জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেছেন, ‘অন্তবর্তীকালীন সরকারের কোনও তাড়া আছে জুলাই সনদ স্বাক্ষরে। এই তাড়ার ভিত্তিতে সবার অংশগ্রহণের বিষয়ে চিন্তা না করে সনদ স্বাক্ষর হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ ঘোষণার দিনে প্রশাসনকে ব্যবহার করে শহীদ পরিবারের সদস্য ও জুলাই যোদ্ধাদের পেটানো, আঘাত ও রক্তাক্ত করা হয়েছে, এটি অন্তবর্তীকালীন সরকারের জন্য লজ্জার। কাজটি করা হয়েছে শুধুমাত্র কয়েকটা স্বাক্ষরের জন্য। সেদিনের অপ্রত্যাশিত ঘটনার দায় অন্তবর্তীকালীন সরকার ও আয়োজকরা এড়াতে পারে না।’
রবিবার (১৯ অক্টোবর) দিনাজপুর শিল্পকলা একাডেমিতে এনসিপি দিনাজপুর জেলা শাখার সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, ‘যে নির্বাচন কমিশন একটা রাজনৈতিক দলকে তাদের প্রাপ্য মার্কাটা দেওয়ার সৎ সাহস দেখাতে পারে না- তাদের অধীনে কোনও সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশে হতে পারে না। শাপলা প্রতীক নিয়েই এনসিপি নির্বাচন করবে, আর এটাতে অন্যায় করা হলে তা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে।’
নির্বাচন কমিশনের শাপলা প্রতীকের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে দেখাক যে কোন আইনের ভিত্তিতে শাপলা প্রতীক একটি রাজনৈতিক দলকে বা এনসিপিকে বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। আমাদের যারা আইনজ্ঞ আছেন, আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন, আইন পড়ান বা তৈরি করেন- এমন মানুষের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দিতে কোনও বাধা নেই বলে তারা জানিয়েছেন। এই ভিত্তি থেকে আমরা শাপলা প্রতীক চেয়েছি। কিন্তু আমরা দেখতে পাই, আজকে উনি এই কথা কোন মুখে বলেন। শাপলা প্রতীক তো আমরা আজকে আবেদন করিনি। রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা যেদিন নিবন্ধন করেছিলাম, সেদিনই শাপলা প্রতীক চেয়েছিলাম। তাহলে বিগত কয়েক মাসে এটা তিনি কেন মার্কার লিস্টে অন্তর্ভুক্ত করেননি।’
এক প্রশ্নে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের আগে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল রাস্তাঘাটে নেমে হাহাকার করতো, কর্মসূচি দিয়ে হাহাকার করতো। অনেক অফিসের সামনে ১০ জন লোক দাঁড়ানোর মতো ছিল না। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, জনগণ তখনই রাস্তায় নেমেছে, যাদের ওপর জনগণ আস্তা রেখেছে। এখন যদি সেই আস্থার প্রতিদান কেউ, কোনও ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল না দেয়- জনগণ তাদের মতো করে আগামীতে যখন সুযোগ হবে এর প্রতিফলন দেখাবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলি, আপনারা ইতিহাস থেকে দয়া করে শিক্ষা নেন। জুলাই সনদ আপনারাও চান, আমরাও চাই। আপনারা যদি জুলাই সনদ, জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো নামকাওয়াস্তে একটা পেপার চান- আমরা জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি ও বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা চাই। আমরা সরকারের কাছে নিশ্চয়তা চেয়েছি, এখানে যে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে রেখেছে বিএনপি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে। আমরা মনে করি, ওই গুরুত্বপূর্ণ ৭টি বিষয় ৭০টি অন্য সংস্কারের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ওই জায়গাটায় পলিসি কী হবে? যদি সনদটা গণভোটে পাস হয় তাহলে ওই জায়গা থেকে ওই গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো হবে কি না এই ক্লিয়ারেন্স অন্তর্বর্তী সরকারকে দিতে হবে। যদি হয়, আমাদের তো স্বাক্ষর করতে সমস্যা নাই। আমরা কেন সনদে স্বাক্ষরে বাধা হয়ে দাঁড়াবো? কিন্তু আপনারা স্পষ্ট দেখেছেন, আমরা প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছি, এই ক্লিয়ারেন্সগুলো যদি দেওয়া হয় তাহলে এনসিপির জুলাই সনদ স্বাক্ষরে কোনও বাধা থাকবে না।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে সারজিস বলেন, ‘প্রথমত হচ্ছে এই জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে যে ঐক্যমত্য হওয়ার দরকার ছিল সেটা করে সনদ স্বাক্ষরের প্রেক্ষাপট কিংবা দিন ধার্য করা হয়নি, এটা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। যে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যমত্য কমিশনে অংশগ্রহণ করেছিল, আলোচনাটা তো তাদের মতামতের ভিত্তিতেই এগিয়ে চলছিল। তাদেরকে কনভিন্স করে, বাংলাদেশের মানুষকে সব ক্লিয়ার করে তারপরই তো এই দিনটা হওয়া দরকার ছিল। আমাদের তো সবারই আকাঙ্ক্ষা ছিল যে পুরো বাংলাদেশের মানুষের তাদের জায়গা থেকে যার যার অবস্থান থেকে এই স্বপ্নটা দেখছিল- যে এত সুন্দরভাবে একটা জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হবে, এই সংস্কারগুলো হবে। কিন্তু অন্তবর্তীকালীন সরকার অনেকটা মনে হলো তাদের কোনও একটা চাওয়া আছে, খুব দ্রুত এটা শেষ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের সংসদ চত্বর থেকে অ্যাভিনিউয়ে তো লক্ষাধিক মানুষ থাকা সম্ভব। তাহলে আমরা গেজেটেড যারা জুলাই যোদ্ধা, আমার যারা হাজারের মতো গেজেটেড শহীদ পরিবার, আপনি তাদের জন্য কেন আসনের ব্যবস্থা করতে পারলেন না। শুধুমাত্র গতানুগতিক কয়েকটা রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব, এই অফিসার, এই আমলা, এই উপদেষ্টা, এই বড় পদবীর একেকজন অফিসার, এগুলোকে দিয়ে আপনি এতবড় অনুষ্ঠান বানান। তাহলে যাদেরকে নিয়ে এই অভ্যুত্থান হলো তাদের এখানে অংশগ্রহণ কোথায়? এই কাজ তারা জুলাই ঘোষণাপত্রের দিনও করেছে। কেন এত এত টাকা, এত এত জায়গায় খরচ হয়। এখানে কয়েক কোটি টাকা দিয়ে বা কয়েক লাখ টাকা খরচ করে শহীদ পরিবারগুলোর অংশগ্রহণে, জুলাই যোদ্ধাদের অংশগ্রহণে আর দশ, এগারো হাজার মানুষকে নিয়ে একটা প্রোগ্রাম সাজানো যেতো না। এটা করেনি বলেই তো তাদের তাদের ক্ষোভের জায়গা থেকে তারা একটি অপ্রত্যাশিত পদ্ধতিতে ওইখানে তারা প্রবেশ করেছে। কিন্তু এই দায় তো অন্তবর্তীকালীন সরকার বা যারা প্রোগ্রামটি আয়োজন করেছে তারা এড়াতে পারে না। আমি ধরে নিচ্ছি তাদের প্রবেশের পদ্ধতিটা অপ্রত্যাশিত, এইভাবে হওয়া উচিত হয়নি। কিন্তু এটার কারণ তো আপনি, এটা তো সৃষ্টি করে দিয়েছেন আপনি। এরপরে আপনারা প্রশাসনকে ব্যবহার করে তাদেরকে যেভাবে উন্মুক্তভাবে পিটিয়েছেন, আঘাত করেছেন, রক্তাক্ত করেছেন। আমাদের ওই আহত যোদ্ধা, হাত হারানো ভাই আতিকের হাত যেভাবে খণ্ডিত হয়ে রাস্তায় পড়েছিল। এটা এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের জন্য লজ্জার। এই অন্তবর্তীকালীন সরকার, যেটা জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার, সেই সরকারের জন্য এটা লজ্জার। আমরা আহ্বান করবো, অন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকেও এই প্রশাসন যাদেরকে নির্দেশ দিয়ে এই কাজটি করানো হয়েছে শুধুমাত্র কয়েকটা স্বাক্ষরের জন্য। আমাদের জায়গা থেকে মনে হয়, এই অন্তবর্তীকালীন সরকারেরও ওই জুলাই যোদ্ধা, ওই শহীদ পরিবারদেরকে ডেকে তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করা উচিত।’













