সিলেট-১ নির্বাচনি আসনটি জাতীয় রাজনীতিতে মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রচলিত মিথ আছে- সংসদ নির্বাচনে এই আসনে যে দলের প্রার্থী জিতেন সেই দল সরকার গঠন করে। স্বাধীনতার পর প্রায় সব জাতীয় নির্বাচনে ভোটের ফলাফলে এই মিথের প্রতিফলন হওয়ায় ‘মর্যাদাপূর্ণ’ আসনটিতে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী এবং খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। তবে শেষ পর্যন্ত এই আসনে কার হাতে উঠবে ধানের শীষ; তা নিয়ে জেলা বিএনপির রাজনীতিতে চলছে নানামুখী আলোচনা।
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে মে মাস পর্যন্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমানকে ঘিরে সিলেটে বিএনপির রাজনীতিতে চলছিল আলোচনা। ১৭ বছর পর যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরায় তাকে স্বাগত জানিয়ে সিলেটে আনন্দ মিছিলের পর নগরজুড়ে পোস্টারিং করা হয়েছিল। এসব পোস্টারে তাকে ‘মর্যাদাপূর্ণ’ সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাওয়া হয়েছিল।
গত ২৭ এপ্রিল যুক্তরাজ্য সফরে গিয়ে আরিফুল হক সিলেট-১ আসনে জিয়া পরিবারের কাউকে প্রার্থী করার বিষয়ে বিভিন্ন সভায় বক্তব্য দেন। সেসব ফেসবুকে ভাইরাল হয়। মূলত এর পরেই জুবাইদাকে নিয়ে সিলেটে আলোচনা শুরু হয়। পেশায় চিকিৎসক জুবাইদা রহমানের বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমায়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে ৬ মে যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে দেশে ফেরেন জুবাইদা। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি যে প্রার্থী হচ্ছেন না, তা জানা যাচ্ছে আরিফুল হক ও খন্দকার মুক্তাদিরের নির্বাচনি প্রচারণার মাধ্যমে। আপাতত এই আসনে নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন এই দুজন।
গত ৮ অক্টোবর হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেন মুক্তাদির। সবশেষ গত বুধবার একই মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেন আরিফুল হক। এ অবস্থায় এখানে বিএনপির প্রার্থী কে হচ্ছেন, তা নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে আলোচনা।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ অক্টোবর সিলেট বিভাগের ১৯ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ১২৯ জন প্রার্থীকে ঢাকায় ডেকে নেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ওই দিন প্রার্থী চূড়ান্ত না করে সবাইকে সমানভাবে শীষের পক্ষে প্রচারণা চালানোর নির্দেশ দেন তিনি।
তবে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই বৈঠকে খন্দকার মুক্তাদিরকে সিলেট-১ আসনের প্রার্থী হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হলেও আরিফুল হককে সিলেট-৪ আসনের প্রার্থী হতে বলা হয়। তবে আরিফুল হক মহাসচিবের কাছে তাকে সিলেট-১ আসনের প্রার্থী হিসেবে বিবেচনায় রাখার আবেদন জানান। মহাসচিব এই বিষয়ে সরাসরি কিছু না বললেও আরিফুলকে প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
ঢাকা থেকে ফেরার দুদিন পর বুধবার জোহরের নামাজের পর হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে সিলেট-১ আসনে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেন আরিফুল। এরপর নগরীতে দলের ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ ও নেতাকর্মীদের নিয়ে শোডাউন করেন। তার নেতৃত্বে শহরে শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো শহর।
এদিন পথসভায় আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘দলের হাইকমান্ড আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে সিলেটের সর্বস্তরের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফন ঘটাবে। আমার নেতা তারেক রহমান বলেছেন, তৃণমূলের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই করবেন। অনেকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। এখনও কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। দলের মনোনয়ন বোর্ড চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করবে।’
সিলেট-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে আরিফুল হক বলেন, ‘সিলেট-১ আসনে আমি ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে জনগণের ভোট প্রার্থনা করছি। এই সিটি করপোরেশনে সব শ্রেণিপেশার মানুষ আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। এখন কাকে মনোনয়ন দেবে, তা বিবেচনা করবে দল। তবে দল যাকেই মনোনয়ন দেবে, আমরা সবাই একযোগে দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ঝাঁপিয়ে পড়বো।’
খন্দকার আবদুল মুক্তাদির দেশের বাইরে থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাই তার বক্তব্য জানা যায়নি। তবে দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হিসেবে মুক্তাদিরকেও ভাবছে দল। এই আসনে মুক্তাদিরও মনোনয়ন পেতে পারেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএনপির মহাসচিব দলীয় প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। তবে বিভাগের কোনও আসনে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করেছেন কিনা, তা আমার জানা নেই। সবাই নিজ থেকেই প্রচারণা চালাচ্ছেন।’
















