ঋণের দায়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছিলেন মিনারুল ইসলাম। আত্মহত্যার আগে স্ত্রী মনিরা খাতুন, ছেলে মাহিম ও মেয়ে মিথিলাকে হত্যা করেন। সেই মিনারুলের বাড়িতে আবার ঋণ করে হলো চল্লিশার আয়োজন।
মিনারুল ইসলাম রাজশাহীর পবা উপজেলার বামনশিকড় গ্রামের রুস্তম আলীর ছেলে। শনিবার তাদের বাড়িতে চল্লিশার আয়োজন করা হয়। দুপুরে বামনশিকড় গ্রামে চল্লিশায় প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষকে মুড়িঘণ্ট দিয়ে ভাত খাওয়ানো হয়েছে।
গত ১৫ আগস্ট নিজ বাড়ি থেকে মিনারুল ইসলাম (৩৫), তার স্ত্রী মনিরা খাতুন (৩০), ছেলে মাহিম (১৪) ও মেয়ে মিথিলার (৩) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মাহিন খড়খড়ি উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়তো। আর মিনারুল কৃষিকাজ করতেন। লাশের পাশে চিরকুট পাওয়া যায়, যাতে মিনারুল স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। ওই চিরকুটে মিনারুল লিখেছিলেন, ‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে। এত কষ্ট আর মেনে নিতে পারছি না। তাই আমাদের বেঁচে থাকার চেয়ে মরে গেলাম, সেই ভালো হলো। কারও কাছে কিছু চাইতে হবে না।’
শনিবার দুপুরে বামনশিকড় গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ভ্যানে চড়ে আসছেন আত্মীয়-স্বজনরা। দাওয়াত পেয়েছেন গ্রামের মানুষও। মিনারুলের বাবা রুস্তম আলীর বাড়ির সামনে-পেছনে দুটি প্যান্ডেল করা হয়েছে। ভাতের সঙ্গে ছিল ডাল ও মুড়িঘণ্ট। রুস্তম ঘুরে ঘুরে আমন্ত্রিত অতিথিদের খাওয়ার তদারকি করছেন।
এ আয়োজনের বিষয়ে রুস্তম আলী বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানকে কেউ চল্লিশা বলে। কেউ বলে ফয়তা। সমাজের মানুষকে নিয়ে এটা করতে হয়। বাপ-দাদার আমল থেকেই দেখে আসছি। আমিও মনের আবেগে করলাম। যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী করে। আমি গরিব মানুষ, মাংস করতে পারিনি। মাছ দিয়ে মুড়িঘণ্ট আর ডাল করেছি। আশপাশের মানুষজন বলছিল, চার জনের মরার কারণে বাড়ি ভারী ভারী লাগছে। ছোট ছিলেপিলেরা ভয় পাচ্ছিল। অনুষ্ঠানটা করলাম যাতে ভয় ভাঙে। বাড়ি যেন পাতলা হয়। দুপুরে দোয়া হয়েছে। তারপর খাওয়াদাওয়া। প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হলো। আত্মীয়-স্বজন ও সমাজের মিলিয়ে ১ হাজার ২০০ মানুষের আয়োজন করা হয়েছিল।’
টাকা জোগাড় হলো কীভাবে জানতে চাইলে রুস্তম আলী বললেন, ‘সবই ধারদেনা। আমার তো জমানো টাকা নেই।’ শোধ করবেন কীভাবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, ‘১৫-১৬ কাঠা জমি আছে। এক কাঠা বেচবো, বেচে ধার শোধ করবো। তা ছাড়া তো আর কোনও উপায় নেই।’
পবার পারিলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাঈদ আলী মুর্শেদ বলেন, ‘শুনেছি এমন আয়োজন করার কথা। অনকে গিয়েছিল। ইসলামের দৃষ্টিতে এটা নাই। কিন্তু কেউ মারা গেলে এটা করে। চল্লিশা আমাদের এলাকার রেওয়াজ। তাই মৃত্যুর পর প্রায় সবার বাড়িতে আয়োজন করা হয়।’