চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে নিহত বিএনপি কর্মী আবদুল হাকিমের (৫২) শরীরে ১০টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টে এসব আঘাতের চিহ্ন ওঠে এসেছে। তবে সব আঘাত বুলেটের কি না তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। তাকে হত্যায় সরাসরি অংশ নিয়েছিল তিনটি মোটরসাইকেলে মোট ৬ জন। অর্থাৎ প্রতিটি মোটরসাইকেলে দুই জন করে ছিল। তাদের প্রত্যেকের মুখে মুখোশ পরা অবস্থায় ছিল। এমনটাই নিশ্চিত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এদিকে, আবদুল হাকিম নিহতের ঘটনায় রাউজান উপজেলায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। নিহতের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক ও চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। করেছে মিছিলসহ প্রতিবাদ সভা। হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইউসুফ তালুকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আবদুল হাকিমের বিএনপির দলীয় পদ-পদবি নেই। তবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। মিছিল-মিটিংএ অংশ নিত। রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে থেকে রাজনীতি করতো। তার হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি ৫ আগস্টের পর রাউজানে ১৩-১৪টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। অধিকাংশ হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।’
রাউজান থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ আহম্মদ বলেন, ‘আবদুল হাকিম একজন বিএনপির কর্মী এবং ব্যবসায়ী। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।’
বিএনপি কর্মী আবদুল হাকিমকে হত্যার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এতে দেখা গেছে কয়েকজন মুখোশ পরা যুবক মদুনাঘাট এলাকায় তার ব্যবহৃত প্রাইভেটকার থামিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করে পুনরায় মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। বেশ কয়েকটি গুলি প্রাইভেট কারের গ্লাস ছিদ্র হয়ে তার শরীরে লাগে। এ সময় তার সঙ্গে প্রাইভেটকারের ভেতর থাকা আরও একজন গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মুহাম্মদ আবদুল হাকিমকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) কাজী মো. তারেক আজিজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নিহতের লাশ সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে হাটহাজারী উপজেলার দক্ষিণ মাদার্শা ইউনিয়নের মদুনাঘাট বাজারের ওয়াসার পানি শোধনাগার প্রকল্পের মূল ফটকের সামনে মুখোশধারী কয়েকজন যুবক আবদুল হাকিমের ব্যবহৃত প্রাইভেটকার আটকে এলোপাতাড়ি গুলি করে। এ সময় তিনি রাউজান বাগোয়ান ইউনিয়নের নিজ গ্রামের বাড়ি থেকে চট্টগ্রাম শহরের বাসায় যাচ্ছিলেন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে নগরের বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।