ভারতের আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দেয়া এয়ার ইন্ডিয়ার একটি উড়োজাহাজের দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশটির বিমান দুর্ঘটনার তদন্তকারী সংস্থা এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি)। গত ১২ জুনের এ ঘটনায় প্রাণ হারান ২৬০ জন যাত্রী।
শনিবার (১২ জুলাই) প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনে জানানো হয়, জ্বালানির সরবরাহ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারটির গতি দ্রুত কমতে শুরু করে এবং নিচের দিকে নামতে থাকে।
রিপোর্টে বলা হয়, এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানগুলোর জন্য যেখান থেকে জ্বালানি নেয়া হয় সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যা পাওয়া গেছে তা ‘সন্তোষজনক’। অর্থাৎ জ্বালানির পরিমাণ বা গুনগত মান ঠিক থাকলেও সেটি উড্ডয়নের সময় শক্তি সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছিল কারিগরি ত্রুটির কারণেই।
প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের তিন সেকেন্ড পরেই ইঞ্জিনের জ্বালানি সুইচগুলো প্রায় একইসঙ্গে ‘চালু’ অবস্থা থেকে ‘বন্ধ’ অবস্থায় চলে যায়। ফলে ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। শক্তি হারিয়ে নিচের দিকে নামতে থাকে বিমানটি। পাইলটরা দ্রুত সুইচগুলো আবার চালু করার চেষ্টা করেন, সক্রিয় করা হয় জরুরি ব্যবস্থাও। কিন্তু তার আগেই হয় বিধ্বস্ত।
এক বিবৃতিতে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনের সাথে একমত পোষণ করেছে এয়ার ইন্ডিয়া। জানিয়েছে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে পূর্ণ সহযোগিতা করছে তারা। তবে তদন্ত চলমান থাকায় আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি তারা।
Air India stands in solidarity with the families and those affected by the AI171 accident. We continue to mourn the loss and are fully committed to providing support during this difficult time.
We acknowledge receipt of the preliminary report released by the Aircraft Accident…
— Air India (@airindia) July 11, 2025
তবে, প্রশ্ন ওঠে কীভাবে বন্ধ হয়েছিলো সুইচগুলো? মূলত তা নিয়েই তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। সুইচ অফ নিয়ে দুই পাইলটের মধ্যে বিভ্রান্তির প্রমাণও পাওয়া যায়।
ব্ল্যাকবক্সের অডিও রেকর্ডিংয়ে শোনা যায়, এক পাইলট অপরজনকে জ্বালানি সুইচ বন্ধের কারণ জিজ্ঞেস করছেন। কিন্তু দ্বিতীয় পাইলট জানান, তিনি তা বন্ধ করেননি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহকারী এই সুইচগুলো কারও পক্ষে ভুল করেও নড়াচড়া করানো সম্ভব নয়। কারণ পাইলটদের আসনের মাঝখানে থাকা এসব সুইচ সুরক্ষিত থাকে লকিং সিস্টেমের মাধ্যমে। একটু নড়াচড়া করলেই সুইচগুলো সরে যায়, বিষয়টা এমন নয়। তাই ধারণা করা হচ্ছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো সেগুলো।
তদন্ত রিপোর্টে আরও জানানো হয়, উড্ডয়নের সময় কোনো যান্ত্রিক ত্রুটির প্রমাণ মেলেনি। জ্বালানির মানও ছিলো সন্তোষজনক। তাহলে কী করে হলো এ দুর্ঘটনা, তা নিয়ে রহস্য থেকেই যাচ্ছে।
বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে ককপিটে থাকা একজন পাইলট গ্রাউন্ডে থাকা এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের ‘মে ডে’ ‘মে ডে’ ‘মে ডে’ বলে বার্তা দেন।
উল্লেখ্য, ‘মে ডে’ একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃত বিপদ সংকেত। সাধারণ পাইলটরা সংকটের মুখে পড়লে এয়ার ট্রাফিক কর্মকর্তাদের তিন বার এই বার্তা দিয়ে বোঝান যে বিমানটি মারাত্মক সংকটে পড়েছে ও তাদের দ্রুত সহায়তার প্রয়োজন।
/এমএইচআর