গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ বলছে, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমরা অপরাধীদের প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছি। তাদের বিস্তারিত পরিচয় এবং গ্রেফতার করতে পুলিশ কাজ করছে।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা ৫৮ মিনিটে মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা মোড় এলাকার মসজিদ মার্কেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সাংবাদিক তুহিনের বড় ভাই অজ্ঞাতদের আসামি করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) বাসন থানায় একটি মামলা করেছেন। বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। তিনি দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তুহিন গাজীপুর মহানগরীর পালের মাঠ এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। পাঁচ ও দুই বছর বয়সী দুটি ছেলে রয়েছে তার। তিনি সাংবাদিকতার পাশাপাশি একটি ইউনানি ওষুধ কোম্পানির গাজীপুরের ডিলার ছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, ঘটনার সময় ৬-৭ জন যুবক দা ও চাপাতি নিয়ে প্রকাশ্যে সাংবাদিক তুহিনকে ধাওয়া করে। সে তার জীবন বাঁচানোর জন্য দৌড়ে ঈদগাহ (মসজিদ) মার্কেটের চা-পান বিক্রেতা খায়রুল ইসলামের দোকানে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সন্ত্রাসীরা সেখানে গিয়ে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বুকে, গলায়, কাঁধে ও পিঠে এলোপাতাড়ি কোপায়। এতে তার গলার কিছু অংশ কেটে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ ক্ষতবিক্ষত হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৮ মিনিট। ঘটনাস্থল চন্দনা চৌরাস্তা মসজিদ মার্কেটের পশ্চিম পাশে। কালো রঙের জামা বা বোরকা পরা এক নারী হেঁটে যাচ্ছেন আর পেছন দিক থেকে সাদার মধ্যে কালো চেক জামা পরা যুবক ওই নারীকে পেছন দিক থেকে টেনে ধরেন। ওই নারী জোর করে চলে যেতে চাইলে তার সামনে গিয়ে গতিরোধ করেন ওই যুবক। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি নারীকে কিল-ঘুষি মারতে থাকনে। মুহূর্তের মধ্যেই পাশ থেকে ধারালো অস্ত্র হাতে ৪-৫ জন দুর্বৃত্ত ওই যুবককে কোপানোর চেষ্টা করেন। পরে ওই যুবক দৌড়ে পালিয়ে যান।
ঘটনার কিছু সময় আগে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একটি দোকানে বসে ছিলেন সাংবাদিক আসাদুজ্জামান ও তার সহকর্মী শামীম হোসেন। শামীম বলেন, ‘চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় আমরা দুজন পশ্চিম দিকে হেঁটে যাচ্ছিলাম। ঠিক এমন সময় একজন নারী ও যুবক আমাদের পাশ কাটিয়ে দ্রুত চলে যায়। এমন সময় কয়েকজন লোক ধারালো অস্ত্র নিয়ে বলতে থাকে এই পাইছি, তোরা আয়। পরে ওই যুবক দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তখন তারা ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাকে ধাওয়া করেন। এ সময় আসাদুজ্জামান মোবাইল ফোন বের করে তাদের পেছনে দৌড় দেন। পরে আমি তুহিনকে খুঁজতে এগিয়ে যাই। অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা হঠাৎ থেমে গিয়ে পেছনের দিকে তাকায়। তুহিন তখন দৌড়ে চায়ের দোকানে ঢুকে গেলে অস্ত্রধারীরাও চায়ের দোকানে ঢুকে ওকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। আমি চৌরাস্তা এলাকায় পুলিশের গাড়ি খুঁজতে থাকি। কোনও গাড়ি দেখতে না পেয়ে বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ফোন করি। কিছু সময় পর পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।’
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপকমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এক নারীকে নিয়েই মূলত ঘটনার সূত্রপাত। সে মানুষের সঙ্গে কৌশলে সম্পর্ক তৈরি করে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে সব লুটে নেয়। সন্ত্রাসীরা তুহিনকে দেখে ফেলে ভিডিও মুছে ফেলতে বলে। তুহিন ভিডিও মুছতে অস্বীকার করলে তাকে ধাওয়া দেয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, নারীঘটিত ঘটনা এবং যুবককে কোপানোর ভিডিও ধারণ করায় দুর্বৃত্তরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। আহত বাদশা মিয়া গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘গাজীপুরের বাসন, ভোগরা ও চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একটি চক্র আছে, যারা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। সিসিটিভির ফুটেজে যাদের দেখা গেছে, তারা সবাই ওই দলের সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এ ছাড়াও ফুটেজে যে নারীকে দেখা গেছে, তিনিও ওই চক্রের সদস্য হতে পারেন। চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ পেতে ওই চক্র ছিনতাই করে। আমরা ধারণা করছি, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজের ওই মেয়ে ছিনতাইকারী দলের একজন সদস্য। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম কাজ করছে। পাশাপাশি সিসিটিভি ফুটেজে হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।’