যাশীদের প্রশংসায় ভাসছে কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স বা দালালের উৎপাত আগের তুলনায় অনেকটাই কমেছে। মূল ফটকে নেই হকার ও দোকানপাট। টিকিট নেওয়া, টাকা জমা দেওয়া, ওষুধ বিতরণ, পরীক্ষা নীরিক্ষা, জরুরি বিভাগ বা বহির্বিভাগে রোগী দেখানো সব জায়গাতেই শৃঙ্খলা দৃশ্যমান। মূল গেইট দিয়ে হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে সুদৃশ্য একটি ফ্রন্টডেক্স। সেখান থেকেই রোগীর স্বজনরা নিতে পারবে সেবা সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য। প্রথম ও দ্বিতীয় তলার প্রতিটি ওয়ার্ড, বারান্দা, বাথরুম পরিষ্কার রাখার জন্য কাজ করছে ৭-৮ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী। রোগীদের সেবায় সার্বক্ষণিক নিয়োজিত আছেন চিকিৎসক, নার্স, আয়া, ওয়ার্ডবয়। বহির্বিভাগে ল্যাব এবং চিকিৎসক কক্ষের সামনে দেওয়া হয়েছে একাধিক বেঞ্চ ও সিলিং ফ্যান। যা হাসপাতালে আগত রোগী ও স্বজনদের স্বস্তি দিচ্ছে।

হাসপাতালের দুটি বিল্ডিয়ের মাঝের অংশে একটি ফাঁকা জায়গায় বছরখানেক আগেও থাকতো আবর্জনার স্তূপ। যা পরিষ্কার করে লাগানো হয়েছে নানা প্রজাতির ফল ও ফুলের গাছ। সন্ধ্যার পরে বারান্দা দিয়ে হাঁটলে নাকে আসে হাসনাহেনা ফুলের সুবাস। রাতে বাগানের প্রতিটি কোণায় কোণায় জ্বলে নিয়ন আলো। মনেই হবে না এটি একটি সরকারি হাসপাতাল।

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এইচএম জহিরুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীর কমতি নেই। কিন্তু দরিদ্র মানুষের আক্ষেপ, তারা ওইসব জায়গায় যেতে পারেন না। সেই আক্ষেপ দূর করার একটা চেষ্টা এই হাসপাতালে পরিবেশ তৈরির পেছনে কাজ করেছে। যাতে যেকোনো মানুষ এখানে এসে বলে বেসরকারিতে না গিয়ে ভুল করিনি।

তিনি আরো জানান, ব্যবস্থাপনায় ভিন্নতা রয়েছে। ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা হাসপাতাল পরিচালনার ব্যাপারে আন্তরিক। সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে সব ব্যাপারে সার্বক্ষণিক নজরদারির ব্যবস্থা আছে। চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয়, আয়াসহ হাসপাতালের সব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের জন্য তদারকি রয়েছে।

ডা. এইচ এম জহিরুল ইসলাম বলেন, জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছি, তা রক্ষা করে বহাল রাখাই আমার প্রধান লক্ষ্য। সেই মোতাবেক কাজ করে যাচ্ছি। চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারী যাতে সময়মতো হাসপাতালে আসেন এবং সময়মতো কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন তা নিশ্চিত করা হয়েছে। হাসপাতালে কোনো অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে বা অনিয়মের কোনো অভিযোগ পেলে তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

হাসপাতালের এ শীর্ষ কর্মকর্তা আরো বলেন, কোম্পানির প্রতিনিধিদের একটি নির্দিষ্ট সময় দিয়েছি। সেই সময়ের মধ্যে তারা ডাক্তারদের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন। হাসপাতালের চিকিৎসা সেবাকে আরো উন্নত করার চেষ্টা করছি। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতাও কামনা করেন তিনি।

এই ওয়েবসাইটের সকল লেখার দায়ভার লেখকের নিজের, স্বাধীন নিউজ কতৃপক্ষ প্রকাশিত লেখার দায়ভার বহন করে না।
এই বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -

সর্বাধিক পঠিত

- Advertisment -