শখের বশে এলাচ চাষ করে সফল মিরসরাইয়ের শরিফ

উপজেলা প্রতিনিধি | মিরসরাই (চট্টগ্রাম) |

নিজের এলাচ বাগানে তরুণ উদ্যোক্তা ওমর শরিফ। ছবি: জাগো নিউজ
পাঁচ বছর আগে শখের বশে এলাচ চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন ওমর শরিফ। গুয়েতেমালা, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ভারত, ইরান ও ইন্দোনেশিয়া থেকে ২০০টি চারা সংগ্রহ করে আনেন। এরপর সেই চারা দিয়ে এলাচের এক মিশ্র বাগান করেন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে। মিরসরাই উপজেলায় প্রথমবারের মতো এলাচের চাষ করেছেন তিনি।

মো. ওমর শরিফ একজন তরুণ কৃষি উদ্যেক্তা ও বৃক্ষপ্রেমী যুবক। তার সংগ্রহে রয়েছে দেশি-বিদেশি অনেক ফুল, ফল ও ঔষধি গাছের চারা। চারা সংগ্রহ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও ছুটে চলেছেন থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, দুবাই, তুরস্ক, জার্মান, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। স্বপ্ন একসময় দেশে গড়ে তুলবেন সবধরনের দুর্লভ গাছের চারা। গড়ে তুলেছেন জোহরা এগ্রো ফার্মস অ্যান্ড নার্সারি। তার দেখাদেখি অনেক বেকার যুবক বাগান করার দিকে ঝুঁকছেন।

ওমর শরিফ চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ৭ নম্বর কাটাছরা ইউনিয়নের বঙ্গনুর এলাকার মৃত নুরুল মোস্তফার ছেরে। বিএ পাস করার পর তিনি চাকরি না করে নার্সারি ব্যবসা ও ফলের বাগান করেন।

চার ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ওমর শরিফ। ছোট ৩ ভাই দুবাই প্রবাসী। স্ত্রী তূর্ণা তার উদ্যেক্তা হওয়ার পেছনে সাহস যুগিয়েছেন। ওমর শোয়েব ও ওমর শাহজাদ নামে তার দুই ছেলে রয়েছে।

সরেজমিন ওমর শরিফের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, রোপণ করা এলাচ গাছে ফুল এসেছে। গোলাপি ধাচের একটা রং। কিন্তু চোখে পড়লো প্রতিটি ফুলের গোড়াতেই সবুজ রঙের একটি করে গুটি। এই গুটিগুলোই একেকটা এলাচদানা।

আদা-হলুদ গাছের সঙ্গে যাদের পরিচয় আছে, এই এলাচের গাছের সঙ্গে তারা সাদৃশ্য খুঁজে পাবেন। একই গোত্রের গাছ হয়তো। কিন্তু আদা কিংবা হলুদ যেমন গাছের নিচে শিকড়ে ধরে এই গাছে এলাচ ধরে গাছের গোড়ার ভাগটায়। গোড়ার দিক থেকে লম্বাটে ধরনের একটি ফুল বের হয়। আর ফুলের গোড়ার দিকটাতেই বেড়ে ওঠে ফল। এই ফলই হচ্ছে আমাদের পরিচিত এলাচ। এমন একটি দুটি নয়, গাছের গোড়ায় মাটি সংলগ্ন হয়ে লতিয়ে ওঠা ডগাগুলোতে গুচ্ছ গুচ্ছ এলাচ ধরে। এখন গাঢ় সবুজ রং সেই এলাচের।

কথা হয় তরুণ উদ্যেক্তা ওমর শরিফের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘পাহাড়ে আমার মিশ্র ফলের বাগান রয়েছে। পাঁচ বছর আগে মনস্থির করি এই এলাকায় এলাচের চাষ করবো। পরিকল্পনা অনুযায়ী শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ভারত, ইরান ও ইন্দোনেশিয়া থেকে ২০০টি চারা সংগ্রহ করি। তবে পথটা অত সহজ ছিল না। চারা এনে লাগিয়ে দিলেই হয়ে যায় না। এর চাষের রীতিপদ্ধতিও রয়েছে। তা বুঝতে অনেক সময় লেগেছে। এর বাইরে আছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। কিন্তু হাল ছাড়িনি। গুগলিং করে বিভিন্ন দেশের এলাচ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে পড়াশোনা করেছি। সেই জ্ঞান প্রয়োগ ঘটিয়ে এলাচ চাষে সফলতা পেয়েছি। কৃষি বিভাগ ও মসলা ইনস্টিটিউশনের কর্মকর্তারা একাধিকবার আমার বাগান পরিদর্শন করেছেন।’

এখন এলাচ নিয়ে এখন অনেক জ্ঞান রাখেন ওমর শরিফ। জানালেন, দুরকমের এলাচ ফলে—বড় ও ছোট। বড় এলাচ এশিয়া, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের শীতপ্রধান অঞ্চলে প্রচুর জন্মায়। বড় এলাচের ৫০ প্রজাতির মধ্যে এ উপমহাদেশে বহু আগে থেকে বেশ কয়েকটির ফলন হয়। তবে চট্টগ্রামে এই সবুজ রঙের ছোট এলাচের চাষ তিনিই প্রথম শুরু করেছেন।

ওমর শরিফ জানান, আষাঢ় মাসে এলাচ গাছে ফুল আসে। আর ভাদ্র ও আশ্বিন মাসের শেষদিকে এলাচ পরিপক্ক হয়। তখন বাগান থেকে কাঁচা এলাচ সংগ্রহ করে রোদে শুকাতে হয়। বেশি উৎপাদন হলে ড্রায়ার মেশিনে শুকাতে হয়। না শুকিয়ে ঘরে রাখলে পচন ধরবে। ফল পরিপক্ক হলে দেখতে কিছুটা সবুজের ওপর লালচে হবে। চারা লাগানো থেকে ফল পেতে তিন বছর অপেক্ষা করতে হয়।

বিভিন্ন জাতের এলাচের মধ্যে সবুজ-কালো, নিল-সাদা ও বেগুনিসহ ১৩ জাতের এলাচ আমদানি করা হয় বাংলাদেশে। তবে দেশে এলাচ চাষ নতুন নয়। সিলেট, বগুড়া ,সাতক্ষীরা, তিন পার্বত্য জেলাসহ বেশ কয়েক অঞ্চলে যে এলাচ জন্মে সেগুলো ‘মোরঙ্গ এলাচ’ নামে পরিচিত।

কিন্তু সবুজ দানার এলাচ চাষ এটাই প্রথম। নিজের সাফল্যের পর কৃষকদের মাঝে এলাচের চাষ ছড়িয়ে দিতে জোহরা এগ্রো ফার্ম ও নার্সারিতে এখন চারা উৎপাদনেও মন দিয়েছেন ওমর শরিফ। যেখানে এবার প্রায় ১০ হাজার এলাচের চারা গজানো হবে।

‘বাণিজ্যিকভাবে এলাচ চাষে আগ্রহীরা এই বছর আমার কাছ থেকে চারা কিনতে পারবেন। চারা বড় হলে আগ্রহী চাষিদের কাছে বিক্রি করতে পারবো। তাতে অদূর ভবিষ্যতে বিদেশ থেকে আর এলাচ আমদানি করতে হবে না’, যোগ করেন এই কৃষি উদ্যোক্তা।

ভারত, চীন ও মিয়ানমারসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের উর্বর জমি এলাচ চাষের উপযোগী। এলাচ চাষে আলাদা কোনো জমি প্রয়োজন হয় না।

ওমর শরিফ বলেন, ‘পাঁচ বছরের পরিশ্রমে আমি দেখেছি, অন্য গাছের ছায়া তলে এলাচের ভালো ফলন হয়। তাই আমি মিশ্রফলের বাগানে এলাচ চাষ শুরু করেছি। যে কেউ বাড়ির আঙিনা অথবা ফলদ বৃক্ষের বাগানে এ জাতের সবুজ সুঘ্রানি মসলা এলাচের চাষ করতে পারবেন।’

মিরসরাই উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাজী নুরুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘মিরসরাইয়ের পাহাড়ে এলাচ চাষের কথা শুনেছি। তবে এখনো সে বাগানে যাওয়া হয়নি। দেখি এবার গিয়ে এলাচের বাগান পরিদর্শন করে আসবো।’

এই ওয়েবসাইটের সকল লেখার দায়ভার লেখকের নিজের, স্বাধীন নিউজ কতৃপক্ষ প্রকাশিত লেখার দায়ভার বহন করে না।
এই বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -

সর্বাধিক পঠিত

- Advertisment -