বিয়ে মানেই ফুলের পাপড়ি মোড়ানো সাজানো মঞ্চ, কনে-বরের উজ্জ্বল চোখ ধাঁধানো সাজ আর অতিথির কোলাহল। কিন্তু এবার মানিকগঞ্জে ব্যতিক্রমী বিয়ের আসর বসলো হাসপাতাল অভ্যন্তরের বিছানায়। কনে লাল শাড়িতে সেজে আসেন ঠিকই কিন্তু বর অল্পকিছু সময়ের জন্য মাথায় বিয়ের মুকুট পরে শয্যাশায়ী অবস্থায় হাত-পায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা। হাসপাতালের কক্ষটাই পরিণত হলো জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় আসরে।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাতে শহরের আফরোজা বেগম জেনারেল হাসপাতালে ঘটে এই নজিরবিহীন দৃশ্য।
পরিবারের স্বজনরা জানান, শহরের চাঁনমিয়া লেনের বাসিন্দা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অরবিন্দ সাহার বড় ছেলে অভিজিৎ সাহার বিয়ের তারিখ অনেক আগেই ঠিক করা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত দিনের আগেই ঘটে অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা। ঢাকা থেকে ফেরার পথে ধামরাইয়ে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন অভিজিৎ। দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় তাকে।
অবস্থা সঙ্গিন হলেও দুই পরিবারের সিদ্ধান্ত, তারিখ বদল হবে না। তাই হাসপাতালের বিশেষ কক্ষেই হয়ে গেলো বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। হাসপাতালের বিছানাতেই সাতপাকে বাঁধলেন অভিজিৎ সাহা। হিন্দু বাঙালি বিয়ের মূল আচার ‘সাতপাক’। সাধারণত ছাদনাতলায় কনেকে পিঁড়িতে বসিয়ে বরকে ঘিরে ঘোরানো হয়। কিন্তু এবার ঘটলো অন্যরকম এক দৃশ্য। বরকে পিঁড়িতে নয়, হাসপাতালের বিছানাতেই রাখা হলো। কনে ঘুরলেন তার চারপাশে। পানপাতায় মুখ ঢাকা, চারপাশে সীমিত কিছু আত্মীয়স্বজন আর হাসপাতালের কর্মীরা—মুহূর্তটা যেন সিনেমার দৃশ্যকেও হার মানালো।
আফরোজা বেগম জেনারেল হাসপাতালের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরাসরি সম্প্রচার করে পুরো আয়োজন। লাইভে হাজারো দর্শক চোখ মেললেন এমন এক বিয়ের সাক্ষী হতে, যা খুব কম মানুষই দেখার সৌভাগ্য পান। স্যালাইনের বোতল, ব্যান্ডেজ, আর হাসপাতালের সাদা দেয়ালও থামাতে পারেনি বিয়ের আনন্দ।
বরের বাবা ব্যবসায়ী অরবিন্দ সাহা বলেন, ‘আমরা ভাবতেই পারিনি হাসপাতালে এমন আনন্দ হবে। তারিখ যেহেতু আগে থেকে ঠিক ছিল, তাই পিছিয়ে না দিয়ে নির্ধারিত দিনেই বিয়েটা সেরে নিলাম। হাসপাতালে এমন আয়োজন কোনোদিন ভুলতে পারবো না।’
ব্যতিক্রমী এ আয়োজন মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। নেট দুনিয়ায় ঝড়ে কেউ লিখেছেন, ‘ভালোবাসা হাসপাতালের বিছানায়ও ফোটে।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘সিনেমার গল্পকেও হার মানালো এই বাস্তব বিয়ে।’ মানিকগঞ্জের এই বিয়ে এখন হয়ে উঠেছে আলাপের বিষয়, ভাইরাল ভিডিও থেকে শুরু করে নানা রম্য আলোচনা।

















