রংপুরের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও বাংলা ট্রিবিউন এবং ঢাকা ট্রিবিউনের রংপুর প্রতিনিধি লিয়াকত আলী বাদলকে মব সৃষ্টি করে মারধরের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন সাংবাদিকরা। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে অংশ নেন রংপুরে কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা। পাশাপাশি এ ঘটনায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক।
মানববন্ধনে সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, আগামীকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার মধ্যে মামলার আসামিরা গ্রেফতার না হলে পরদিন রংপুর মহানগর পুলিশ কার্যালয় ঘেরাও করা হবে। একইসঙ্গে আসামিদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত রংপুর সিটি করপোরেশনের সব ধরনের খবর বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
এর আগে রবিবার রাতে রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমা, লাইসেন্স শাখার কর্মকর্তা মিজু, প্রশাসনিক কর্মকর্তা শান্ত, বিএনপি নেতা লিটন পারভেজ ও রকিসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে রংপুর নগরের কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন হামলার শিকার সাংবাদিক লিয়াকত আলী। মামলায় ৩০ থেকে ৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
সাংবাদিকের ওপর হামলার প্রতিবাদে রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের ব্যানারে সোমবার দুপুরে মানববন্ধনে অংশ নেন রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরপিইউজে), রংপুর প্রেসক্লাব, রংপুর রিপোর্টাস ক্লাব, রিপোর্টাস ক্লাব রংপুর, সিটি প্রেসক্লাব, রংপুর রিপোর্টাস ইউনিটি, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন রংপুর, টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোশিয়েশন রংপুর, রংপুর অনলাইন জানালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা।
রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেকের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মাযহারুল মান্নান, সিটি প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বপন চৌধুরী, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বাপ্পী, দৈনিক যুগান্তরের জেলা প্রতিনিধি মাহবুব রহমান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধি রেজাউল ইসলাম মানিকসহ অন্যান্য সাংবাদিক ও নেতৃবৃন্দ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, লিয়াকত আলী বাদল রংপুর সিটি করপোরেশনের অটোরিকশা লাইসেন্স বাণিজ্যে পাঁচ কোটি টাকার দুর্নীতির খবর প্রকাশ করায় হামলার শিকার হয়েছেন। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর লাইসেন্স বিতরণ বন্ধ হয়ে যায়। এতে ক্ষুব্ধ হওয়া চক্র তাকে তুলে নিয়ে হত্যাচেষ্টা চালায় এবং মারধর করে। সেইসঙ্গে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তাকে ক্ষমা চাওয়ানোর চেষ্টা চালানো হয়।
রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সরকার মাযহারুল মান্নান কাল রাত ১২টার মধ্যে হামলার সঙ্গে জড়িত মব সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের গ্রেফতারের দাবি জানান। রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহীকে প্রত্যাহার এবং প্রতিবাদ জানাতে যাওয়া সাংবাদিকদের হামলাকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আগামী বুধবার দুপুর ১২টায় রংপুর মেট্রোপলিন পুলিশের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে বলে ঘোষণা দেন।
সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদল জানান, গত ১৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক সংবাদে ‘রংপুরে জুলাই যোদ্ধাদের নামে অটোরিকশার লাইসেন্স, ৫ কোটি টাকা বাণিজ্যের পাঁয়তারা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন করেন তিনি। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কাচারিবাজার মোড়ে ছিলেন তিনি। তখন জুলাই যোদ্ধা পরিচয় দেওয়া এনায়েত রকি ফোন করে তার অবস্থান জেনে দলবল নিয়ে সেখানে যান। সেখানে মব তৈরি করে তাকে সিটি করপোরেশনে তুলে নিয়ে আসেন। স্থানীয় বিএনপি নেতা সাবেক কাউন্সিলর লিটন পারভেজের প্রত্যক্ষ মদতে তাকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। ওই সময় তার মোবাইল কেড়ে নিয়ে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে চাপ দিয়ে বলা হয় সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গিয়ে বলতে হবে, প্রকাশিত খবরটি ছিল মিথ্যা। এরপর সিটি করপোরেশন কার্যালয়ের দোতলায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষের সামনে বসিয়ে রেখে নির্যাতন করা হয়। খবর পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে গিয়ে সাংবাদিক বাদলকে উদ্ধার করেন।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক বলেন, ‘আমার ওপর যে হামলা হয়েছে, তা পরিকল্পিত। আমাকে ধরে আনলে, মব করলে, মেরে ফেললে, পঙ্গু করলে তো আমি আর রিপোর্ট করবো না, সেজন্যই তারা কাল আমাকে তুলে এনে মারধর করা হয়। দেশের সাংবাদিক ভাইদের কাছে আমার অনুরোধ, সবাই প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। না হয়, আজ আমার ওপর, কালকে আরেক সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটতে থাকবে।’
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, ‘সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলার আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’