দেশের ১২টি জেলায় আজ বৃহস্পতিবার থেকে মামলাপূর্ব মধ্যস্থতার বিধান কার্যকর হচ্ছে। বুধবার সন্ধ্যায় সিলেটে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর, দিনাজপুর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও রাঙামাটি– এই ১২টি জেলায় এ বিধান কার্যকর হবে।
সিলেট শহরতলির গ্র্যান্ড সিলেট হোটেলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘হয়রানি ছাড়া স্বল্প খরচে জনগণের বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত সরকার এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে বিচারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে মানুষের হয়রানি অনেকাংশে কমে যাবে। এর মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে।’ তিনি লিগ্যাল এইডের বিষয়টি মানুষকে জানাতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
আইন উপদেষ্টা জানান, দায়িত্ব নেওয়ার পর বিচার বিভাগ সংস্কারের ক্ষেত্রে তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘সিভিল ও ক্রিমিনাল আদালতকে পৃথক করা হয়েছে। ২২৫ বিচারকের পদ একদিনে সৃষ্টি হয়েছে। সিআরপিসি ও সিপিসি সংশোধন করা হয়েছে। ডিজিটাল ও সাইবার নিরাপত্তা আইন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করা হয়েছে। জনগণ এরই মধ্যে এর সুফল পেতে শুরু করেছে।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন– জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শেখ আশফাকুর রহমান। অন্যদের মধ্যে জার্মান ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশনের ডেপুটি হেড জেনিস হুসেন, জিআইজেডের প্রতিনিধি মুর্টিনা বাকহার্ড, সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আব্দুল হালিম চৌধুরী।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আইনগত সহায়তা সম্প্রসারণ ও গতিশীল করার লক্ষ্যে চলতি বছরের ১ জুলাই আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫ জারি করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় অধ্যাদেশ আজ বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হচ্ছে। এ অধ্যাদেশ কার্যকরের মাধ্যমে সরকার তফসিলভুক্ত পারিবারিক বিরোধ আইন, ২০২৩-এ অন্তর্ভূক্ত বিরোধ; বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১ এ উল্লিখিত বিরোধ; সহকারী জজ আদালতের এখতিয়ারভুক্ত বণ্টন সম্পর্কিত বিরোধ; অগ্রক্রয় সম্পর্কিত বিরোধ; পিতামাতার ভরণপোষণ সম্পর্কিত বিরোধ; যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ এ বর্ণিত যৌতুক সম্পর্কিত অভিযোগ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এ বর্ণিত যৌতুকের জন্য নির্যাতন সম্পর্কিত অভিযোগের বিষয়ে আদালতে মামলা দায়েরের আগে মধ্যস্থতার বিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে লিগ্যাল এইড অফিসারের মাধ্যমে এ মধ্যস্থতা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এ ছাড়া স্পেশাল মেডিয়েটর হিসেবে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজদের পদায়নের বিধান রাখা হয়েছে। সিলেটে এরই মধ্যে একজন অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজকে পদায়ন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে তিনি কার্যক্রম শুরু করবেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এ অধ্যাদেশ কার্যকর হলে কেবল মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া ব্যর্থ হলেই আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে। অধ্যাদেশে বিরোধী পক্ষ কর্তৃক স্বাক্ষর করা এবং চিফ লিগ্যাল এইড অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত মধ্যস্থতা চুক্তি চূড়ান্ত, বলবৎযোগ্য এবং পক্ষগণের ওপর বাধ্যবাধকতার বিধান রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, মধ্যস্থতা প্রক্রিয়ায় সম্পাদিত চুক্তিকে আদালতের চূড়ান্ত আদেশের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে এবং আদালতের মাধ্যমে আদেশ জারি করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।