চাকরির আশ্বাস দিয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দিনভর রংপুরের পীরগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নুর মোহাম্মদ মন্ডলের বাড়িতে অনশন ও বিক্ষোভ করেছেন শতাধিক যুবক।
সোমবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার পৌর শহরের ওসমানপুর এলাকায় ওই আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে এ অনশন পালন করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পীরগঞ্জ থানার ওসি শফিক আহামেদ।
পুলিশ ও অনশনকারীরা জানিয়েছেন, রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালে ২০২৩-২৪ সালে উপজেলার শতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী ও দফতরি পদে নিয়োগের নামে জনপ্রতি ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা করে নিয়েছিলেন নুর মোহাম্মদ মন্ডল। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্বশুরবাড়ি পীরগঞ্জ হওয়ায় এবং শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ আছে বলে চাকরিপ্রার্থীদের আশ্বস্ত করে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।
২/৩ মাসের মধ্যে সবাইকে চাকরি দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু দফায় দফায় সময় দিয়েও কাউকেই চাকরি দিতে পারেননি। ফলে চাকরিপ্রার্থীরা দিনের পর দিন তার কাছে ধরনা দিলেও তাদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দেননি। উল্টো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত ও কাছের লোক বলে নানান হুমকি-ধমকি আর আশ্বাস দিয়ে আসছিলেন।
কিন্তু জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন হলে উপজেলা পরিষদরও বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর কিছুদিন পালিয়ে বেড়ালেও কিছুদিন ধরে প্রকাশ্যেই ঘুরছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মন্ডল।
এদিকে চাকরি না পাওয়ায় টাকা ফেরত পেতে শতাধিক যুবক নুর মন্ডলের বাড়িতে গেলে বিভিন্ন তারিখে টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিলেও সেটি করেননি। সর্বশেষ সোমবার টাকা দেবেন বলে তারিখ দেন। সকাল থেকে পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা চাকরিপ্রত্যাশীরা তার পীরগঞ্জ পৌর শহরের ওসমানপুর এলাকার বাড়িতে অবস্থান নেন। তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা নুর মোহাম্মদ কৌশলে বাড়ি থেকে সটকে পড়েন।
সোমবার সকাল ৯টা থেকে বাড়িতে অবস্থান নিয়ে অনশন শুরু করেন শতাধিক চাকরিপ্রত্যাশী। দুপুর ১২টার দিকে নুর মোহাম্মদ মন্ডলের বাসা থেকে জানানো হয়, তিনি বাসায় নেই। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন প্রতারিতরা। এ সময় টাকা না দিলে বাড়ির সামনেই বিষপান করে আত্মহত্যা করার হুমকি দেন। অনেকেই সঙ্গে বিষ নিয়েও আসে। এক পর্যায়ে অনশনকারীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। অনেকেই বাসার সামনে শুয়ে পড়ে টাকা ফেরতের দাবিতে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন।
এ সময় জামদানি গ্রামের আনোয়ারুল জানান, নৈশপ্রহরীর সরকারি চাকরির কথা বলে তার কাছে ৮ লাখ টাকা নিয়েছেন নুর মোহাম্মদ মন্ডল- কিন্তু চাকরি দেননি, এখন টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না। শেষ সম্বল জমি ও বাড়ি বন্ধক রেখে টাকা দিয়েছেন। টাকা ফেরত না পেলে আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় থাকবে না বলে জানান।
একই কথা বলেন বগের বাড়ি গ্রামের শামসুল হক। অবস্থা বেগতিক দেখে পীরগঞ্জ থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে অনশন ও অবস্থানকারীদের লিখিত অভিযোগ দেওয়ার আহ্বান জানালে তারা ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দেন। এরপর বিকাল ৪টায় তারা ফিরে যান।
পীরগঞ্জ থানার ওসি শফিক আহামেদ বলেন, আমি তাদের বলেছি লিখিত অভিযোগ দিলে তিনি কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাতের মধ্যে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে।