শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে করা মামলায় ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানির (বিএটিবিসি) চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছেন আদালত। এর মধ্য দিয়ে বিচারকাজ শুরু হলো।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকালে খুলনা বিভাগীয় শ্রম আদালতের বিচারক শেখ রাজিয়া সুলতানা এ আদেশ দেন। তিনি চার্জ গঠন করে আগামী ১৬ নভেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন- বিএটিবিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিশা আব্রাহাম, হেড অব অপারেশনস জর্জ লুইস মার্সেডো, সেক্রেটারি এবং সিনিয়র লিগ্যাল কাউন্সেল সৈয়দ আফজাল হোসেন, কোম্পানির কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পাশে অবস্থিত লিফ ফ্যাক্টরির প্ল্যান্ট ম্যানেজার মুকিত আহমেদ চৌধুরী।
বিষয়টি নিশ্চিত করে শ্রম আদালতের পেশকার মো. নুরুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই মামলার আসামিরা জামিন পেয়ে মামলা থেকে অব্যহতির আবেদন করেন। আজ আবেদনের শুনানি ছিল। শুনানি শেষে আদালত তাদের আবেদন নামঞ্জুর করেন। একইসঙ্গে সব আসামির উপস্থিততে তাদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয়। আগামী ১৬ নভেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছেন আদালত। এর মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হলো।’
গত ২৮ এপ্রিল শ্রম আদালতে মামলাটির আবেদন করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের কুষ্টিয়া কার্যালয়ের শ্রম পরিদর্শক ফারজুন ইসলাম। ৩০ এপ্রিল আদালতের বিচারক শেখ রাজিয়া সুলতানা শুনানি শেষে মামলাটি নথিভুক্ত করেন। একইসঙ্গে চার আসামির বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। পাশাপাশি ১৮ মে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়। তার আগেই ১৪ মে আদালতে হাজির হয়ে আসামিরা জামিন নেন।
প্রসঙ্গত, বেশ কয়েক বছর ধরে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে আসছেন শ্রমিকরা। গত ২৩ এপ্রিল থেকে ২২ দফা দাবিতে কুষ্টিয়ায় বিএটিবিসি কারখানার মৌসুমি শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। দাবি মানা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন। তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কারখানার গেটে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, বিএটিবিসির মৌসুমি শ্রমিকরা ২২ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন করে আসছেন। কিন্তু বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও দাবি মানা হয়নি। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ এপ্রিল শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
আন্দোলনরত শ্রমিক শামিম উল আলিম বলেন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর কুষ্টিয়া চৌড়হাস লিফ ফ্যাক্টরি অফিসের কর্মকর্তারা কোনও আইন মানেন না। শ্রমিকদের ঠকিয়ে তারা বহাল তবিয়তে রয়েছেন। ২০১২ সাল থেকে বিভিন্ন দাবি জানিয়ে আসছি আমরা। যৌক্তিকভাবে ২২ দফা দাবি জানিয়ে আসলেও ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির কর্মকর্তারা নানা টালবাহানা করে দাবি মানেননি।
শ্রমিকদের দাবিগুলো হলো- প্রতি বছর বছর নিয়োগপত্র দেওয়া বন্ধ করে এক নিয়োগপত্র দিতে হবে। কোম্পানির লভ্যাংশের ৫ শতাংশ মুনাফা শ্রমিকদের দিতে হবে। প্রভিডেন্ট ফান্ড সুবিধা দিতে হবে। শ্রমিকের ঝুঁকি বিমা নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন নিশ্চিত করতে হবে ইত্যাদি।