রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পোষ্য কোটা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বসেছেন সদস্যরা। রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বেলা ৩টায় উপাচার্যের বাসভবনে এই সিন্ডিকেট সভা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীবের সভাপতিত্বে এই সিন্ডিকেট সভা শুরু হয়েছে। এতে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা (পোষ্য কোটা) বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।
এদিকে, শনিবার পোষ্য কোটা নিয়ে আন্দোলন কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের দ্বারা শিক্ষক লাঞ্ছনার অভিযোগে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। লাঞ্ছিতের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির আওতায় না নিয়ে আসা পর্যন্ত তারা এই কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের (রাকসু) সব কার্যক্রম এই কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এক জরুরি অ্যাকাডেমিক সভায় পোষ্য কোটা পুনর্বহালের পর থেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীসহ সাবেক সমন্বয়ক ও রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতারা একত্র হয়ে প্রতিবাদ করেন। এদিন রাত ১১টা পর্যন্ত আন্দোলন চালান তারা। পরদিন শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।
রাতভর আমরণ অনশনের পর বিকাল সাড়ে ৩টায় তারা উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে। এ সময় তারা উপ-উপাচার্যের গাড়ি আটকান এবং সেখানে টাকা ছুড়ে মারেন। এরপর তারা উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মাইন উদ্দিন খানের বাসভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। এতে তিনি তার বাসভবনে প্রবেশ করতে না পারায় প্রক্টর মাহবুবুর রহমানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরি ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে আবারও শিক্ষার্থীদের বাধার সম্মুখীন হন।
এ সময় কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষক ও উপ-উপাচার্যের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি হয়। এই ধস্তাধস্তিতে শিক্ষার্থীসহ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন। এরপর কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মাঈন উদ্দিন খান, রেজিস্ট্রার ইফতেখার আলম মাসউদ, প্রক্টর মাহবুবুর রহমান, রাকসু প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এনামুল হকসহ অনেকে।
রাতভর এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে রাত পৌনে ২টায় পোষ্য কোটার ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করেন উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব এবং আজ রবিবার জরুরি সিন্ডিকেট সভায় তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আশ্বাস দেন তিনি। এরপরই থেকে কর্মসূচি থেকে ধীরে ধীরে সরে আসেন শিক্ষার্থীরা। রাত সাড়ে ৩টার মধ্যে শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যান।
প্রসঙ্গত, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে চলতি বছরের গত ২ জানুয়ারি পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব। এরপর থেকেই শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পোষ্য কোটাকে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা দাবি করে একের পর এক আন্দোলন শুরু করেন। সর্বশেষ গত ১৭ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে ১৮ তারিখের মধ্যে দাবি আদায় না হলে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দেন তারা।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার বিকালে এক জরুরি অ্যাকাডেমিক কমিটির সভা ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ওই সভায় ১০ শর্তে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।