শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে চলবে একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এরপর গণনা শেষে ঘোষণা করা হবে ফলাফল।
নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসজুড়ে নেওয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা। মোতায়েন রয়েছে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, ‘চাকসু নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ভোটাররা নির্বিঘ্নে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট প্রদান করবেন।’
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আজ সপ্তমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন। ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে মাত্র ছয়বার। এর মধ্যে প্রথম নির্বাচনটি হয় ১৯৭০ সালে। আর সর্বশেষ নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯০ সালে। ফলে এখন যারা ভোট করছেন, তাদের কেউই আগের সংসদ দেখার সুযোগ পাননি। যদিও ১৯৭৩ সালের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, প্রতি বছর চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।
এবারের চাকসু নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৫১৬ জন। যাতে ভিপি-জিএসসহ কেন্দ্রীয় সংসদে পদ আছে ২৬টি। ১৫ হল ও হোস্টেল সংসদে পদসংখ্যা ১৪টি করে। যার বিপরীতে প্রার্থী ৯০৮ জন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ১৩টি প্যানেল ও স্বতন্ত্র মিলে প্রার্থী ৪১৫ জন। ৫টি অনুষদ ভবনের ১৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে ৬০টি কক্ষে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে পদের সংখ্যা ২৬টি, এখানে মোট প্রার্থী হয়েছেন ৪১৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ প্রার্থী ৩৬৮ জন এবং নারী প্রার্থী ৪৭ জন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৪টি আবাসিক হল ও ১টি হোস্টেল রয়েছে। এর মধ্যে নয়টি ছাত্রদের এবং পাঁচটি ছাত্রীদের। এর বাইরে শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেল রয়েছে। এই ১৫টি আবাসনের নামে একটি করে ভোটকেন্দ্র থাকছে এ নির্বাচনে। নির্বাচনে ১৪ হল ও ১টি হোস্টেলে ২০৬টি পদ আছে। প্রতি হলে পদ আছে ১৪টি করে। হোস্টেলে পদ আছে ১০টি। মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৪৯৩ জন। এর মধ্যে ৯টি ছাত্র হলের প্রার্থীসংখ্যা ৩৫০ জন এবং ৫টি ছাত্রী হলে প্রার্থীসংখ্যা ১২৩ জন। এ ছাড়া শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলে প্রার্থী হয়েছেন ২০ জন।
ভোট প্রদানে দেওয়া হবে পর্যাপ্ত সময়
চাকসু নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদ মিলে মোট ৪০টি ভোট দিতে হবে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ২৬টি ও হল সংসদের ১৪টি পদে ভোট দিতে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট। ফলে একজন শিক্ষার্থীকে গড়ে প্রতি ২০ সেকেন্ডে একটি করে ভোট দিতে হবে। তবে ভোটাররা পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ভোট দিতে পারবেন বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা আনুমানিক ধরে রেখেছি ১ জন ভোটারের কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৪০টি পদে ভোট দিতে প্রায় ১০ মিনিট লাগবে। তবে আমাদের পক্ষ থেকে কোনও সময়ের লিমিটেশন নেই। ভোটাররা পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ভোট দিতে পারবেন। তাদের যতটুকু সময় লাগবে ততটুকু নিয়েই আশা করি ভোট দেবেন।’
ওএমআর মেশিনে ভোট গণনা
এ নির্বাচনের ভোট হবে ব্যালট পেপারে। গণনা হবে ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) পদ্ধতিতে। এ পদ্ধতিতে ভোটারদের বৃত্ত পূরণ করে ভোট দিতে হবে। ফলাফল ঘোষণার ক্ষেত্রে, কেন্দ্রীয় সংসদের ফল প্রকাশ করা হবে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ থেকে এবং হল সংসদের ফল ঘোষণা করা হবে নিজ নিজ কেন্দ্র থেকে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের ভোট হবে ব্যালটে। ভোটগ্রহণ শেষে গণনা হবে ওএমআর পদ্ধতিতে। অ্যানালগ পদ্ধতিতে গণনা করলে অনেক সময় লাগবে। তাই আমরা এ পদ্ধতিতে যাবো না।’
তিনি বলেন, ‘গোপন কক্ষ ছাড়া সব কেন্দ্রে থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরা। ব্যালট পেপার ছাপা হবে কমিশনের উপস্থিতিতে, সর্বোচ্চ গোপনীয়তা বজায় রেখে। নির্বাচনে ব্যালট পেপারে থাকবে ২৪ অঙ্কের একটি নিরাপত্তা কোড ও একটি গোপন কোড। যা ওএমআর মেশিনে শনাক্ত করা যাবে।’
যাতায়াতে বাস ও ট্রেন সুবিধা
ভোটের দিন শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ১১ বার করে চট্টগ্রাম নগর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করবে শাটল ট্রেন। এ ছাড়া চলাচল করবে ৩০টি বাস। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে ভোটের দিন বহিরাগত কোনও গাড়ি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না।
ফিরে দেখা ৬ বারের চাকসু নির্বাচন
১৯৭০ সালের প্রথম চাকসু নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন ছাত্রলীগের মোহাম্মদ ইব্রাহিম এবং জিএস হন ছাত্রলীগের আবদুর রব। ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়াতে তৎকালীন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সামনে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন চাকসু জিএস আবদুর রব। ১৯৭২ সালে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় চাকসু নির্বাচন। এ নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়নের শামসুজ্জামান হীরা ভিপি এবং জাসদ ছাত্রলীগের মাহমুদুর রহমান মান্না জিএস নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালের তৃতীয় চাকসু নির্বাচনে জাসদ ছাত্রলীগের এস এম ফজলুল হক ভিপি ও গোলাম জিলানী চৌধুরী জিএস নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালের চতুর্থ চাকসু নির্বাচনে ভিপি হন জাসদ ছাত্রলীগের মাজহারুল হক শাহ চৌধুরী এবং জিএস হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রলীগের জমির চৌধুরী। ১৯৮১ সালে চাকসুর পঞ্চম নির্বাচনে ভিপি ও জিএস পদে নির্বাচিত হন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সে সময়ের নেতা জসিম উদ্দিন সরকার ও আবদুল গাফফার। ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ চাকসু নির্বাচনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের প্রার্থী জাতীয় ছাত্রলীগের নাজিম উদ্দিন ভিপি নির্বাচিত হন। আর জিএস নির্বাচিত হন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি আজিম উদ্দিন আহমদ।