লক্ষ্মীপুর পৌরসভা প্রথম শ্রেণির হলেও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারে নাজুক। পৌর এলাকার বেশিরভাগ ওয়ার্ডের সড়কগুলো দীর্ঘ সময় মেরামত না করায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিগত সময়ে পৌরসভার মেয়র পদে যারা দায়িত্বে ছিলেন, তারা সড়ক সংস্কারে তেমন কোনও উদ্যোগ নেননি বলে অভিযোগ পৌরবাসীর। ফলে ভাঙাচোরা সড়কে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের।
পৌর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পৌরসভার মোট ১১০টি সড়ক ভাঙাচোরা। যার বেশিরভাগ সড়ক গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে সংস্কার করা হয়নি। এগুলো দ্রুত সংস্কার করতে হবে। এজন্য প্রায় ৭০ কোটি টাকা প্রয়োজন, যা পৌরসভার তহবিলে নেই। ফলে সংস্কার করা যাচ্ছে না।
সম্প্রতি শহরকেন্দ্রিক কিছু সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দের অভাবে শহরের বাইরের সড়কগুলো থেকে যাচ্ছে সংস্কারের বাইরে। এ অবস্থায় জরাজীর্ণ সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী এবং স্থানীয় বাসিন্দারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
সরেজমিনে পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, জরাজীর্ণ এবং খানাখন্দে ভরা সড়কে কোনোমতে চলছে যানবাহন। কোনও কোনও সড়ক ১০-১৫ বছরেও সংস্কার করা হয়নি। আবার কোনও সড়ক পৌরসভার আওতাভুক্ত হওয়ার পরও একবারের জন্যও সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি। বিশেষ করে পৌরসভাকে ১২টি ওয়ার্ড থেকে ১৫টিতে উন্নীত করা হলেও নতুন ১৩, ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ড নামমাত্র পৌরসভার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তখনকার জনপ্রতিনিধিরা নতুন এলাকাগুলোর সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেননি। আর কাঁচা সড়কে ইটের সলিং করা হলেও সেগুলোর বর্তমান অবস্থা একেবারে নাজুক হয়ে আছে।
এর মধ্যে ৮ নম্বর ওয়ার্ডটির সড়ক ব্যবস্থা একেবারে নাজুক। পৌরসভার আওতাধীন সড়কের পাশাপাশি এ ওয়ার্ডে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়কও রয়েছে। বাজার ব্রিজের দক্ষিণে গো-হাটা সড়ক থেকে তেরবেকী সড়কটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী এবং যানবাহনকে সড়কটি দিয়ে দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করতে হয়। শহরের সামাদ মোড় থেকে আইয়ুব আলী পোল সড়ক, হায়দার আলী থেকে বড়বাড়ি সড়ক, আজিজিয়া মাদ্রাসা সড়ক, কলেজিয়েট স্কুল সড়ক একেবারেই ভাঙাচোরা। সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের চলাচল সড়কগুলো দিয়ে। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জোড় দিঘির পাড় সড়ক, ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেঘনা রোড, পৌরসভার স্টেডিয়ামের সামনে থেকে বাইশমরা সড়কের অবস্থাও একেবারে বেহাল।
বেহাল অবস্থা দেখা গেছে, পৌরসভার ১, ২, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সড়কগুলোতে। ১২ নম্বর ওয়ার্ড বাইশমারাতে লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অবস্থিত। ১১ এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ডের জরাজীর্ণ সড়ক দিয়ে পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা চলাচল করে। প্রতিদিন যাতায়াত করতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের।
ভোগান্তির কথা জানিয়ে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হাসান মাহমুদ শাকিল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের এলাকার প্রায় সবগুলো সড়কে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। বৃষ্টি হলে পানি জমে পুকুরে পরিণত হয়। জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকা হলেও সড়ক ব্যবস্থা একেবারে বেহাল হওয়ায় ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারি কলেজের আশপাশে পৌরসভার আওতাধীন আরও কয়েকটি সড়কও ভাঙাচোরা। যেগুলো দীর্ঘ সময় সংস্কারের অভাবে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। কোনও একটি সড়ক ঠিক নেই।’
একই কথা বলেছেন ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নিজাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘বিগত সময়ে সংস্কার না করায় পৌরসভার সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এগুলো দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।’
২ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত পৌর আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী আবিদা সুলতানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কলেজে আসা-যাওয়ার একমাত্র সড়ক মেঘনা সড়ক। এটির অবস্থা এতটাই খারাপ যে রিকশাও চলাচল করতে চায় না। সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা হলে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় লোকজনের চলাচলের সুবিধা হতো।’
তবে অর্থ সংকটের মাঝেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান পৌর কর্তৃপক্ষ। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের মুক্তিগঞ্জ থেকে ডিবি সড়ক হয়ে রামগতি সড়কের আধুনিক হাসপাতাল সংলগ্ন লিংক সড়ক এবং মটকা মসজিদ থেকে পূর্ব দিক হয়ে দক্ষিণে পলিটেকনিক পর্যন্ত সড়কটি সংস্কারের কাজ কিছুদিনের মধ্যে শুরু হবে। এতে দীর্ঘ সময়ের দুর্ভোগ লাগব হবে ১০ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের।
জরাজীর্ণ সড়ক সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার প্রশাসক মো. জসীম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১১০টি সড়ক সংস্কার করতে হলে ৭০ কোটি টাকার মতো প্রয়োজন। আর ড্রেনসহ সংস্কার করতে আরও ৩০ কোটি টাকা প্রয়োজন। সব মিলিয়ে ১০০ কোটি টাকা হলে পৌরসভার আওতাধীন ১১০টি সড়ক সংস্কারের কাজ করা সম্ভব হবে। কিন্তু আমাদের তহবিলে সড়ক সংস্কারের জন্য এত পরিমাণ অর্থ নেই। এক কোটি ২০ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা রয়েছে, যা একেবারে যৎসামান্য।’
তিনি বলেন, ‘ভোঙাচোরা সড়কগুলোর তালিকা তৈরি করা হয়েছে। বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হবে। এ ছাড়া বিশ্ব ব্যাংক ও এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছেও সহযোগিতা চাওয়া হবে।’