হাজার হাজার মালয়েশিয়ান রাজপথে নেমে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের ঐক্য সরকারের সংস্কার কর্মসূচির ঘাটতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিরোধী দলগুলোর আয়োজনে শনিবারের (২৬ জুলাই) এই বিক্ষোভ ছিল ২০২২ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর আনোয়ার সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম বড় প্রতিবাদ।
রাজধানী কুয়ালালামপুরের বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়ে বিক্ষোভকারীরা স্বাধীনতা স্কয়ারে সমবেত হয়। তারা ‘পদত্যাগ করো আনোয়ার’ লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করে, যেখানে ডজনখানেক পুলিশ সদস্য কঠোর নজরদারি করে।
৩৫ বছর বয়সী ফাউজি মাহমুদ (রাজধানীর পার্শ্ববর্তী সেলাঙ্গর থেকে) বলেন, তিনি (আনোয়ার) ইতিমধ্যে তিন বছর দেশ শাসন করেছেন, কিন্তু তার দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেননি।’
তিনি সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘তিনি বিনিয়োগ আনতে অনেক দেশে গেছেন, কিন্তু আমরা এখনও কিছু দেখিনি। জীবনযাত্রার ব্যয় এখনও উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।’
আল জাজিরার রিপোর্টার রব ম্যাকব্রাইড বলেছেন, বিক্ষোভকারীরা ‘স্পষ্টভাবে বিশ্বাস করে যে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার সময় দেয়া সংস্কার ও স্বচ্ছতার প্রতিশ্রুতি রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন।’
তিনি যোগ করেন, ‘এটি কুয়ালালামপুরের রাস্তায় আমরা গত কয়েক বছরে দেখেছি এমন একটি বড় বিক্ষোভ।’
আনোয়ার ইব্রাহিম সংস্কারবাদী এজেন্ডা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন এবং দেশের বিভক্ত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও পক্ষপাত দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বিক্ষোভের কয়েক দিন আগে, তিনি জনগণের উদ্বেগ দূর করতে কিছু জনপ্রিয় ব্যবস্থা ঘোষণা করেন, যার মধ্যে রয়েছে সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের জন্য নগদ সহায়তা এবং জ্বালানির দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি।
এর আগে, বুধবার (২৩ জুলাই) আনোয়ার ঘোষণা করেন, ১৮ বছর বয়সী প্রত্যেক মালয়েশিয়ান নাগরিক আগামী ৩১ আগস্ট থেকে এককালীন ১০০ রিঙ্গিত (২৩.৭০ ডলার) পাবেন। এছাড়া প্রায় ১৮ মিলিয়ন মোটরযান ব্যবহারকারী ভর্তুকিযুক্ত মধ্যম-অকটেন জ্বালানি লিটার প্রতি ১.৯৯ রিঙ্গিতে (০.৪৭ ডলার) কিনতে পারবেন, যা বর্তমান দাম ২.০৫ রিঙ্গিতের (০.৪৯ ডলার) চেয়ে কম।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ঘোষণাগুলো জনগণের ক্রমবর্ধমান হতাশা প্রশমিত এবং শনিবারের (২৬ জুলাই) বিক্ষোভে অংশগ্রহণ নিরুৎসাহিত করার কৌশলগত পদক্ষেপ।
তবে জুনে স্বাধীন গবেষণা সংস্থা মেরদেকা সেন্টার ফর অপিনিয়ন রিসার্চ-এর জরিপে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ভোটার আনোয়ারের কাজের সন্তুষ্ট। তার অনুমোদন হার ৫৫%। এর মধ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোর রাজনৈতিক অস্থিরতা কমানো এবং আসিয়ানের সভাপতিত্বের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার প্রচেষ্টা অন্তর্ভুক্ত।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক প্রভাব
বিক্ষোভের মধ্যেও আনোয়ারের সরকার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সক্রিয়, বিশেষ করে রাশিয়া ও ইউরোপ সফরে বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা চলছে। তবে অভ্যন্তরীণভাবে জীবনযাত্রার ব্যয়, মুদ্রাস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের গতি নিয়ে সাধারণ মানুষের অসন্তোষ বাড়ছে।
এই বিক্ষোভ মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে আনোয়ার সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে ২০২২ সালের ঐতিহাসিক জোট সরকার গঠনের পর থেকে তার নীতিগুলো কতটা কার্যকর হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
আনোয়ার ইব্রাহিমের সরকার এখন একটি সূক্ষ্ম অবস্থানে রয়েছে—জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো, দুর্নীতি দমন এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে জনবিস্মৃতি দূর করতে হবে, অন্যথায় বিরোধী দল ও বিক্ষোভকারীদের চাপ আরও বাড়তে পারে।
মালয়েশিয়ার রাজপথে এই বিক্ষোভ শুধু অর্থনৈতিক সংকটেরই ইঙ্গিত নয়, বরং সরকারের প্রতি মানুষের ক্রমাগত অসন্তোষেরও প্রতিফলন। আগামী দিনগুলোতে আনোয়ার সরকার কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে, তা মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সূত্র: আল জাজিরা।
/এআই