কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলের অতি পরিচিত মুখ, জেলার ‘তথ্যভান্ডার’ খ্যাত প্রবীণ সাংবাদিক মমিনুল ইসলাম মঞ্জু মারা গেছেন। বুধবার (১৬ জুলাই) দিবাগত রাত ২টা ৪০ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।
মমিনুল ইসলাম মঞ্জু জেলা শহরের পৌর এলাকার চরুয়াপাড়ার বাসিন্দা ভাষা সৈনিক অ্যাডভোকেট আব্দুল করিমের জ্যেষ্ঠ ছেলে। তিনি কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তিনি সর্বশেষ ‘এখন টিভি’র জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
সাংবাদিক মমিনুল ইসলামের মরদেহ বৃহস্পতিবার দুপুরে তার নিজ বাড়িতে পৌঁছায়। এ দিন বিকালে তার বসতবাড়ি সংলগ্ন মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সন্ধ্যা ৬টায় তার দীর্ঘদিনের সংগঠন কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সহকর্মীরা তার সাহসী ও বলিষ্ঠ সাংবাদিকতার স্মৃতিচারণ করেন। এরপর শহরের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তার স্ত্রীর কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হন প্রথিতযশা ও গুণী এই সাংবাদিক।
মমিনুল ইসলাম মঞ্জু সত্তরের দশকে দৈনিক সংবাদ পত্রিকার মাধ্যমে কুড়িগ্রামে সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে থানা আনসার অ্যাডজুটেন্ট হিসেবে বেশ কয়েক বছর কর্মরত থাকার পর পুনরায় সাংবাদিকতায় ফিরে আসেন। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এখন টিভিতে কর্মরত ছিলেন। কর্মজীবনে তিনি মুক্তকণ্ঠ, ইটিভি, সিএসবি নিউজ, সমকাল ও সময় টিভিসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। তা ছাড়া কুড়িগ্রামের ইতিহাস ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধসহ অনেক বিষয়ে তার পাণ্ডিত্য ছিল। অসামান্য মেধাবী এই সাংবাদিক তার সহকর্মী ও ঘনিষ্ঠজনদের কাছে তথ্যের ভান্ডার হিসেবে খ্যাত। তার মৃত্যুতে জেলার সাংবাদিকতায় শূন্যতা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।
কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের অন্যতম সদস্য, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও সাবেক সহকারী অধ্যাপক হাসিবুর রহমান হাসিব বলেন, ‘আমরা শোকাহত। মঞ্জু ভাই ছিলেন আমাদের সাংবাদিকতার শিক্ষক। আমাদের জেলার তথ্য ভান্ডার। তিনি আমাদের অভিভাবক। তার মতো আরেকজন সাংবাদিক ও অভিভাবক আমরা আবার কত বছর পর পাবো জানি না।’
কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজু মোস্তাফিজ বলেন, ‘মঞ্জু ভাইয়ের শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। তার মতো সাহসী ও গুণী সাংবাদিক আমাদের এই জনপদে আবার পাবো কিনা সন্দেহ আছে। তার মৃত্যুতে আমরা শুধু একজন সহকর্মী নয়, একজন অভিভাবক হারালাম। আমরা তার পরকালীন জীবনের শান্তির জন্য দোয়া প্রার্থী।’
গুণী এই সাংবাদিক মৃত্যুকালে তিন ছেলে, বাবা ও আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন।