চট্টগ্রাম থেকে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে এক ফিশিং বোট মালিকসহ ১৮ জন জেলে ২১ দিনেও ফেরেননি। তারা বেঁচে আছেন, নাকি পার্শ্ববর্তী দেশের কোনও বাহিনী তাদের ধরে নিয়ে গেছে, সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারছে না তাদের পরিবার। জেলেদের সন্ধানে নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ধরনা দিয়ে যাচ্ছেন স্বজনরা। এ ঘটনায় ওই ফিশিং বোট মালিক আলী আকবরের স্ত্রী সেলিনা আক্তার চট্টগ্রামের সদরঘাট নৌ থানায় একটি জিডি করেছেন।
নৌ পুলিশ বলছে, নিখোঁজ জেলেদের সন্ধান পেতে কোস্টগার্ড এবং নৌ বাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে। তাদের উদ্ধারে পুলিশও কাজ করছে।
নিখোঁজ জেলেরা গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে নগরীর বাকলিয়া থানার নতুন ফিশারিঘাট থেকে ‘এফ বি খাজা আজমীর’ নামে ফিশিং বোট নিয়ে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে সাগরে যান। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না ফেরায় চিন্তিত পরিবারের সদস্যরা।
এ ঘটনায় ২৪ সেপ্টেম্বর সদরঘাট নৌ থানায় সেলিনা আক্তার জিডিতে উল্লেখ করেন, তার স্বামী আলী আকবর (৪৯) দীর্ঘদিন ধরে মাছ ধরার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। নিজের মালিকানাধীন ‘এফ বি খাজা আজমীর’ নামে ফিশিং বোটটি নিয়ে তার স্বামী মাছ ধরার উদ্দেশ্যে ১৩ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় সাগরে বের হন। এরপর থেকে বোটের মাঝি আবু তাহের (৫৫), স্টাফ জামাল (৪৫), বাবুর্চি রুবেলসহ (৩৫) ১৪-১৫ জন স্টাফসহ নিখোঁজ রয়েছেন। ১৩ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে স্বামীর সঙ্গে সেলিনার সর্বশেষ ফোনালাপ হয়েছিল। এরপর থেকে তার ব্যবহৃত নম্বরসহ অন্য স্টাফদের মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায় বলে তিনি জিডিতে উল্লেখ করেন।
সেলিনা আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার স্বামীসহ মোট ১৮ জন শিপিং বোট নিয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর সাগরে মাছ ধরতে গেছেন। প্রতি মাসে তারা প্রায় তিন থেকে চার বার সাগরে মাছ ধরতে যান। প্রতি বারই ৭-৮ দিন পর সাগর থেকে মাছ নিয়ে ফিরে আসেন। আজ শনিবার পর্যন্ত ২১ দিন হয়ে গেছে তারা ফিরে আসেননি। তাদের সঙ্গে কোনোভাবে যোগাযোগও করা যাচ্ছে না। তাদের কোনও বিপদ হয়েছে কিনা, তাও বুঝতে পারছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী আগে কখনও মাছ ধরতে সাগরে যায়নি। আমাদের ফিশিং বোট নিয়ে জেলেরাই যেতেন। আসার পর তাদের বেতন দিয়ে দেওয়া হতো। এবার ফিশিং ট্রলারের মেশিনম্যান অসুস্থ থাকায় আমার স্বামী সাগরে গেছেন। আমাদের বাড়ি চকরিয়ায় হলেও পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর মোহাম্মদপুর এলাকায় থাকি। আমার স্বামীর সঙ্গে থাকা অন্য জেলেদের পরিবারও প্রতিদিন আমাকে ফোন করে তাদের খোঁজ জানতে চাইছে। আমার স্বামীসহ ১৮ জন সাগর থেকে ফিরে না আসায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর সদরঘাট নৌ থানায় জিডি করেছি। আমি নিজেই কোস্টগার্ডের কাছে গিয়ে বিষয়টি অবহিত করেছি। তারা বিষয়টি দেখবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন।’
এ বিষয়ে সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান শনিবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ ১৮ জেলে এখনও ফিরে আসেননি। তাদের ফিশিং ট্রলার ডুবে গেছে, নাকি আরাকান আর্মি কিংবা অন্য কেউ ধরে নিয়ে গেছে, তা বুঝতে পারছি না। তবে এ ঘটনায় ফিশিং বোট মালিকের স্ত্রী থানায় এসে জিডি করেছেন। তাদের খোঁজার জন্য কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্ট সব বাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে।’