চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার ঘটনায় আদালতে দেওয়া পুলিশের অভিযোগপত্র গ্রহণের ওপর শুনানিতে মামলার বাদী জামাল উদ্দিনের উপস্থিতি চেয়ে সমন জারি করেছেন আদালত।
রবিবার (১০ আগস্ট) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ষষ্ঠ আদালতের বিচারক এসএম আলাউদ্দিন শুনানি শেষে এ আদেশ দেন ।
এর আগে, গত ১ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতয়ালি) মাহফুজুর রহমান চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যায় ইসকনের সাবেক সংগঠক চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে প্রধান আসামি করে ৩৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। অভিযুক্তদের বেশির ভাগই চিন্ময়ের অনুসারী।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী বলেন, ‘আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ৩৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। আজ রবিবার অভিযোগপত্র গ্রহণের উপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে আসামিপক্ষ এ মামলা থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অব্যাহতি চেয়েছেন। উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে আগামী ২৫ আগস্ট আলিফের বাবা ও মামলার বাদী জামাল উদ্দিনের ব্যক্তিগত উপস্থিতি চেয়ে সমন জারি করেছেন আদালত। ওইদিন বাদীর উপস্থিতিতে এ মামলায় শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।’
গত বছরের ২৫ অক্টোবর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে সনাতনী সম্প্রদায়ের একটি বড় সমাবেশ হয়। এর কয়েকদিন পর ৩১ অক্টোবর চিন্ময়ের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়। এ মামলায় আরও ১৮ জনকে আসামি করা হয়। একই বছরের ২২ নভেম্বর চিন্ময়ের নেতৃত্বে রংপুরে আরও একটি বড় সমাবেশ হয়। রাষ্ট্রদ্রোহের সেই মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
পরদিন তার জামিন মঞ্জুর না করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন চট্টগ্রামের আদালত। সেদিনই চিন্ময় দাসের আইনজীবীরা ওই আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন চেয়ে আবার জামিন আবেদন করেছিলেন। তার জামিন ঘিরে সংঘর্ষে জড়ান চিন্ময়ের ভক্তরা। সংঘর্ষের সময় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে একজন আইনজীবীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
আইনজীবী আলিফ হত্যার ঘটনায় তার বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আলিফ হত্যার আসামিদের মধ্যে চন্দন দাস, রিপন দাস ও রাজীব ভট্টাচার্য্য আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, আইনজীবীর ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস। আর কিরিচ দিয়ে কোপান চন্দন দাস। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এই আইনজীবীকে লাঠি, বাটাম, ইট, কিরিচ ও বঁটি দিয়ে তারা ১৫ থেকে ২০ জন মিলে পিটিয়ে হত্যা করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার দাখিল করা চার্জশিট অনুযায়ী, এজাহারভুক্ত ও তদন্তে প্রাপ্ত মোট আসামি ৪২ জন। এর মধ্যে এজাহারভুক্ত ৩ জন ও তদন্তে প্রাপ্ত ১ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
বর্তমানে ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ গ্রেফতার রয়েছেন ২০ জন, আর পলাতক রয়েছেন ১৮ জন।

















