রাজশাহী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী সরকারের হিমাগারে এক তরুণ, নারী ও কিশোরীকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (০৭ অক্টোবর) সকালে পবা উপজেলার বায়া এলাকায় সরকার কোল্ড স্টোরেজের অফিস কক্ষে আটকে রেখে তাদের নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনার পর ক্ষুব্ধ জনতা অফিস কক্ষটিতে ভাঙচুর চালিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের পর এলাকাবাসী মোহাম্মদ আলী সরকারের ছেলে আহসান উদ্দিন সরকার জিকো (৪৫), মেয়ে আখি (৩৫) ও হাবিবাকে (৪০) ওই কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ তাদের আটক করে নিয়ে যায়। এর আগে পুলিশ আহত তিন জনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠায়।
ভুক্তভোগীদের বাড়ি পবা উপজেলার কুঠিপাড়া গ্রামে। নির্যাতনের শিকার তরুণ (২৭) রাজশাহীর একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী কিশোরী (১৩) ও নারী (৩০) তার খালাতো বোন। তাদের নির্যাতনের ঘটনায় ওই তরুণের ভাই বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। এজাহারে বলা হয়েছে, অফিসকক্ষে ডেকে নিয়ে তিন জনকে লাঠি, বাঁশ, হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়। একপর্যায়ে শরীরে সেফটিপিন ফুটিয়ে নির্যাতন করা হয়।
দুপুরে হিমাগারে বসে থাকার সময় নির্যাতনের শিকার ওই নারীর কোলে এক শিশুসন্তানকে দেখা যায়। তিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন। তার কান দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। আহত মেডিক্যাল শিক্ষার্থীর দুই হাতে জখম দেখা যায়। পিঠে আঘাতের চিহ্নও ছিল। আর ওই কিশোরীর ঠোঁটে রক্ত দেখা গেছে।
ভুক্তভোগী নারী জানান, রাজশাহী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকারের সঙ্গে তাদের পরিবারের সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি তার ছেলে-মেয়েরা ভালোভাবে নিতেন না। তাদের সন্দেহ, মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। মঙ্গলবার সকালে তাকে ফোন করে হিমাগারে ডাকা হয়। তখন খালাতো ভাই ও ছোট বোনকে নিয়ে আসেন। আসার পর মোহাম্মদ আলীর ছেলে ও মেয়েরা তাদের ধাক্কা দিতে দিতে অফিস কক্ষের ভেতরে নিয়ে যান। এরপর কর্মচারীদের সহায়তায় তাদের নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের সময় দরজা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।
স্থানীয় লোকজন জানান, চিৎকার শুনতে পেয়ে এগিয়ে যান তারা। অফিসের দরজা খুলতে বললেও খোলা হয়নি। একপর্যায়ে দরজা খোলা হয়। পরে পুলিশ এলে তাদের মোবাইলগুলো ফেরত দিতে দেখা যায়।
নির্যাতনের শিকার কিশোরী জানায়, মোহাম্মদ আলী সরকারের দুই মেয়ে তাদের দুই বোনের সারা শরীরে সেফটিপিন দিয়ে ফুটিয়ে নির্যাতন করেছেন।
এদিকে বেলা ১১টা থেকে স্থানীয় লোকজন হিমাগারের ভেতরে মোহাম্মদ আলী সরকারের ছেলে-মেয়েদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। তারা তাদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার দাবি জানাতে থাকেন। তবে বের করলেই হামলার শঙ্কায় পুলিশ নিয়ে যাচ্ছিল না। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বেলা ২টার দিকে স্থানীয় লোকজন অফিস কক্ষের সিসিটিভি ক্যামেরা ও কাচের জানালাগুলো ভেঙে ফেলেন। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়া হয়। তারা আসার পর তিন জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
আরএমপির এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক হোসেন বলেন, ‘তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তিন জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।’