জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণহত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়। বুধবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রংপুর নগরীর পর্যটন মোটেলের হলরুমে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির মধ্যেই যেন নির্বাচন হয়, সেজন্য সব পক্ষকেই কাজ করতে হবে। পতিত শক্তি নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। যদি ক্ষমতার লোভে কোনও দল কিংবা কোনও শক্তি মনে করে তারা এককভাবেই সব কিছু করবে; বা জাতীয় ঐক্য ভেঙে দেবে কিংবা জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে দাঁড়াবে, তাহলে হিতে বিপরীত হবে। তারা সংসদ টেকাতে পারবে না। সংসদ টেকাতে তাদের কষ্ট হবে এবং জনগণের আস্থা পাবে না। তাই সংস্কারের পক্ষে থাকার জন্য সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানাই।’
জুলাই সনদ শুধু একটি দলীয় প্রস্তাব নয়, এটি জনগণের মুক্তির দলিল উল্লেখ করে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া এদেশের গণতন্ত্র পূর্ণতা পাবে না। আমরা শুনেছি, ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বা কমিশন যেসব বিষয়কে সংবিধান সংস্কারের জন্য লিপিবদ্ধ করেছে, সেসব বিষয় গণভোটে যাক। জনগণই রায় দেবে, কী থাকবে আর কী বদলাবে। নোট অব ডিসেন্ট বলে কিছু থাকবে না। সংস্কারের রূপরেখা জনগণের হাতে যাবে, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে। গণভোট ছাড়া সনদ বাস্তবায়নের অর্থ জনগণের মতামত উপেক্ষা করা।’
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণহত্যার বিচার না হলে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের কোনও অর্থ নেই জানিয়ে নাহিদ আরও বলেন, ‘এই বিচার না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন আয়োজন কেবলই আনুষ্ঠানিকতা, কাগজের সাইন, যার মূল্য কেবলই কাগজে। বাংলাদেশের ইতিহাসে আমরা নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরও দেখেছি, ত্রিদলীয় রূপরেখা শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার পথ হিসেবে ব্যবহার হয়েছে। জনগণের রক্তের ত্যাগ ভুলে যাওয়া হয়েছে। আমরা সেই ভুল আর করবো না। তবে আমরা দ্রুত নির্বাচন চাই। দেশের জনগণের অনেক প্রতাশা ছিল। মানুষ পরিবর্তন চেয়েছে। এখন জনগণের মাঝে হতাশা কাজ করছে, দেশটা আগের মতো রয়ে যাবে কিনা। কারণ ৫ আগস্টের পর দুর্বৃত্তায়ন, চাঁদাবাজি ও দখলবাজি আগের মতোই চলছে। দেশ বহুমুখী সংকটের মধ্যে আছে। সেজন্য আমাদের প্রয়োজন জাতীয় ঐক্যের। এ ব্যাপারে যারা এখন বিভিন্ন কথা বলছেন। তারা ঠিক বলছেন না। কেউ যদি মনে করে এককভাবে সরকার গঠন করবে, সেই সরকার এবং সংসদ টিকবে না।’
বিএনপি ও জামায়াত; দুই দলের বিগত দিনের কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ‘এর আগে ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপির বিরুদ্ধে দুর্নীতি-লুটপাটের অভিযোগ আছে। ৫ আগস্টের পরও তাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। একইভাবে জামায়াতের বিরুদ্ধেও অনেক ধরনের সমালোচনা আছে। ৫ আগস্টের পরও তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আছে। সে কারণে বর্তমানে অন্য কোনও জোটে যাওয়ার পরিকল্পনা নেই। দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা এককভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। সারা দেশে দল গোছানোর কাজ চলছে। জাতীয় নির্বাচনে এনসিপি এককভাবে অংশ নেবে। কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে চাই না, সেজন্য আমরা আমাদের মতো করে কাজ করে যাচ্ছি।’
এনসিপি শাপলা প্রতীক পাবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘নবগঠিত দল হিসেবে আমাদের শাপলা প্রতীক না দিলে নির্বাচন কমিশন বেইনসাফি করবে। শাপলা প্রতীক না দেওয়া পর্যন্ত এবং এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনও সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তবে আমরা মনে করি, শেষ পর্যন্ত শাপলা প্রতীক আমাদেরই দেওয়া হবে—সেই আশা রাখি।’
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন, দলটির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমসহ দলের নেতৃবৃন্দ।

















