বগুড়ার শিবগঞ্জে গ্রেফতারের পর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রিজ্জাকুল ইসলাম রাজুকে (৪৫) ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় উপপরিদর্শক (এসআই) আল মামুনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা স্বাক্ষরিত পত্রে তাকে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
সোমবার (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আতোয়ার রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রিজ্জাকুল ইসলাম রাজুর বিরুদ্ধে হত্যা, বিস্ফোরকদ্রব্যসহ বিভিন্ন আইনে ১২টি মামলা হয়। এরপর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। গত ৪ অক্টোবর রাতে গোপনে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার চকভোলা খাঁ গ্রামে নিজের বাড়ির পাশে আত্মীয়ের বিয়েতে আসেন। খবর পেয়ে শিবগঞ্জ থানার এসআই আল মামুন একজন কনস্টেবলকে সঙ্গে নিয়ে সাদা পোশাকে ওই বাড়িতে অভিযান চালান। একপর্যায়ে তিনি রাজুকে গ্রেফতার করে এক হাতে হাতকড়া পরান। এরপর তাকে মোটরসাইকেলে তুলে থানায় নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় রাজুর আত্মীয়স্বজন এবং গ্রামবাসী তাদের ঘেরাও করেন। একপর্যায়ে তারা পুলিশ সদস্যদের ধাক্কা দিয়ে রাজুকে ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন।
স্বজনদের অভিযোগ, রাজুকে গ্রেফতার না করার শর্তে এসআই আল মামুন সম্প্রতি এক লাখ টাকা ঘুষ নেন। ঘুষ নেওয়ার পরও গ্রেফতার করার কারণে পুলিশের কাছ থেকে রাজুকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ থানার এসআই আল মামুন সরকারি কাজে বাধা, পুলিশকে মারধরসহ বিভিন্ন ধারায় শিবগঞ্জ থানায় আওয়ামী লীগ নেতা রাজুকে প্রধান করে ২০ জনের নাম উল্লেখসহ ২২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পুলিশ রবিবার দিন ও রাতে চকভোলা খাঁ গ্রামে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ২১ জনকে গ্রেফতার করেন। তাদের সোমবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে বগুড়া জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত থাকায় শিবগঞ্জের চকভোলা খাঁ গ্রামটি পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। নারী ও শিশুরাও গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন।
গ্রামবাসীরা বলছেন, পুলিশ নিরীহ জনগণকে গ্রেফতার ও হয়রানি করছে।
এদিকে, গ্রেফতারের পর আসামি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা স্বাক্ষরিত পত্রে শিবগঞ্জ থানার এসআই আল মামুনকে প্রত্যাহার করা হয়। তাকে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- শেরপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম ও এসপি অফিসের ইন্সপেক্টর তরিকুল ইসলাম।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুজ্জামান শাহীন জানান, আসামি ছিনিয়ে নেওয়ায় জড়িত ১১ নারীসহ ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তবে কোনও নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা হয়নি।