
রাঙামাটি প্রতিনিধি
রাঙামাটি শহরের রাজবাড়ী এলাকায় বিদ্যানন্দের হাটে গতকাল ১০ টাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনেন অসহায় লোকজন। ছবি : কালের কণ্ঠ
রাঙামাটি শহরের পাশেই হ্রদে ঘেরা রাজদ্বীপপাড়ার বাসিন্দা কীর্তলতা চাকমা। পরিবারে কর্তার আয়ের পাশাপাশি নিজেও খেটেখুটে সংসার পরিচালনা করছেন। ঘরের পাশে খালি জায়গায় করছেন কৃষি কাজ। যা চাষ হয় তা বিক্রি করে সংসার চালানোর চেষ্টা করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার শহরের রাজবাড়ী এলাকার সাবারাং কমিউনিটি সেন্টারে আসেন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে। সেখানে মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে ব্যাগভর্তি বাজার করেন। এর মধ্যে এক টাকা দরে কিনেছেন এক কেজি চাল, এক কেজি লবণ, ৫০০ গ্রাম সুজি ও এক হালি ডিম। তিন টাকা দরে কিনেছেন এক কেজি চিনি ও সয়াবিন তেল।
কীর্তলতা চাকমা এসব পণ্য কিনেছেন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের পাঁচ টাকার হাটে। সেখানে ২২ ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করা হয় নামমাত্র মূল্যে। সর্বোচ্চ পণ্যের দাম পাঁচ টাকা হওয়ায় এই হাটের নাম পাঁচ টাকার হাট। একজন ক্রেতা ১০ টাকা পর্যন্ত পণ্য কেনার সুযোগ পেয়েছেন।
সম্প্রতি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এবং অসহায়দের পাশে থাকার প্রত্যয় থেকে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন প্রতিবারের মতো এবারও এই হাটের আয়োজন করে।
গতকাল সকালে হাটে গিয়ে দেখা যায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে পৃথক পৃথক স্থানে পরিপাটিভাবে সাজিয়ে ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করছেন বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবীরা। সকাল ১১টায় শুরু হওয়া এই হাটে সারিবদ্ধভাবে একেকজন প্রতীকী নোটের মাধ্যমে বিক্রেতার কাছ থেকে পণ্য কিনছেন। ট্রলি নিয়ে কেউ কিনছেন চাল, কেউ তেল, কেউ ডিম। বাদ যাচ্ছে না মাছ ও মুরগি কেনা থেকেও।
আয়োজকরা জানান, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে স্বল্প আয়ের মানুষের খুব কষ্ট হচ্ছে। তা ছাড়া রাঙামাটিতে বন্যায় অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের পাঁচ টাকার হাটের কার্যক্রম। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের তালিকাভুক্ত ৩০০ জন নিম্ন আয়ের মানুষ ১০ টাকার বিনিময়ে এসব পণ্য কিনেছেন।
ক্রেতা সুকুমার চাকমা বলেন, ‘এক টাকা দরে এক কেজি চাল, পেঁয়াজ, ডাল, আলু ও লবণ; দুই টাকা দরে এক প্যাকেট নুডলস ও তিন টাকা দরে লুঙ্গি কিনলাম। এমন বাজার আমাদের মতো গরিব মানুষের অনেক উপকার করছে।’
ক্রেতা সমিতা তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘যা আয় করি তা দ্রুত শেষ হয়ে যায়। এখানে এসে ১০ টাকা দিয়ে অনেক পণ্য কিনতে পেরে খুব খুশি।’
ক্রেতা পূর্ণিমা আকতার বলেন, ‘যেখানে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দিয়ে এক দিনের বাজার করা যায় না, সেখানে ১০ টাকা দিয়ে অনেক পণ্য কিনতে পেরেছি। খুব ভালো লাগছে। এমন বাজারের আয়োজন নিয়মিত করলে অনেক উপকার হবে।’
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড সদস্য মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন, ‘নিম্ন আয়ের মানুষ ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো যেন স্বল্প দামে উৎসবমুখর পরিবেশে পণ্য কিনতে পারে এ জন্য আমাদের পাঁচ টাকার বাজারের আয়োজন। এখানে পণ্যের সর্বোচ্চ মূল্য পাঁচ টাকা। এতে সুবিধাভোগীরা ১০ টাকা দিয়ে ৭০০ টাকার মতো পণ্য পাচ্ছেন।’ তাদের এমন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
দেশ-বিদেশে ভিন্নতর ও অভিনব পরিকল্পনায় সেবামূলক কাজ করে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। সমাজসেবায় তাদের অসামান্য সব অবদানের জন্য ২০২৩ সালে সরকার তাদের একুশে পদকে ভূষিত করে।