সংবাদ প্রকাশের জেরে রংপুরের সিনিয়র সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলকে অপহরণ করে তুলে নিয়ে নির্যাতন এবং মব তৈরি করে মারধর ও হেনস্তার ঘটনায় মামলায় আরও একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে রকিবুল ইসলাম সাগর নামে ওই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে এই ঘটনায় দুই জনকে গ্রেফতার করলো পুলিশ।
অন্যদিকে, সাংবাদিক বাদলকে হেনস্তা ও নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত থাকার ঘটনায় সিটি করপোরেশনের তিন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে মঙ্গলবার রাতে জানিয়েছেন, এই ঘটনার জেরে সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স শাখার প্রধান মিজানুর রহমান মিজু, প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর কবির শান্ত এবং সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা তন্ময়কে বদলি করা হয়েছে। পুরো ঘটনা তদন্ত করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রংপুর মহানগর পুলিশের কোতয়ালি থানার ওসি আতাউর রহমান জানান, মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত সোয়া ১টায় রংপুর মহানগরীর রাধাবল্লভ এলাকা থেকে আসামি রকিবুল ইসলাম সাগরকে গ্রেফতার করা হয়। সাগর নগরীর শালবন মিস্ত্রিপাড়ার মসসিন মিয়ার ছেলে। সে মামলার এজাহারভুক্ত ৬ নম্বর আসামি।
এর আগে সোমবার রাতে গ্রেফতার করা হয় এজাহারনামীয় ৫ নম্বর আসামি রতন মিয়াকে। আসামি রতন মঙ্গলবার রাতে রংপুর অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন আমলি আদালতের বিচারক রাশেদ হোসাইনের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে। সে এ ঘটনার সঙ্গে নিজের এবং জড়িতদের বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে জবাববন্দি প্রদান করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা এস আই সুদীপ্ত শাহীন। তিনি বলেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আসামি রতনের ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি যাচাই করে দেখা গেছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
এদিকে তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও মামলার প্রধান আসামিসহ তাদের ইন্ধনদাতাদের গ্রেফতার করা হয়নি। এ জন্য আজ দুপুরে রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশ কমিশনার কার্যালয় ঘেরাও অবস্থান করে বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং স্মারকলিপি প্রধানের কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন গণমাধ্যমকর্মীরা।
২১ সেপ্টেম্বর রংপুরের বয়ঃজ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এবং রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের সদস্যসচিব লিয়াকত আলী বাদলকে শহরের কাচারীবাজার থেকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয়ে রকি নামে এক যুবকের নেতৃত্বে অপহরণ করে নিয়ে সিটি করপোরেশনেরে এনে মারধর করা হয়। পরে নতুন ভবনের দোতলায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এনে একটি সংবাদ প্রত্যাহারের জন্য বাধ্য করার চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনার পর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান ফটক আটকে দিয়ে মব তৈরি করে বাদলকে উদ্ধারে যাওয়া সাংবাদিকদের মারধর ও হেনস্তা করেন।
এ ঘটনায় সাংবাদিক বাদল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমা, ট্রেড লাইসেন্স শাখার প্রধান মিজানুর রহমান মিজু, সাবেক কাউন্সিলর লিটন পারভেজসহ ১৪ জনের নামে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় প্রতিবাদে বিভাগজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন সাংবাদিকরা।
প্রসঙ্গত, ১৭ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক বাদল দৈনিক সংবাদে ‘রংপুরে জুলাই যোদ্ধার নামে অটোর লাইসেন্স, পাঁচ কোটি টাকার বাণিজ্যের পাঁয়তারা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করেন। ওই সংবাদের জেরে তাকে অপহরণ করে নিয়ে মারধর ও তার প্রকাশিত সংবাদের জন্য ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করানোর চেষ্টা করা হয়।