ছয় দফা দাবি আদায়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দিনের মতো রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে বাকৃবি ক্যাম্পাসের জব্বারের মোড়ে রেললাইন অবরোধ করেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এসে তাদের সঙ্গে আলোচনা না করা পর্যন্ত রেললাইন অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা। এ কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এর আগে, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা এবং শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করে সোমবার বিকালে রেললাইন অবরোধ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা।
দাবিগুলো হলো- ১. অবৈধভাবে হল ভ্যাকেন্টের নির্দেশনা দুপুর ২টার মধ্যে প্রত্যাহার করে আদেশ তুলে নিতে হবে। ২. হলগুলোতে চলমান সব ধরনের সুবিধা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে হবে। ৩. এই প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর শিক্ষকদের মদতে বহিরাগত দিয়ে হামলার দায়ে প্রক্টরিয়াল বডিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে। ৪. বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দ্বারা ককটেল বিস্ফোরণ, লাইব্রেরি ও স্থাপনা ভাঙচুর এবং দেশীয় অস্ত্র দ্বারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তার ঘটনার জন্য উপাচার্যকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। ৫. হামলার সঙ্গে জড়িত শিক্ষকবৃন্দ এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ৬. গত ১ মাস ধরে চলমান একক কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে যে আন্দোলন হচ্ছে, সেই একক ডিগ্রি অবিলম্বে প্রদান করতে হবে; তিনটি ভিন্ন ডিগ্রি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থরা এই ছয় দফা দাবি দুপুর ২টার মধ্যে মেনে নেওয়ার জন্য আলটিমেটাম দেয়।
সকালে বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে মিছিল নিয়ে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কে আর মার্কেটের আশপাশে জড়ো হন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘রাজপথ ছাড়বো না’, ‘প্রশাসনের গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে’—সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন।
দুপুর ২টার মধ্যে তাদের দাবি মেনে না নেওয়ায় এই রেললাইন অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন তারা।
উল্লেখ্য, রবিবার (৩১ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে ভেটেরিনারি ও পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের আশপাশে জড়ো হতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের একটাই দাবি ছিলো- ‘এক পেশায় এক ডিগ্রি, কম্বাইন্ড ডিগ্রি’। বেলা ১১টায় একই মিলনায়তনে কম্বাইন্ড ডিগ্রি ইস্যু নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা শুরু হয়। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি ইন অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি, ডক্টর অফ ভেটেরিনারি মেডিসিন এবং দুই অনুষদের সমন্বয়ে কম্বাইন্ড ডিগ্রি; এই তিনটি ডিগ্রিই থাকবে। তবে শিক্ষার্থীরা তিন ডিগ্রি মেনে নেয়নি। তারা চায়- ‘এক পেশায় এক ডিগ্রি, কম্বাইন্ড ডিগ্রি’। ফলশ্রুতিতে দুপুর দেড়টার দিকে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত আশানুরূপ না হওয়ায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষককে একত্রে অবরুদ্ধ করে তালা লাগিয়ে দেয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ আড়াই শতাধিক শিক্ষক অবরুদ্ধ হন। শিক্ষকদের ৬-৭ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখার পর দ্বিতীয়বারের মতো অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
একপর্যায়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলমসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হন। এর কিছুক্ষণ পর বহিরাগতদের একটি মিছিল লাঠিসোঁটা নিয়ে ধাওয়া দিলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কিছুটা পিছু হটে। বহিরাগতরা হামলা চালিয়ে ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিসহ ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। হামলা চলাকালে ক্যাম্পাসের শিল্পাচার্য জয়নাল আবেদিন মিলনায়তনে অবরুদ্ধ শিক্ষক ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা পেছনের দরজা দিয়ে নিরাপদে সরে যান। এ সময় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বহিরাগতদের হামলায় এক নারী শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে ভাঙচুর ও তাণ্ডব চালিয়ে চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিলসহ ক্যাম্পাসে শিল্পাচার্য জয়নাল আবেদিন মিলনায়তন ও ভিসির ভবনে হামলা ও ভাঙচুরসহ তাণ্ডব চালায়। প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী ক্যাম্পাসে এই হামলা ধাওয়া ও ভাঙচুরসহ তাণ্ডবের পর থেকে ক্যাম্পাসের থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
বাকৃবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. আলিমুজ্জামান জানান, শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতের হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে আইনিব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আন্তরিক রয়েছে। তবে তাদেরকে সময় দিতে হবে।