সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর রেলপথ থেকে অবরোধ তুলে নিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি পূবালী ব্যাংকের বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় দেওয়া তালাও খুলে দিয়েছেন তারা।
এর আগে কম্বাইন্ড (সমন্বিত) ডিগ্রির আন্দোলনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও ছয় দফা দাবিতে মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় দ্বিতীয় দিনের মতো রেলপথ অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এরপর দুপুর ১টার দিকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ভবনে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন পূবালী ব্যাংকের বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় তালা ঝুলিয়ে দেন। সেখানে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকের আশ্বাসে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে রেললাইন অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন তারা। এরপর ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। আন্দোলনের জেরে হল ছাড়ার নোটিশ দিলেও এখনও হল ছাড়েননি অনেক শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাসে অবস্থান করেই আন্দোলন করছেন তারা।
পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থী এহসানুল হক (হিমেল) বলেন, ‘প্রক্টরিয়াল টিম থেকে আমাদের জানানো হয়েছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আমাদের সঙ্গে বৈঠকের সময় দেবেন। আলোচনার আশ্বাসে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান রক্ষার্থে আমরা পূবালী ব্যাংকের তালা খুলে দিয়েছি এবং রেলপথ অবরোধ তুলে নিয়েছি। আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত। আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে আমরা আবার আমাদের কর্মসূচি শুরু করব এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
পূবালী ব্যাংক বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘ছাত্ররা এসে তালা দিয়েছে। আমরা তাড়াতাড়ি বের হয়ে এসেছি। ব্যাংক তো আসলে বন্ধ রাখা যায় না। আমাদের কাস্টমার মূলত বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরাই। গতকাল এবং আজও শিক্ষকদের বেতন তোলা নিয়ে কাজ হয়েছে। আমাদের অনলাইন সেবা তো চালু আছে। গ্রাহকেরা চাইলে সেখানে প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারবেন। অন্য কোনো প্রয়োজন থাকলে সে ক্ষেত্রে তাদের কষ্ট করে ময়মনসিংহ শহরের শাখায় যেতে হবে।’
এদিকে, শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মৎস্য অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম সরদারকে প্রধান করে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
প্রক্টর অধ্যাপক আব্দুল আলিম বলেন, ‘আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি তদন্ত কমিটি ঘটনার তদন্ত করবে। শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দেবে কমিটি। এরপর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, গত রবিবার সকাল ৯টা থেকে ভেটেরিনারি ও পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের আশপাশে জড়ো হতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের একটাই দাবি ছিলো- ‘এক পেশায় এক ডিগ্রি, কম্বাইন্ড ডিগ্রি’। বেলা ১১টায় একই মিলনায়তনে কম্বাইন্ড ডিগ্রি ইস্যু নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা শুরু হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি ইন অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি, ডক্টর অফ ভেটেরিনারি মেডিসিন এবং দুই অনুষদের সমন্বয়ে কম্বাইন্ড ডিগ্রি; এই তিনটি ডিগ্রিই থাকবে। তবে শিক্ষার্থীরা তিন ডিগ্রি মেনে নেননি। তারা চান- ‘এক পেশায় এক ডিগ্রি, কম্বাইন্ড ডিগ্রি’। ফলশ্রুতিতে দুপুর দেড়টার দিকে কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত আশানুরূপ না হওয়ায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে তালা লাগিয়ে দেন। এতে উপাচার্যসহ আড়াই শতাধিক শিক্ষক অবরুদ্ধ হন। শিক্ষকদের ছয় ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখার দ্বিতীয়বারের মতো কাউন্সিলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
একপর্যায়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলমসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হন। এর কিছুক্ষণ পর বহিরাগতদের একটি মিছিল লাঠিসোঁটা নিয়ে ধাওয়া দিলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কিছুটা পিছু হটে। বহিরাগতরা হামলা চালিয়ে ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভাঙচুর করে। হামলা চলাকালে ক্যাম্পাসের শিল্পাচার্য জয়নাল আবেদিন মিলনায়তনে অবরুদ্ধ শিক্ষক ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা পেছনের দরজা দিয়ে নিরাপদে সরে যান। এ সময় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বহিরাগতদের হামলায় এক নারী শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।

















