ঢাকায় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা। বুধবার (২৭ আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এতে রাস্তায় আটকে পড়ে যাত্রীবাহী অনেক যানবাহন। দুর্ভোগে পড়েন চালক ও যাত্রী এবং সাধারণ লোকজন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তালাইমারী মোড়ে এসে রুয়েট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেন। পরে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি স্থগিত করলে যান চলাচল শুরু হয়।
বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা ‘প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা কেন, ইন্টেরিম জবাব চাই’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘কোটার নামে বৈষম্য, চলবে না চলবে না’, ‘সবার মুখে একই বয়ান, ডিপ্লোমারা টেকনিশিয়ান’, ‘কথায় কথায় দশম ছাড়, দশম কি তোর বাপ-দাদার’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর এ দেশে কোনও কোটা থাকতে পারে না। অথচ ডিপ্লোমায় পড়াশোনা করে তারা কোটা প্রথায় চাকরি করছেন। এটা এ দেশে চলতে পারে না। এই দাবি আদায়ে ন্যায্য আন্দোলনে পুলিশ হামলা করেছে। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।
রুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী তানিম আহমেদ জানান, শাহবাগ থেকে যমুনার দিকে যাওয়ার পথে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে। বুয়েটের তিন জন আহতের খবর পাওয়ার পর তারা রাস্তায় নেমেছেন। হামলার প্রতিবাদ ও তিন দফা দাবিতে তাদের আন্দোলন চলবে।
এর আগে রবিবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে আন্দোলন করছেন রুয়েটের শিক্ষার্থীরা। সেখানে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। সেদিন তারা মহাসড়ক অবরোধ করেন। সোমবার তারা রুয়েটে সংবাদ সম্মেলন করেন। মঙ্গলবার তারা জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিয়ে নেসকোর প্রধান কার্যালয় ঘেরাও করেন।
শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো, সহকারী ইঞ্জিনিয়ার (নবম) পদের নিয়োগ সরাসরি পরীক্ষার মাধ্যমে হতে হবে এবং কোনও প্রমোশন কোটা থাকবে না; উপসহকারী ইঞ্জিনিয়ার (দশম) পদের শতভাগ ডিপ্লোমা কোটা পরিহার করে বিএসসি ডিগ্রিধারী ব্যক্তিদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে এবং বিএসসি ডিগ্রি ছাড়া কেউ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পরিচয় দিতে পারবেন না।
নগরের মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মালেক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে গাড়িগুলো অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরে যাচ্ছে। কোনও বিশৃঙ্খলা হয়নি। শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন শেষে ফিরে গেছেন শিক্ষার্থীরা। এখন যান চলাচল স্বাভাবিক আছে।’
এদিকে, ঢাকায় শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে রুয়েট প্রশাসন। এ ঘটনায় জড়িতদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনা ও আহত শিক্ষার্থীদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মো. রবিউল ইসলাম সরকার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নিন্দা ও দাবি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে দেশব্যাপী চলমান আন্দোলনের দাবিগুলোকে ‘যৌক্তিক’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে এর সঙ্গে রুয়েটের একাত্মতা পোষণের কথা উল্লেখ করা হয়। শিক্ষার্থীদের যেকোনো যৌক্তিক দাবির পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।