ইরানের সাথে সংঘাতের খবর প্রচারে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ইসরাইলি সরকার। চলমান যুদ্ধের খবর কিভাবে প্রকাশ করা হবে বা কোন কোন খবর প্রচার করা যাবে না সে বিষয়ে একটি নতুন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। আল জাজিরার এক বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গত বুধবার ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর সেন্সরশিপ বিভাগের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কোবি ম্যান্ডেলব্লিট এক বিজ্ঞপ্তিতে গণমাধ্যমের জন্য নতুন কিছু নীতিমালা ঘোষণা করেন। ইরানের সাথে হামলার বিষয়ে ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমগুলো কোন ধরনের তথ্য প্রচার করতে পারবে আর কোনগুলো প্রচার করতে পারবে না সে সম্পর্কে নতুন নীতিমালায় স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে।
ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের (সেন্সরশিপ) আইনি ভিত্তি দেশটির জন্মের চেয়েও বহু পুরোনো। এর আগে ১৯৪৫ সালে ফিলিস্তিনে ব্রিটিশ শাসনামলে প্রথম সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এর তিন বছর পর ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর সেসব বিধিনিষেধই ইসরাইলি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তবে, ইসরাইলে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়টি কেবল নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে সংবাদ প্রকাশে নিষিদ্ধ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ জার্নালিস্টসের (আইএফজে) পরিসংখ্যান অনুসারে, ৭ অক্টোবর ২০২৩ সাল থেকে ইসরাইল গাজায় কমপক্ষে ১৬৪ জন সাংবাদিককে হত্যা করেছে। লেবানন, অধিকৃত পশ্চিমতীর এবং বর্তমানে ইরানেও অনেকেই নিহত হয়েছে।
আল-জাজিরাকে ২০২৪ সালের মে থেকে নিষিদ্ধ করেছে ইসরাইলি সরকার। এছাড়া ইসরাইলি সরকারের কার্যকলাপের সমালোচনা করায় গত বছরের নভেম্বরে ইসরাইলের সংবাদমাধ্যম হারেৎজ পত্রিকার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
বুধবার প্রকাশিত একটি নতুন নির্দেশনায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার সংবাদ প্রকাশের সময় ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে ইসরাইলের প্রধান সামরিক সেন্সরের কার্যালয়।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর সেন্সরশিপ বিভাগ সতর্ক করে বলেছে, সংবাদমাধ্যমে এমন কিছু লেখা বা দেখানো যাবে না যা থেকে বোঝা যায় কোথা থেকে হামলা হয়েছে, কিভাবে আকাশ প্রতিরক্ষা কাজ করছে বা হামলায় কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব তথ্য শত্রুর কাজে লাগতে পারে এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য একটি হুমকি তৈরি করতে পারে।
বিশেষ করে সাংবাদিক ও সম্পাদকদের হামলার জায়গা থেকে ছবি তোলা বা ভিডিও সম্প্রচার করা, বিশেষ করে সামরিক স্থাপনার আশপাশে, ড্রোন বা ওয়াইড অ্যাঙ্গেল ক্যামেরা ব্যবহার করে হামলায় বিধ্বস্ত এলাকা দেখানো, সেনা স্থাপনার কাছাকাছি ক্ষতিগ্রস্ত জায়গার নির্দিষ্ট অবস্থান জানানো এবং ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ বা ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধের দৃশ্য সম্প্রচার করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
নির্দেশনায় আরো উল্লেখ করা হয়েছে, সেন্সরশিপ বিভাগের অনুমোদন ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কোনো ভিডিও প্রকাশ করা যাবে না। কারণ এসব ভিডিও শত্রুপক্ষের তৈরি ভুয়া খবরও হতে পারে।
নতুন এই বিধিনিষেধগুলো তাৎক্ষণিকভাবেই কার্যকর করা হয়েছে। মঙ্গলবার ভোরে ইসরাইলের বন্দর নগরী হাইফার আলোকচিত্রীদের বন্দরে সম্ভাব্য ইরানি হামলার ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা স্থাপন করার সময় তাদের গ্রেফতার করা হয়।