কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে নিজ বাড়ির পুকুর থেকে শতবর্ষী এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করেছেন বৃদ্ধের এক পক্ষের স্ত্রী ও সন্তানরা। তবে অপর পক্ষের সন্তানদের অভিযোগ, সম্পতি লিখে নেওয়ার পর চলমান দ্বন্দ্বকে ঘিরে তাকে পুকুরে ফেলে হত্যা করেছেন দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী-সন্তান। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত পক্ষ। শনিবার (৩০ আগস্ট) সকালে নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা থানার শিঙ্গিমারী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে।
মৃত বৃদ্ধের নাম বছির উদ্দিন। তিনি উপজেলার কচাকাটা থানার বল্লভেরখাষ ইউনিয়নের শিঙ্গিমারী গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। বছিরের দ্বিতীয় পক্ষের সন্তানদের দাবি, পুকুরে গরুকে গোসল করাতে গিয়ে তিনি পানিতে পড়ে মারা যান। তবে প্রথম পক্ষের সন্তানদের দাবি, বয়োবৃদ্ধ বছিরের গরুকে গোসল করানোর শক্তি ছিল না। এমনকি তিনি একা ঠিকমতো হাঁটতেও পারতেন না।
নিহত বৃদ্ধের দুই পরিবারে কথা বলে জানা গেছে, বছির উদ্দিনের প্রথম স্ত্রী দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে মারা যান। পরবর্তী সময়ে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় পক্ষের দুই ছেলে তিন মেয়ে রয়েছে। তিনি দ্বিতীয় পক্ষকে নিয়ে আলাদা বাড়িতে থাকতেন। প্রথম পক্ষের দুই ছেলে শাহ জামাল, শাহ আলম এবং দ্বিতীয় পক্ষের দুই ছেলে নুর আলম ও রহিমকে ভোগদখলের জন্য প্রায় তিন একর জমি সমানভাবে ভাগ করে দেন।
চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ওই বৃদ্ধের ২ দশমিক ১১ একর জমি দ্বিতীয় পক্ষের দুই সন্তান ‘লিখে নেন’। এতে প্রথম পক্ষের বড় ছেলের আবাদি ও ছোট ছেলের বাড়ির চালাসহ আবাদি জমি সবই চলে যায় দ্বিতীয় পক্ষের দুই ছেলের নামে। এ নিয়ে দুই পক্ষের সন্তানদের মাঝে দ্বন্দ্ব চলছিল। ‘লিখে নেওয়া’ জমি দখলে নিতে বড় ভাইসহ স্থানীয় অনেকের নামে ৫ লাখ টাকার চাঁদাবাজির একটি পিটিশন মামলা করেন নুর আলম।
বৃদ্ধের প্রথম পক্ষের বড় ছেলে শাহ জামাল বলেন, ‘বাবার বয়স একশ বছরের উপরে। তিনি অন্যের সহযোগিতায় চলাফেরা করেন। আমার বিমাতা ছোট ভাইয়েরা তাকে ভুলভাল বুঝিয়ে ২ দশমিক ১১ একর জমি লিখে নেয়। এর পর থেকে বিষয়টি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। বেশ কিছুদিন থেকে স্থানীয়রা বিষয়টি মীমাংসা করার উদ্যোগ নেন। এর মাঝে আজকে শুনি আমার বাবা পুকুরের পানিতে পড়ে মারা গেছে। তিনি ঠিকমতো হাঁটতে পারে না। তিনি কেমন গরু নিয়ে পুকুরপাড়ে গেলেন। পরিকল্পিতভাবে আমার বিমাতা দুই ভাই বাবাকে পানিতে ফেলে হত্যা করেছে।’
প্রতিবেশী নুরজামাল বলেন, ‘মৃত বছিরের বাড়ির সামনে দিয়ে সকালে যাওয়ার সময় আমি ঝগড়া শুনতে পাই। নুর আলম ও রহিমকে তার বাবার সঙ্গে তর্কাতর্কি করতে শুনি। কিছুক্ষণ পর আমার সবজিক্ষেতে সবজি তুলে ফেরার সময় দেখতে পাই, তারা তাদের বাবাকে পুকুরপাড়ে নিয়ে আসছে। আমাকে দেখে তারা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে যায়। তাদের বয়োবৃদ্ধ বাবা মাঝেমধ্যে কাপড়ে পায়খানা করেন। আমি ভাবছি, আজও হয়তো পরিষ্কার করতে নিয়ে যাচ্ছে। পরে কিছু সময় বাদে চিৎকার শুনতে পাই যে গরু পানিতে পড়েছে। আমি দৌড়ে এসে দেখতে পাই, রহিম ও তার মা ছকিনা বেগম বৃদ্ধ বছিরকে পানি থেকে তুলছেন। এ সময় নুর আলমকে দৌড়ে পালাতে দেখি।’ পুলিশের কাছে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী একই সাক্ষ্য দিয়েছেন বলে দাবি করেন নুরজামাল।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বছিরের দ্বিতীয় পক্ষের ছোট ছেলে আব্দুর রহিম বলেন, ‘বাবা নিজে নিজেই গরুকে পুকুরে গোসল করাতে গিয়ে পানিতে পড়ে গেছেন। আমি ও মা সে সময় বাড়িতে ছিলাম না। পরে পুকুর পাড়ে আমার বাবার লুঙ্গি ও স্যান্ডেল দেখে পুকুরে নেমে খোঁজাখুঁজি করে পানির নিচ থেকে বাবার লাশ উদ্ধার করি।’
নুর আলমের দৌড়ে পালানোর প্রশ্নে রহিম বলেন, ‘নুর আলম বহুদিন থেকে বাড়িতে নেই। তিনি তার মামাশ্বশুরের বাড়িতে থাকেন। তার পালানোর কথা ভিত্তিহীন।’ তবে বৃদ্ধের মৃত্যুর খবরে দুপুর ২টা পর্যন্ত সব সন্তান ও আত্মীয়-স্বজন আসলেও ছেলে নুর আলম আসেননি। তার অনুপস্থিতি প্রতিবেশীদের সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
কচাকাটা থানার উপপরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, ‘লাশ উদ্ধারের ঘটনায় আপাতত অপমৃত্যু মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুড়িগ্রাম মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’