
মাদক নয়, জীবন বেছে নিন’: আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবসে প্রতিজ্ঞা, প্রতিবাদ ও প্রত্যয়
দিনব্যাপী কর্মসূচির অন্যতম আকর্ষণ ছিল ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভা, থিম সং, তথ্যচিত্র প্রদর্শনী এবং পুরস্কার বিতরণ। মাদকবিরোধী প্রতিরোধ ও সামাজিক আন্দোলনের বার্তা পৌঁছাতে এই অনুষ্ঠানে উঠে এসেছে সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের বক্তব্য, বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং রাষ্ট্রীয় পর্যবেক্ষণ।
সকাল ৯টা থেকে মিলনায়তনে উপস্থিত হতে থাকেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।
৯টা ৫০ মিনিটে উপস্থিত হন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন বিশেষ অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় খোদাবক্স চৌধুরী, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ হাসান মারুফ, এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দ।
অনুষ্ঠান শুরু হয় ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের মাধ্যমে—যেখানে মানবিক মূল্যবোধ ও আত্মশুদ্ধির বার্তা তুলে ধরা হয়। ডিএনসি মহাপরিচালক মোঃ হাসান মারুফ স্বাগত বক্তব্যে বলেন “একজন ব্যক্তি যখন মাদক গ্রহণ করে, তখন ক্ষতিগ্রস্ত হয় একটি পরিবার, একটি পাড়া, এমনকি একটি সমাজ। এ লড়াইয়ে কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন সামাজিক প্রতিবন্ধকতা গড়ে তোলা।”
তিনি বলেন, মাদক প্রতিরোধে সর্বাত্মক প্রয়াসের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর গোয়েন্দা কার্যক্রম, সীমান্ত পর্যবেক্ষণ এবং পরিবারিক সচেতনতাই পারে সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে।
এরপর পরিবেশিত হয় ডিএনসি থিম সং, যেখানে সমাজ ও সংস্কৃতির বিভিন্ন স্তরের মানুষ মাদকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
পরবর্তীতে প্রদর্শিত হয় তথ্যচিত্র “জীবনের পথে ফিরে আসা”—যেখানে ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত সময়ে দেশে উদ্ধার হওয়া মাদকের হিসাব, পাচার চক্রের ধরন ও ধরপাকড় অভিযান তুলে ধরা হয়।
৫ মাসে ৪৫ লাখেরও বেশি ইয়াবা উদ্ধার
১২০ কেজি আইস (ক্রিস্টাল মেথ) ও ১১ কেজি কোকেন জব্দ
৩,২০০ জন মাদক কারবারিকে গ্রেফতার
সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের শীর্ষস্থানে কক্সবাজার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বান্দরবান
এক সময়ের মাদকাসক্ত এক তরুণ মঞ্চে উঠে নিজের জীবনের করুণ বাস্তবতা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন—
> “মাদক আমার জীবন, পরিবার, শিক্ষাজীবন—সব কেড়ে নিয়েছিল। আমি শুধু ছিলাম একটা ছায়া। আজ আমি পুনর্বাসনের মাধ্যমে নতুনভাবে জীবন শুরু করেছি।”
তার কণ্ঠে ছিল আকুতি—যে কেউ মাদক থেকে মুক্ত হতে পারে, যদি সমাজ তাকে গ্রহণ করে, পরিবার তাকে ভালোবাসে।
বিশেষ অতিথি জনাব মোঃ খোদা বকস চৌধুরী, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) বলেন—
> “শুধু বাহক ধরলেই হবে না, মূল গডফাদারদের চিহ্নিত করতে হবে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় যারা এই ব্যবসা চালায়, তাদের নাম-পরিচয় গোপন করে লাভ নেই।”
প্রধান অতিথি লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন “এ লড়াই কেবল মন্ত্রণালয়ের নয়, গোটা জাতির। প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, স্কুল, মসজিদ—সব জায়গা থেকে মাদকের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠতে হবে। প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স বাস্তবায়ন করতে হবে মাঠপর্যায়ে।” তবে তিনি লোকবল ও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় পরিপূর্ণভাবে কাজ করা যাচ্ছে না বলে অভিমত প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয় অহহঁধষ উৎঁম জবঢ়ড়ৎঃ ২০২৫ ও দিবস উপলক্ষে বিশেষ স্মারকগ্রন্থ।
রিপোর্টে কিছু উল্লেখযোগ্য পরিসংখ্যান:
২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকার ৭টি বিভাগে নতুন ১৫টি পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন করছে
বেসরকারি পর্যায়ের ৩২টি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মোট ৮০ কোটি টাকা
তরুণ বয়সে মাদকে প্রবেশের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৮৯ শতাংশে
মাদকবিরোধী সচেতনতা বিষয়ক রচনা, চিত্রাঙ্কন ও ভিডিও প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে সনদ ও পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।
শেষে অতিথিদের হাতে তুলে দেওয়া হয় শুভেচ্ছা স্মারক এবং অনুষ্ঠিত হয় সম্মিলিত আলোকচিত্র গ্রহণ। গণকণ্ঠ বিশ্লেষণ: যতটা অপরাধ, ততটাই প্রতিরোধের সুযোগ বাংলাদেশ বর্তমানে কেবল ভোক্তা নয়, বরং ট্রানজিট রাষ্ট্র হিসেবেও চিহ্নিত—বিশেষ করে ইয়াবা, আইস, এলএসডি ও কোকেন চোরাচালানের ক্ষেত্রে।
আইন প্রয়োগের পাশাপাশি এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মনস্তাত্ত্বিক কাউন্সেলিং, পারিবারিক যোগাযোগ ও সামাজিক আন্দোলন।
একদিনের কর্মসূচির বাইরে গিয়ে প্রতিটি পরিবারের, স্কুলের এবং পাড়ার মধ্যে সচেতনতা পৌঁছে না দিলে এই লড়াই পূর্ণতা পাবে না।
“মাদককে না বলুন—জীবনকে হ্যাঁ বলুন”
“আসুন পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র একত্রে গড়ে তুলি মাদকমুক্ত বাংলাদেশ”