বরগুনার তালতলীতে তাননুর আক্তার (৬) নামের এক শিশুকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে তার চাচা হাবিল খানের (২৭) বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরের দিকে উপজেলার ইদুপাড়া গ্রামে শিশুটিকে পিটিয়ে আহত করা হয়, পরে সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত তাননুর আক্তার একই গ্রামের দুলাল খানের মেয়ে। ঘটনার পরপরই অভিযুক্ত চাচা হাবিলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
স্থানীয় ও স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, তালতলী উপজেলার ইদুপাড়া গ্রামের দুলাল খানের মেয়ে তাননুর আক্তার মঙ্গলবার দুপুরে স্কুল থেকে এসে বাড়ির সামনে দোকানে বিস্কুট আনতে যায়। ওই সময় চাচা হাবিল খান পেছন দিক থেকে ভাতিজিকে কাঠের লাঠি দিয়ে সজোরে আঘাত করে। এতে শিশুটির মাথার ডান পাশে এবং বাঁ হাতের কনুইতে গুরুতর জখম হয়। তাৎক্ষণিক বাবা দুলাল খান ও স্বজনরা শিশুটিকে উদ্ধার করে তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক রকিবুল ইসলাম প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। তবে বরিশালে নেওয়ার পথে শিশুটি সন্ধ্যায় মারা যায়। ঘটনার পরপরই স্থানীয়দের সহযোগিতায় চাচা হাবিলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
নিহত তাননুরের বাবা দুলাল খান বলেন, ‘হাবিল আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে। ২০১৫ সালে আমার প্রথম স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করেছে। তখন তার বয়স ছিল ১৭ বছর। শিশু আইনে ৯ বছর সাজা ভোগ করে ২০২৪ সালের প্রথম দিকে জামিনে মুক্তি পায়। জামিনে মুক্তি পাওয়ার দেড় বছরের মাথায় আমার শিশুকন্যাকে পিটিয়ে হত্যা করলো। আমার শিশুকন্যা কী অপরাধ করেছিল? আমি ঘাতক হাবিলের ফাঁসি চাই।’
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য (মেম্বার) মো. টুকু শিকদার বলেন, ‘তাননুরকে চাচা হাবিল পিটিয়ে আহত করে। পরে বরিশালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা ঘাতক হাবিলকে ধাওয়া করলে একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয়। পরে সেখান থেকে পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাবিল এর আগে তার ভাইয়ের প্রথম স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করেছে, সে সময় ওর সুষ্ঠু বিচার হলে আজকের এমন একটা ঘটনা দেখতে হতো না।’
তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক কর্মকর্তা মো. রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘শিশুটির মাথার ডান পাশে এবং বাঁ হাতের কনুইয়ে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন ছিল। তাৎক্ষণিক শিশুটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে জানা যায়, শিশুটি বরিশালে নেওয়ার পথেই মারা গেছে।’
এর আগে, অভিযুক্ত হাবিল খান ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে নিহত শিশুর বাবা দুলাল খানের প্রথম স্ত্রী তানিয়া বেগমকে গলা কেটে করে হত্যা করে। ওই মামলায় শিশু আইনে তার ৯ বছর সাজা হয়। সাজাভোগ শেষে ২০২৪ সালের শুরুর দিকে জামিনে মুক্তি পায়। ভাবিকে হত্যার ১০ বছর পরে ঘাতক হাবিল বড় ভাই দুলাল খানের দ্বিতীয় স্ত্রী ফাহিমা আক্তারের মেয়ে তাননুরকে পিটিয়ে হত্যা করলো।
তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহজালাল বলেন, ‘ঘটনার পরপরই অভিযুক্ত হাবিলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শিশুটির মরদেহ থানায় রাখা হয়েছে, ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিশুকে পিটিয়ে হত্যার কারণ এখনও জানা যায়নি। এ ঘটনায় শিশুর বাবা দুলাল খান বাদী হয়ে হাবিলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।’