ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে যুবদল নেতার বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি, শ্রমিক মারধর ও বাস ভাঙচুরের অভিযোগ তুলেছে শরীয়তপুর জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ। সংগঠনটির পক্ষ থেকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানা, ২৬ ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্ট, শরীয়তপুর পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের সহ-সভাপতি মুশফিকুর রহমান ফাহিম। অভিযোগ রয়েছে, তিনি আওয়ামী লীগ নেতা আবু বক্কর সিদ্দিক হাবু হত্যা মামলারও প্রধান আসামি ছিলেন।
শনিবার শরীয়তপুর জেলা সড়ক পরিবহন ও মালিক গ্রুপ এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস লিমিটেড শরীয়তপুর-ঢাকা রুটে নিয়মিত যাত্রীসেবা দিয়ে আসছে। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর থেকে যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মুশফিকুর রহমান ফাহিম পরিবহন মালিকদের কাছ থেকে প্রতি মাসে সাত লাখ টাকা করে চাঁদা দাবি করে আসছেন। সম্প্রতি তিনি এককালীন ৫০ লাখ টাকা দাবি করলে মালিকপক্ষ তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এর জের ধরে গত ৬ জুলাই থেকে যাত্রাবাড়ী থেকে বাস চলাচলে বাধা দেওয়া হয়। এরপর ৯ জুলাই ধোলাইপাড় এলাকায় একটি বাস (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৯৬৭৩) ভাঙচুর করা হয়। ১০ জুলাই সকাল ৬টায় গোমতি ফিলিং স্টেশনের সামনে দুটি বাস (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৯৩৮৫ ও ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৯১৮৬) হামলার শিকার হয়। হামলাকারীরা হাতুড়ি দিয়ে বাসের সামনের গ্লাস ও পাশের জানালার কাচ ভেঙে দেয়। সর্বশেষ ১১ জুলাই সকালে মালিক গ্রুপের এক শ্রমিককে মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শরীয়তপুর সুপার সার্ভিসের এক বাসের চালক নয়ন বেপারী বলেন, ‘আজকে সকালেও যাত্রাবাড়ীতে পাঁচ সাত জন এসে আমাকে মেরেছে। বলেছে, “চাঁদা না দিয়ে এই রুটে তোরা বাস চালাতে পারবি না।” আমি এটার বিচার চাই।’
এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘এক যুবদল নেতা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের জিম্মি করে রেখেছেন। চাঁদা না দিলে বাস চালাতে দিচ্ছেন না। হামলা, ভাঙচুর ও মারধরের শিকার হচ্ছি আমরা। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পরিবহন সেক্টর ধ্বংস হয়ে যাবে।’
শরীয়তপুর আন্তজেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক চৌকিদার বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই এই খাতে চাঁদাবাজি হচ্ছে। কিন্তু সেটা সহনশীল ছিল। ৫ আগস্টের পরে এই যুবদল নেতা ফাহিম চাঁদাবাজি করে আসছে। এবং আমাদের শ্রমিকদের মারছে এবং গাড়ি ভাঙচুর করছে পাঁচ কোটি টাকা চাঁদার জন্য। এখন শরীয়তপুরে ২০ লাখ জনগণ সবাই ভোগান্তিতে পড়ছে। কারণ যাত্রাবাড়ীতে আমাদের গাড়ি যেতে দিচ্ছে না এই ফাহিম। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা হুমকিতে পড়বে। আমরা শ্রমিক ইউনিয়ন অনেক ধৈর্য ধরে বসে আছি। এটাও যদি সঠিক কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে আমরা শ্রমিকরাই আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।’
মালিক গ্রুপের সভাপতি ফারুক আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘আমরা পদ্মা সেতুর পর থেকে আন্তজেলা যাত্রীসেবায় নিবেদিতভাবে কাজ করে আসছি। ৫ আগস্টের পরে যুবদল নেতা ফাহিম বিভিন্ন পরিবহন দখল করে। এবং প্রতিটি গাড়ি থেকে প্রতিদিন ১০০-২০০ করে তিনি টাকা নেন। সম্প্রতি তিনি আমাদের কাছে দশটি বাসের প্লেস চায়। যেটা মালিক গ্রুপের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ আমাদের ২০০ গাড়ি, এর মধ্যে ১৭০টি চলে আর বাকিগুলো বসে থাকে। আর আমরা এই রুট ছাড়া অন্য কোনও জেলায় গাড়ি চালাতে পারছি না। এরপর থেকেই আমাদের গাড়ি ভাঙচুর করছে, শ্রমিক পেটানো হচ্ছে। আমরা ন্যায়বিচার চাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত যুবদল নেতা মুশফিকুর রহমান ফাহিম বলেন, ‘মূল ঘটনা হয়েছে আমাদের দুটি পরিবহন। তারা হলো জেলা শহর, আমরা ঢাকা থেকে একটি পরিবহন ছেড়েছি। আমাদের পরিবহন তারা নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। আমাদের পরিবহন গুলো তারা বাধাগ্রস্ত করে। এইভাবে বিভিন্ন ঝামেলা তারা করে, এখন উল্টো আমি চাঁদাবাজ হয়ে গেছি। তারা যে অভিযোগ দাবি করেছেন সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।’
এ বিষয়ে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরপরই আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি। তারা তা খতিয়ে দেখছেন। যেহেতু ঘটনাস্থল ঢাকা মহানগর এলাকায়, তাই আমি ডিএমপির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি। আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করছি। যাতে শরীয়তপুর থেকে ঢাকাগামী কোনও বাস এবং যাত্রী যাত্রাবাড়ীতে কোনও হয়রানির শিকার না হয়। বাস চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে।’