চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শিগগিরই চালু হচ্ছে না সরাসরি কার্গো ফ্লাইট। তবে চালুর লক্ষ্যে চলছে জোর প্রস্তুতি। সব প্রক্রিয়া শেষ করতে আরও ছয় মাস সময় লাগতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত এপ্রিলে বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করে ভারত। এরপর থেকে চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালুর বিষয়টি আলোচনায় আসে।
ভারতীয় স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় কোনও দেশে পণ্য রফতানির জন্য বাংলাদেশকে দেওয়া দীর্ঘদিনের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। চলতি বছরের ৯ এপ্রিল দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সুবিধা বাতিলের কথা জানায়।
ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের পর চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালুর বিষয়টি আলোচনায় আসে। এমনকি চীনের একটি এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠানও চট্টগ্রামের সঙ্গে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালুর আগ্রহ প্রকাশ করে। তখন থেকেই মূলত শুরু হয় কার্গো ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি। তবে কার্গো ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নেওয়ার পর চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নানাবিধ সমস্যা উঠে আসে। যেসব সমস্যা রাতারাতি সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দরের সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এখনও কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। এ কারণে ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যা শিগগিরই টেন্ডারে উঠবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশা করছেন, প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে শেষ হতে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি নাগাদ সময় লাগতে পারে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে রফতানি কার্গো মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপ-আমেরিকায় নেওয়ার চাহিদা আছে। বর্তমানে ইডিএস স্ক্যানার না থাকায় সরাসরি ইউরোপ-আমেরিকায় পণ্য পাঠানো যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বিমানবন্দর থেকে শিপমেন্ট করা মালামাল মধ্যপ্রাচ্যে ইডিএস স্ক্যানার রয়েছে, এমন দেশে স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা সার্টিফাইড হয়ে ইউরোপে যায়। যা রফতানি প্রক্রিয়ায় জড়িত প্রতিষ্ঠানের জন্য জটিলতা সৃষ্টি করে। বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি বিমানবন্দরের কার্গো শাখায় এ সমস্যা নিরসনে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছেন।
বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে ব্যবসা পরিচালনা করছে কোরিয়ান শিল্প প্রতিষ্ঠান ইয়াং ওয়াং গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালুর বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা কার্গো নিরাপত্তা উন্নয়নের জন্য একটি ইডিএস স্ক্যানার কিনে দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে। এ ছাড়া একটি চায়না প্রতিষ্ঠানও চট্টগ্রাম থেকে কার্গো ফ্লাইট চালুর বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালু করতে হলে দুটি ইডিএস স্ক্যানার স্থাপন, কার্গো শেড নির্মাণ এবং অন্যান্য অবকাঠামোগত কাজ শেষ করতে হবে। এই কারণেই এখনও সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালু হয়নি। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক মানের কার্গো অপারেশনের উপযোগী হয়ে উঠবে। প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে শেষ হতে আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ লেগে যেতে পারে।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইট চালুর সরকারি উদ্যোগ সময়োপযোগী ও ইতিবাচক পদক্ষেপ। চট্টগ্রাম দেশে তৈরি পোশাক শিল্পের দ্বিতীয় বৃহত্তম অঞ্চল। এখানকার বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল ও উৎপাদন কেন্দ্র থেকে নিয়মিতভাবে পণ্য আমদানি-রফতানি হয়ে থাকে। এতদিন চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি কোনও কার্গো ফ্লাইট না থাকায় রফতানিকারকদের পণ্য ঢাকা হয়ে অথবা অন্য দেশের মাধ্যমে পাঠাতে হতো। এতে সময়, খরচ ও ভোগান্তি তিনটিই বেড়ে যেতো। সরকার চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালুর যে উদ্যোগ নিচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে একটি নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে।’
এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে বিমানবন্দরের অবকাঠামো ও কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেই সঙ্গে আরএ-৩ (আরএ-৩ নিয়ন্ত্রিত এজেন্ট-তৃতীয় দেশ) হলো এমন একটি কার্গো হ্যান্ডলিং বা ফরওয়ার্ডিং সংস্থা, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিরাপত্তা স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী অনুমোদিত। ইইউর বাইরে অবস্থিত। এটি ইউরোপে পাঠানোর উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করা কার্গোকে নিরাপদ হিসেবে সার্টিফাই করার ক্ষমতা রাখে। এ ছাড়া ইডিএস হলো এমন একটি উন্নত প্রযুক্তির স্ক্যানিং সিস্টেম, যা লাগেজ বা কার্গোর মধ্যে বিস্ফোরক দ্রব্য শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ইডিএস স্ক্যানার চালু করতে হবে।
‘অনেক সময় সংকট আমাদের সামনে নতুন সুযোগের পথ খুলে দেয়। তেমনি চট্টগ্রাম বিমানবন্দর এখন এক নতুন সম্ভাবনার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। সরকারের এই উদ্যোগকে পূর্ণতা দিতে সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’
এ বিষয়ে ইস্টার্ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএর সাবেক ফার্স্ট ভাইস-প্রেসিডেন্ট নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘তৈরি পোশাকের বিষয়ে আগে কিছুটা ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করা হতো। ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের পর তা হচ্ছে না। তবে ঢাকা বিমানবন্দর এবং সিলেট বিমানবন্দরে কার্গো পরিবহন বেড়েছে। চট্টগ্রাম থেকেও কার্গো ফ্লাইট চালুর বিষয়ে প্রস্তুতি চলছে। এতে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের পর দেশে সুযোগ সুবিধ আরও বেশি বেড়েছে। যা দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য ইতিবাচক। চট্টগ্রাম থেকে কার্গো ফ্লাইট চালু হলে এখানকার ব্যবসায়ীরা এ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।’

















